হাঁস-মুরগি-ছাগলের সঙ্গে খাবার খায় শেয়াল, থাকেও একই ঘরে!

নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৩ আগস্ট ২০২৩

হাঁস-মুরগি-ছাগলের সঙ্গে খাবার খায় শেয়াল, থাকেও একই ঘরে!

সাধারণত শেয়ালের কামড় থেকে বাঁচতে ভয়ে থাকে হাঁস, মুরগি ও ছাগল। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো নেত্রকোনার একটি বাড়িতে এরা সবাই একসঙ্গে থাকছে।‌বুধবার (২ আগস্ট) জেলার কলমাকান্দা উপজেলার লেংগুরা ইউনিয়নের নয়নকান্দি গ্রামে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

ওই গ্রামের আজিজুল হক নিজ বাড়িতে হাঁস, মুরগি, ছাগলের সঙ্গে একটি শেয়াল পালন করছেন। তার স্ত্রী সুমা আক্তার মূলত প্রাণিগুলোর দেখভাল করেন। এসব পশু-পাখির সঙ্গে শেয়ালের একসঙ্গে বসবাসের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পর থেকে ওই বাড়িতে উৎসুক জনতার ভিড় লেগেই আছে। তারা শেয়ালটিকে ‘লালু’ নামে ডাকেন।

আজিজুলের বাড়িতে একটি শেয়াল ছাড়াও রয়েছে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি। তাদের থাকার জন্য উঠানে রয়েছে একটি ঘর। আর ওই ঘরেই একসঙ্গে থাকে শেয়ালসহ হাঁস-মুরগি ও ছাগল। আজিজুল হকের বাড়িটি বর্তমানে ‘শেয়ালবাড়ি’ নামে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে।

বুধবার দেখা গেছে, শেয়ালটি বাড়ির পাশে একটি টিলায় বসে আছে। উঠানে ১২টি ছাগল ও বেশ কয়েকটি হাঁস-মুরগি আছে। সুমা আক্তার একটি পাত্রে খাবার দিলে হাঁস-মুরগি ও শেয়াল একসঙ্গে খাচ্ছে। আর ছাগলগুলো শেয়ালের চারপাশে ঘোরাঘুরি করছিল। দেখে মনে হচ্ছিল যেন তারা একই পরিবারের সদস্য।

শেয়াল পালন নিয়ে কথা হলে সুমা আক্তার জানান, দেড় বছর আগে তার স্বামী আজিজুল হক নাজিরপুর ইউনিয়নের লোহারগাঁও এলাকায় যান। সেখানে গিয়ে দেখেন একটি জলাশয়ে মাছ ধরছিলেন নৃগোষ্ঠীর কয়েকজন নারী। এসময় তারা পাশের একটি জঙ্গলে তিনটি শেয়ালের বাচ্চা দেখতে পান। তখন তারা এগিয়ে গিয়ে সেগুলোকে উদ্ধার করেন। পরে তাদের কাছ থেকে আজিজুল হক একটি বাচ্চা চেয়ে আনেন। তখন শেয়ালটির আনুমানিক বয়স ছিল তিন মাস।

তিনি আরও বলেন, বাড়িতে আনার পর কি খাওয়াবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না তার স্বামী। পরে সুমা একটি বোতলে দুধ ভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। তবে সেদিন ব্যর্থ হলেও পরদিন থেকে প্রায় এক মাস দুধ খাওয়ান। তারপর থেকে শেয়ালটিও সব ধরনের খাবার খায়। বর্তমানে এটির বয়স প্রায় দুই বছর।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আকবর আলী বলেন, সকালে শেয়াল, ছাগল, হাঁস-মুরগিগুলো ছেড়ে দেওয়ার পর তারা বাড়ির পাশে একটি টিলায় চলে যায়। দিনশেষে সন্ধ্যার আগেই শেয়ালটি অন্যগুলোকে তাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। এটি দেখে মনে হয় যেন শেয়ালটি মালিকের আদেশ পালন করছে। প্রতিবেশী ও অন্য পশুপাখিকে কামড়ানো বা অন্য কোনো ধরনের অত্যাচার করে না শেয়ালটি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমরা জানি শেয়াল হচ্ছে মাংসাশী প্রাণী এবং যেসব প্রাণীর জলাতঙ্ক বা র্যাবিশ (জুনোটিক রোগ) হয় বা জীবাণু বহন করে তাদের মধ্যে শেয়াল অন্যতম। সেক্ষেত্রে শেয়াল ও তার পালনকারী দুজনকেই জলাতঙ্ক টিকা নেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, শেয়ালের প্রধান খাবার হাঁস, মুরগি, খরগোশ, ইঁদুর, টিকটিকি ইত্যাদির মাংস। তাই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচলিত প্রবাদ ‘শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা’ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।।