নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৩ নভেম্বর ২০২২
আব্দুর রাজ্জাক, (রাজশাহী) প্রতিনিধি : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি)’র সিপাহী নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে দুদকের মামলায় অভিযুক্ত আরএনবির এক শীর্ষ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দুদকের মামলায় জামিনে থাকা রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মোহা. আশাবুল ইসলামের পদোন্নতির বিষয়টি অনেকটা অবাক করার মত বলে মনে করছেন খোদ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা।
পদোন্নতি পেতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)’র ‘ভুয়া ক্লিয়ারেন্স’ সনদ ব্যবহারের অভিযোগ ওঠেছে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। অথচ সিপাহী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায় চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত জামিন নিয়েছেন তিনি। তিনি বর্তমানে রেল পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট (চলতি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে ভুয়া ক্লিয়ারেন্স সনদের বিষয়টি অস্বীকার করে চিফ কমান্ড্যান্ট (চলতি) আশাবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাকে পদোন্নতি নয়, চলতি দায়িত্বে চিফ কমান্ড্যান্ট (পশ্চিম) করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মো. ইকবাল হোসেন ও সদস্যসচিব মোহা. আশাবুল ইসলামকে তলব করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এরপর থেকে সেই অভিযোগের অনুসন্ধান করে আসছিল দুদক। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর নিয়োগ দুর্নীতিতে তাদের জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়ায় দুদকের উপ-পরিচালক সিরাজুল হক গত ২৮ আগস্ট রেলের পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আশাবুলসহ চারজন ঢাকার উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের অস্থায়ী জামিন নিয়েছেন। পরে গত ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান।
এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন নিয়োগ কমিটির সদস্য বর্তমানে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো. জহিরুল ইসলাম, নিয়োগ কমিটির সদস্য বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফুয়াদ হাসান পরাগ, নিয়োগ কমিটির সদস্য সাবেক সিস্টেম প্রোগ্রাম অফিসার (এসপিও, বর্তমানে অবসরে) মো. সিরাজ উল্যাহ এবং নিয়োগ অনুমোদনকারী পূর্ব রেলের সাবেক জিএম সৈয়দ ফারুক আহমেদ। এছাড়া পূর্ব রেলের আরএনবির সাবেক চিফ কমান্ড্যান্ট ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তিনি মারা যাওয়ায় মামলায় তার নাম রাখা হয়নি।
কিন্তু এরমধ্যে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে ‘দুদকে কোনো অভিযোগ বা মামলার তদন্ত চলমান নেই মর্মে ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ক্লিয়ারেন্স সনদ নেন আশাবুল। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অভিযোগ বা মামলা তদন্তে থাকলে ক্লিয়ারেন্স দেয় না দুদক। এরপরও দুদকের সনদ দেখিয়ে চিফ কমান্ড্যান্ট হন আশাবুল। তার এই ক্লিয়ারেন্স সনদটি ভুয়া বলে অভিযোগ তোলেন আরএনবির এক কর্মকর্তা।
এছাড়া নিয়োগ দুর্নীতি মামলার আরেক আসামি জহিরুল ইসলাম ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কমান্ড্যান্ট (ঢাকা) থেকে চিফ কমান্ড্যান্ট হন। পদোন্নতির চারদিনের মাথায় চিফ কমান্ড্যান্ট (পূর্ব) হিসেবে পদায়িত হন। এ জায়গায় দীর্ঘ ২বছর ৮ মাস তিনি রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ২০২১ সালের ৩১ মে অনিয়মের অভিযোগে তাকে রাজশাহী বদলি করা হলেও সেই বদলির আদেশ স্থগিত করান তিনি। দুদকের মামলার পরও সপদে বহাল আছেন তিনি।
দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. নাজমুস সাদাত বলেন, ‘দুদকের অভিযোগ তদন্ত চলাকালীন সময়ে কোনো ক্লিয়ারেন্স বা দায়মুক্তি দেওয়ার নজির আছে বলে আমার জানা নেই। দুদক ওই মামলার জামিনের বিরুদ্ধে আবেদন জানাবে।
রেলওয়ে পশ্চিমসঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের মুটোফোনে ফোন দিলে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে ফোন কেটে দেয়ায় এ বিষয়ে তাঁর মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।