'তখন আমার আবেগ কাজ করছে বিবেক কাজ করেনি'

নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৩ অক্টোবর ২০২৩

'তখন আমার আবেগ কাজ করছে বিবেক কাজ করেনি'

চট্টগ্রামে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার মো. হাসানের (৬১) মাথা উদ্ধারে দিনভর নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার (২ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো নিহতের পুত্রবধূ আনার কলিকে নিয়ে এ অভিযান চালানো হয়। রবিবারও একই স্থানে তাকে নিয়ে অভিযান চালায় পিবিআই। তবে আনার কলির দেখানো স্থানে পাওয়া যায়নি মাথা।

এদিকে, পিবিআইকে মাথা দেখাতে নিয়ে যাওয়া আনার কলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি দোষী, আমি কি আপনাদের একবারও বলেছি আমি নির্দোষ। তখন আমার আবেগ কাজ করেছে, বিবেক কাজ করেনি। তখন যদি আমার বিবেক কাজ করতো, তাহলে এত বড় পাপে নিজেকে জড়িয়ে পড়তাম না। কারও কথা না ভাবলেও একবার আমার সন্তানের কথা ভাবতাম। আমি আমার সন্তানের কথা পর্যন্ত ভাবিনি।’

আনার কলি বলেন, ‘হত্যার পর আমার শ্বশুরকে বস্তার ভেতর ঢুকিয়ে রাখা হয়। এরপর রাতেই টুকরো টুকরো করা হয়। তখন আমি বাসায় ছিলাম না। তারা লাশের টুকরো করে ব্যাগে ঢুকিয়ে আমাকে ভাত খাওয়ার জন্য ডেকেছিল। পরে আমিসহ স্বামী শফিকুর রহমানের সঙ্গে পতেঙ্গা সি-বিচে গিয়ে লাশের একটি অংশ ফেলে দেয়।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর ভোর ৭টার দিকে আনার কলি এবং তার স্বামী শফিকুর রহমান ওরফে জাহাঙ্গীর এসে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় মাথার খণ্ডিত অংশ ফেলে দিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে নিহতের ছোট ছেলে শফিকুর রহমান ও তার স্ত্রী আনার কলি পলাতক ছিল। শুক্রবার আনার কলিকে কক্সবাজার মহেশখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) তার রিমান্ড শেষ হবে।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো সোমবার সকাল থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় আনার কলিকে নিয়ে কাটা মাথা উদ্ধারে অভিযান চালানো হয়। পিবিআইয়ের ১৫ জনের একটি টিম তল্লাশি অভিযানে অংশ নেয়। প্রথম দিনে তার দেখানো মতে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়। তবে মাথা এখনও উদ্ধার করা যায়নি। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে নগরীর পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর ঘাট এলাকায় লাগেজভর্তি লাশের আটটি খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গুম ও খুনের অভিযোগে অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করে। পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পরে প্রযুক্তিসহ নানা চেষ্টায় ক্লু-বিহীন এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক মো. ইলিয়াস খান বলেন, ‘হাসানের পরিচয় শনাক্তের পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী হোসনে আরা এবং বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে সোপর্দ করে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদনের পাশাপাশি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পাশাপাশি পাঁচ দিনেরই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২৭ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়। এর মধ্যে নিহতের বড় ছেলে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে হত্যার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছে।’

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বাঁশখালী উপজেলার বাসিন্দা মো. হাসান ২৮ বছর পরিবার থেকে পৃথক থাকার পর দুই বছর আগে ফেরেন। পরিবারে স্ত্রীসহ দুই ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। পরিবারে ফেরার পর থেকে ভিটে বিক্রির চেষ্টা করেন হাসান। এ ঘটনার জেরেই তাকে হত্যা করা হয়। হাসানকে হত্যার পর লাশ ১০ টুকরো করা হয়। এর মধ্যে হাত-পাসহ ৮টি টুকরো ফেলা হয় পতেঙ্গা থানাধীন ১২ নম্বর ঘাট এলাকায়, পেটসহ শরীরের মাঝখানের অংশ ফেলা হয় ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী রোডের খালপাড় এলাকার বিলে। মাথার অংশটি ফেলা হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায়।