নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৫ জুলাই ২০২২
মাদারীপুরের শিবচর থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা হাসি আক্তার (২১)। গতকাল সোমবার পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে এসে স্বজনদের সঙ্গে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তখনই হাসির প্রসববেদনা উঠলে স্বজনেরা তাঁকে নিয়ে টোল প্লাজার পাশে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার দিকে রওনা দেন। তবে থানা ও ফায়ার সার্ভিস ভবনের মাঝের সড়কেই সন্তান প্রসব করেন হাসি।
সন্তান জন্ম দেওয়ার খবরে হাসির পরিবার ও টোল প্লাজার আশপাশের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান মা ও নবজাতককে বিকেলে গ্রামের বাড়ি শিবচর উপজেলার বিশরসি গ্রামে পৌঁছে দিয়েছেন। নবজাতক ও মা সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।
হাসি আক্তার শিবচর উপজেলার বিশরসি গ্রামের আলী হাসানের স্ত্রী। আলী হাসান ও হাসি আক্তার—দুজনেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তা। বর্তমানে তাঁরা কক্সবাজারের টেকনাফে কর্মরত। হাসি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় কিছুদিন আগে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গ্রামে আসেন। গতকাল তাঁর প্রসববেদনা শুরু হলে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। তবে ওই ক্লিনিকের চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে হাসিকে ওই ক্লিনিক থেকে ভ্যানে করে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে নিয়ে আসেন তাঁর স্বজনেরা।
ভ্যান থেকে নেমে তাঁরা ঢাকাগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় হাসি আক্তারের প্রসববেদনা বেড়ে গেলে জনেরা তাঁকে নিয়ে টোল প্লাজার পাশে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার দিকে রওনা দেন। তবে থানা ও ফায়ার সার্ভিস ভবনের মাঝের সড়কেই সন্তান প্রসব করেন হাসি।
খবর পেয়ে পদ্মা সেতুর দক্ষিণ থানার নারী পুলিশ সদস্যরা হাসি ও নবজাতককে উদ্ধার করে থানা ভবনে নিয়ে যান। পরে সেখানে তাঁদের সেবা দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা সুস্থবোধ করলে বিকেলে মা ও নবজাতককে বাড়িতে পৌঁছে দেন ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
হাসি আক্তারের ভাই সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসিকে ঢাকায় পিলখানা বিজিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু আশপাশে কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। গ্রামে অ্যাম্বুলেন্সও পাওয়া যায়নি। তাই ভ্যানে করে টোল প্লাজার সামনে আসি। সেখান থেকে বাসে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকায় যেতে চাইছিলাম। কিন্তু টোল প্লাজার পাশের সড়কেই সন্তানের জন্ম হয়েছে। অনেক বিপদ ঘটতে পারত। কিন্ত আল্লাহর রহমতে কোনো সমস্যা হয়নি।’
হাসি আক্তার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন মা কেবল বুঝবে প্রসববেদনার যন্ত্রণা। আমি ব্যথায় ছটফট করছিলাম। কোথায় কী হচ্ছে, সেটা খেয়াল ছিল না। স্বজন ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আমার সন্তান সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখেছে। আমার সন্তান সুস্থ আছে, এতে আমি অনেক খুশি। পদ্মা সেতুর প্রান্তে আমার সন্তান প্রথম নিশ্বাস নিয়েছে। আমার সন্তান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে।’
এ সময় সন্তান প্রসবে সহায়তার জন্য স্থানীয় লোকজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন হাসি আক্তার। এ ছাড়া নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু পার হয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর যাত্রা নিয়ে সবাই সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার কিছুক্ষণ পর যখন যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়, তখনই এক নারীর সন্তান প্রসব করার খবর পাই। দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। নবজাতক ও তাঁর মা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবেন। সারা দিনই স্থানীয় লোকজন থানায় নবজাতককে দেখতে এসেছেন, আনন্দ করেছেন।’