নিজস্ব প্রতিবেদক । ০২ এপ্রিল ২০২৩
জাহাঙ্গীর আলম, যার নামের সাথে দুর্নীতি শব্দটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পরপরেই সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতে অর্থ লুটপাট, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের কারণে অল্পদিনে সবার নজরে চলে আসেন এই জাহাঙ্গীর।
৩ বছরের বেশি সময়কালে লুটপাটের অজস্র অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। এর প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের তথ্য সরবরাহে গাজীপুর সিটি করপোরেশন শুরু করে অভ্যন্তরীণ তদন্ত। সেই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জাহাঙ্গীর আলম ও তার অনুসারীদের দুর্নীতি ও অনিয়মের ভয়ানক চিত্র।
২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই তিন অর্থবছরের শুধু বর্জ্য অপসারণে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এরমধ্যে ২০১৮- ২০১৯ অর্থবছরে ৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু বিল পরিশোধে কোনো নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভাউচারের মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকার বিল পরিশোধ করে জাহাঙ্গীরের লোকজন, যা নিয়মবহির্ভূত।
নিয়ম অনুযায়ী ভাউচারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধ করা যায় অথচ কাগজে দেখানো হয়েছে ৮টি এলাকার ড্রেন পরিষ্কার করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল এবং বিলগুলো যথাযথ নিয়ম মেনেই পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি, করা হয়নি কোন কমিটি গঠন। সবকিছুই করা হয়েছে অর্থ আত্মসাতের জন্য। বিল পরিশোধ করা হলেও ঐসব এলাকার কোন ড্রেন পরিষ্কার করা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতিবছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে গাজীপুর সিটির প্যানেল মেয়র মো. আসাদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওইদিন তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ এর ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলেও সম্প্রতি তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।