নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
দেশের পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সঠিক আইন ও আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা বলেছেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সবুজ বাংলাদেশ : সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে তিনদিনব্যাপী ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
সমাপনি অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশে আসার পর থেকেই সবুজ বাংলাদেশ গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। ’৮৬ সালে কৃষক লীগ গঠনের মাধ্যমে তিনি সারাদেশে বৃক্ষরোপনের কাজ শুরু করেছিলেন। এখন পর্যন্ত পয়লা আষাঢ়ে তিনি এই কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ কমিটি।
“প্রতি বছর মানুষ বাড়ছে আর কৃষি জমি কমছে। সেই সঙ্গে শিল্প কারখানা, স্থাপনা নির্মান ও রাস্তাঘাট-অবকাঠামো উন্নয়নের ফলেও কৃষি জমি কমছে। এজন্য মানুষকে সচেতন করা দরকার। আইন থাকলেও কৃষি জমি রক্ষায় এর কোনো প্রয়োগ নেই। এজন্য নতুন একটি আইনের কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে কৃষি জমি রক্ষা করা যায়।”
টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ রক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলেও মত প্রকাশ করেন তথমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যে দল এই সাবজেক্টের ওপর নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্য কোনো রাজনৈতিক দল এটা করছে না।
“আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০২ সালে এই পদটি সৃষ্টি করেছিলেন। পঁচাত্তরের জঘন্য হত্যাকান্ডের পর যখন তিনি দেশে ফিরে এসছিলেন তখন থেকেই তিনি একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, যেটি বঙ্গবন্ধ স্বপ্ন দেখেছিলেন; সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবেশ রক্ষায় তিনি অনেক কাজ করেছেন।
কৃষক লীগকে কাজে লাগিয়ে ওই সময় থেকে বৃক্ষরোপন শুরু করেছিলেন, তখন তিনি বিরোধী দলীয় নেত্রীও নন। এখন বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বড় কন্ঠ।”
এক যুদ্ধাপরাধীর সিঙ্গাপুরে বিলিয়ন ডলারের খোঁজ পাওয়া নিয়ে গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এই যে যুদ্ধাপরাধীদের আমরা শাস্তি দিয়েছি। এরা যে পঁচাত্তরের পরে কতো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে আজকে এগুলো বেরিয়ে আসছে।
“যারা আজকে পাচারের কথা বলছে তারা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পূর্নভাবে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময়ে মিথ্যাকে সত্য বানানোর চেষ্টা করে এবং অসত্যকে বক্তব্য দিয়ে দেশের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করে। এভাবে তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট করছে। আমাদের অর্থনীতি সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করছে। এর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী ভুমিকা রাখতে হবে যেভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখছে।”
তিনদিন ব্যাপি সেমিনারে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি ও সেমিনারে অংশ নেয়া সদস্যদের সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং বন ও পরিবেশ উপ কমিটির চেয়ারম্যান খন্দকার বজলুল হক।
তিনি বলেন,“এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সেমিনারে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা বলেছেন, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে, বাংলাদেশের শহরগুলো দূষণপ্রবণ হওয়ার কারণ হলো, পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশকে বায়ু ও পানি দূষণমুক্ত রাখতে শিল্প এলাকায় যথাযথ বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন করা উচিত। মোটর গাড়ি, এয়ারো প্লেন, ট্রেন, শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে নির্গমন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সেট আপ, ইটভাটা, অনাবৃত ভাবে পোড়ানো বা জ্বালিয়ে দেওয়া, কঠিন বর্জ্য ডাম্পিং নিয়ন্ত্রন করতে হলে সঠিক আইন ও আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
“দেশের পরিবেশগতভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলিকে রক্ষা করার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা উচিত এবং ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং খরা তীব্রতর হয়েছে, এই ধরনের দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ সংক্রান্ত যথাযথ উন্নয়ন কার্যক্রম নিশ্চিত করার জন্য বজায় রাখার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। নবায়নযোগ্য, টেকসই, জৈব উপাদান, জৈব রাসায়নিক এবং জৈব জ্বালানী উন্নয়নে কার্বন ডাইঅক্সাইড এর অতিরিক্ত নির্গমন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।”
কনফারেন্সের উদ্বোধনী অধিবেশন শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বিভিন্ন বিভাগ এবং সেন্টার ফর এডভান্সড রিসার্চ এন্ড সায়েন্স (কারস)-এ একযোগে পরিবেশ বিষয়ক ভিন্ন ভিন্ন সায়েন্টিফিক বিষয়ে আলোচনা, সায়েন্টিফিক সেশন, পোস্টার প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠি হয়।