মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৪ নভেম্বর ২০২৩

মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় আগারগাঁও স্টেশনের উদ্বোধনস্থলে আসেন প্রধানমন্ত্রী।

সেখানে প্রথমে ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় টিকিট (অস্থায়ী পাস কার্ড) নেন। এরপর কার্ড পাঞ্চ করে প্রধানমন্ত্রী ট্রেনের লাউঞ্জে প্রবেশ করেন। সেখানে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। ট্রেন চলাচলের সংকেত পতাকা নেড়ে ট্রেন চলার সংকেত দেন। পরে ট্রেনেই চড়ে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের উদ্দেশে রওনা হন।

মতিঝিল স্টেশনে আরেকটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় জনসভায় যোগ দেবেন তিনি।

এ সময় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সেনাপ্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন, মুখ্য সচিব তোফাজ্জাল হোসেন মিয়া, শেখ হেলাল এমপি, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিনুল্লাহ নুরী, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এম এন এ সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা ও বিদেশি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

একদিন পর আগামীকাল রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে মেট্রোরেলে চড়ে যাওয়া যাবে মতিঝিল স্টেশন পর্যন্ত। অর্থাৎ উদ্বোধনের পরদিনই আগারগাঁও-মতিঝিল অংশটি যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ওইদিন থেকে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলবে স্বপ্নের এ উড়াল ট্রেন।

ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এম এন এ সিদ্দিক জানিয়েছেন, শনিবার প্রধানমন্ত্রী এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট) নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করবেন। এ লাইন হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা হয়ে গাবতলী, মিরপুর-১০, গুলশান পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। ৪১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৮ সালে।

তিনি বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে শনিবার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়মিত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে।

শুরুতে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে তিনটি স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আগারগাঁও থেকে মতিঝিল সেকশনের দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার। এ অংশে ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিল স্টেশনে ট্রেন থামবে।

উত্তরা-মতিঝিল রুটে ৫ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মেট্রো চলাচল করবে। বেলা সাড়ে ১১টার পর মতিঝিল-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকলেও উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনে যথারীতি রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলবে।

এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যেভাবে মেট্রোরেল চলাচল শুরু হয়েছিল, একইভাবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল রুটে আপাতত দৈনিক চার ঘণ্টা চলবে মেট্রোরেল। এ অংশে শুরুতে তিনটি স্টেশন চালু করা হলেও পরে ধাপে ধাপে অন্য স্টেশনগুলোও খুলে দেওয়া হবে।

মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধনের কথা ছিল গত ২০ অক্টোবর। পরে সেটি ৯ দিন পিছিয়ে ২৯ অক্টোবর করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর শিডিউলজনিত কারণে ২৯ অক্টোবরের পরিবর্তে ৪ নভেম্বর এ অংশের উদ্বোধনের দিন ঠিক করা হয়।

২০১২ সালের জুলাই মাসে মেট্রোরেল প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের মোট দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার। তবে নগরবাসীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে পরবর্তীতে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার রুট বাড়ানো হয়। বর্ধিত অংশের কাজ ২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এমআরটি লাইন-৬ এর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২২ কিলোমিটার (২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার)।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের প্রতিটি ট্রেন ২ হাজার ৩০০ যাত্রী নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। তবে বাঁকযুক্ত এলাকায় গতি কমে যাবে।

গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের শুভ উদ্বোধন করেন। ওইদিন তিনি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন। এর একদিন পর ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ যাত্রীদের পরিবহনের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে চালু হয় মেট্রোরেল।

মেট্রোরেল উদ্বোধনের দিনই চালু হয় উত্তরা উত্তর ও আগারগাঁও স্টেশন দুটি। এরপর একে একে আরও দুটি স্টেশন চালু হয়। এর মধ্যে গত ২৫ জানুয়ারি পল্লবী স্টেশন ও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরা সেন্টার স্টেশন এবং ১ মার্চ পঞ্চম স্টেশন হিসেবে চালু হয় ব্যস্ততম মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন।