নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
গুরুদাসপুর(নাটোর)প্রতিনিধি - নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় গ্রামীণ ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের যোগেন্দ্রনগর ত্রিমোহনা থেকে কালাকান্দর মহাশ্মশান পর্যন্ত ওই উৎসব চলে। এতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের দুইশতাধিক মাছ শিকারি অংশ নেন। মাছ ধরার সময় নদীর দুই তীরে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়।
মাছ শিকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ উৎসবে এক বা একাধিক নেতা থাকেন, যাঁর নেতৃত্ব মেনে সবাই নামেন পলো উৎসবে। প্রতিবছর শীতের শেষ দিকে মৌসুমে খাল, বিল ও নদ নদীর পানি কোমর পর্যন্ত পৌঁছালে ওই পলো উৎসব শুরু হয়। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম থেকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন বিল,নদী,জলাশয়ে ওই উৎসব চলে।
প্রতি বছর বিস্তৃর্ন চলনবিলের ইরি ধান চাষাবাদের জন্য পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের সাবগাড়ী পয়েন্টে আত্রাই নদীতে রাবার ড্রাম দিয়ে পানি আটকানো হয়। বাঁধের কারনে ভাটিতে পানি কমে যাবার সুযোগে পরদিন শুরু হয় পলোসহ সব উপকরণ দিয়ে মাছ শিকারের উৎসব।
গত দুই বছর আগে আত্রাই নদী খননের কারণে গভীরতা বেড়েছে। পানির সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে মাছের পরিমান। উৎসবে অংশ নিতে আসা মশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা রানীগ্রামের বুলবুল আহম্মেদ বলেননি , ‘শীত উপেক্ষা করে পলো দিয়ে মাছ ধরতে একটা অন্য রকম অনুভুতি কাজ করে। শখের বশেই বড়দের সঙ্গে মাছ ধরার উৎসবে যোগ দিয়েছি।’
দলনেতা আব্বাস আলী বলেন, ‘প্রতিবছরই শুকনা মৌসুমে দলবেঁধে মাছ ধরার নেশায় নামেন তাঁরা। বাবা-দাদার আমল থেকে এ উৎসব রীতিতে পরিণত হয়েছে। পুর্বথেকে নির্ধারিত হয় কোন দিন কোথায় মাছ ধরার উৎসব চলবে। নির্ধারিত স্থান ও সময়ে সবাই একত্রিত হলে দল বেঁধে চলে মাছ ধরার উৎসব। একসময় ধরা পড়া মাছের মধ্যে শোল, বড় পুটি,বোয়ালই বেশি।
’
বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক নাসরিন সুলতানা চৌধুরী রুমা বলেন, পলোয় মাছ ধরা উৎসব সনাতন পদ্ধতি ও গ্রামীণ ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ। বর্তমানে যেমন নদী,খাল বিলে মাছের পরিমান কমেছে তেমনি মাছ ধরা উপকরনেও লেখেছে আধুনিকতার ছোয়া। তার পরেও ফেব্রুয়ারীর মাসের শুরু থেকে শেষের দিকে বিলুপ্তপ্রায় পলো উৎসব চোখে পরে।
খুবজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দোলন বলেন, এ অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই নদী বিলে ‘পলো বাওয়া উৎসব’ পালন করে আসছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে মাছ শিকার করেন। নতুন প্রজন্ম এ উৎসবের আনন্দ উপভোগ করে।