নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৭ জানুয়ারি ২০২৪
রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ওপর তাঁর বিশ্বাস আছে। তাঁর দল আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকার জয় হবে।
আজ রোববার সকাল ৮টার একটু আগেই প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজ প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছান। সময় শুরুর পরই প্রধানমন্ত্রী ভোটকক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি ভোট দেন।
ভোট দেওয়ার পর শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যে ভোট সুষ্ঠুভাবে করতে পারছি, সে জন্য আমি আমার দেশের মানুষের প্রতি, জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, অনেক বাধা ছিল।
অনেক বিপত্তি ছিল। কিন্তু দেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে এবং নির্বাচনটা যে একান্ত জরুরি, তা বুঝতে পেরেছে। জনগণ তার ইচ্ছেমতো ভোট দেবে। আমরা ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছি।’
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া নাশকতার ঘটনাগুলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াত জোটেরা জ্বালাও-পোড়াও অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। গতকালকে এবং আগেও আপনারা দেখেছেন, ট্রেনে আগুন দেওয়া থেকে শুরু করে গাড়িতে আগুন দেওয়া, মানুষকে বাধা দেওয়া, বোমা হামলা, ককটেল মারা—এ সমস্ত জঘন্য কাজগুলো তারা করেছে। আমি এটুকুই বলব, তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না, দেশের মানুষের কল্যাণও চায় না। তারা গণতান্ত্রিক ধারা চায় না।’
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের পরপর দুই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জয়ী হয়।
শেখ হাসিনা আজ ভোট দেওয়ার পর বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের এই উন্নতিটা হয়েছে। আমাদের সামনে আরও কাজ আছে। সেটুকু আমরা সম্পন্ন করতে চাই। আমি আশা করি, নৌকা মার্কার জয়লাভ হবে এবং আবার আমরা জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আমরা আমাদের বাংলাদেশ যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব। এ বিশ্বাস আমার আছে। জনগণের ওপর আমার বিশ্বাস আছে।’
সিটি কলেজ কেন্দ্র ঢাকা-১০ আসনের মধ্যে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ সময় তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছেলে রাদওয়ান মুজিব ছিলেন।
জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই সুষ্ঠুভাবে ভোটকেন্দ্রে আসবেন। আপনার ভোটটা অত্যন্ত মূল্যবান ভোট। এই ভোটের অধিকারের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছি। জেল-জুলুম, অত্যাচার, বোমা, গ্রেনেড—অনেক কিছু আমাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু মানুষের ভোটের অধিকার মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি। আজকে জনগণ সেই ভোটের অধিকার পেয়েছে। সেটা তারা সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করতে পারবে এবং নির্বাচনটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। জনগণ যাকে খুশি ভোট দিক। কিন্তু নির্বাচনটা যেন সুষ্ঠু হয়, সেটাই আমরা চাই। জনগণের সব রকমের সহযোগিতা চাই।’
এবারের নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। আজ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। তারা কখন নির্বাচনেই বিশ্বাস করেনি। কারণ, বিএনপির প্রতিষ্ঠা হয়েছে সামরিক স্বৈরাচারের মাধ্যমে, সংবিধান লঙ্ঘন করে। সেনা আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করার পর এই বিএনপি দল গঠন হয়েছে। এরা তো ভোট কারচুপি আর ভোট সিল মারা, মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়া—এটা তো তাদের চরিত্র। সেই সুযোগটা তারা এখন পাচ্ছে না।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের যে নির্বাচন, সেই নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করতে পারেনি। সেই নির্বাচনেও বিএনপি ৩০০ সিটের মধ্যে পেয়েছিল ৩০টা সিট। আর আওয়ামী লীগ এককভাবে পেয়েছিল ২৩৩টা সিট।’
বিরোধীরা ভোট বর্জন করছে, সেখানে ভোটের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু হবে—বিদেশি এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে, তাই তো? আমি কার কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করব, একটি সন্ত্রাসী দলের কাছে? না। আমার দায়িত্ববোধ রয়েছে আমার জনগণের কাছে। তাঁরা আমাকে গ্রহণ করছে কি করছে না, সেটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই ভোট গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে কি করছে না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। গণতন্ত্র ছাড়া আমরা কোনো উন্নয়ন করতে পারব না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষ তাদের ভোট ও ভাতের অধিকার পেয়েছে।’
ভোটে জেতার ব্যাপারে কতটুকু আস্থাশীল—এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সব সময় আস্থাশীল। কারণ, মানুষ আমার সঙ্গে আছে। ইনশা আল্লাহ পিপল উইল ভোট ফর বোট। (ইনশা আল্লাহ জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে)।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ সকাল ৮টা থেকে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের ভোট গ্রহণ বাতিল করা হয়েছে। ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।