নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৭ জুলাই ২০২২
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধগতির মধ্যেই এবার বাড়ছে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম। আজ বৃহস্পতিবার সংস্থাটির বোর্ড সভায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ নিয়ে গত ১৪ বছরে অন্তত ১৫ বার বাড়ানো হলো পানির দাম।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের এপ্রিলে ও ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মিলে মোট দুই দফা পানির দাম বাড়ানো হয়। এ দুই দফায় আবাসিকে প্রতি ১ হাজার লিটারে পানির দাম বেড়েছিল ৩ টাকা ৬১ পয়সা (৩১ শতাংশ)। বাণিজ্যিকে বেড়েছিল ৪ টাকা ৯৬ পয়সা (১৩ শতাংশ)।
বর্তমানে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে ১ হাজার লিটার পানির দাম বর্তমানে ৪২ টাকা। সেপ্টেম্বর থেকে এই দামের সঙ্গে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত যুক্ত হবে।
এদিকে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব অন্য কাউকে না দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসে নিজেই অনলাইনে সেই দায়িত্ব পালন করতে চেয়েছিলেন সংস্থাটির বর্তমান এমডি তাকসিম এ খান। কিন্তু সংস্থাটির বোর্ড সদস্যদের তীব্র বিরোধিতার মুখে তাঁর এই আবদার পূরণ হলো না। বোর্ড সদস্যরা একমত হয়ে তাকসিম এ খানের আমেরিকায় বসে ‘ভার্চ্যুয়াল অফিসের’ আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ওয়াসার বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় উপস্থিত দুজন বোর্ড সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা ওয়াসা পরিচালনা আইন অনুযায়ী সংস্থাটি নিয়ে সব নীতিনির্ধারনী সিদ্ধান্ত হয় ১৩ সদস্যের বোর্ড সভায়। আলোচ্যসূচিতে আজ নয়টি বিষয় ছিল। সভার একেবারে শেষ দিকে তাকসিম এ খানের ভার্চ্যুয়াল অফিসের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
ওয়াসার বোর্ড সদস্য ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব দীপ আজাদ জানিয়েছেন, তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রে বসে দুই মাসের ভার্চ্যুয়াল অফিসের অনুমতি চেয়েছিলেন। তাঁকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে তাঁকে দুই মাসের ছুটি দেওয়া হচ্ছে। এই দুই মাস তিনি পূর্ণ ছুটিতে থাকবেন, ভার্চ্যুয়ালি কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি ছুটিতে যাওয়ার আগে অন্য কাউকে ঢাকা ওয়াসার ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দিয়ে যেতে হবে। এই সময়ে তিনি বেতন-ভাতা পাবেন কি না জানতে চাইলে দীপ আজাদ বলেন, তাঁর ছুটি পাওনা থাকলে তিনি পুরো বেতন-ভাতা পাবেন।
ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলেও তাকসিম এ খান সরকারি বিধি অনুযায়ী ছুটির সুবিধা পাবেন। বিধি অনুযায়ী, বছরে ২০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি ও প্রতি ১২ দিনে ১ দিন করে অর্জিত ছুটি পাবেন তাকসিম এ খান। ওয়াসার একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, সবশেষ ২০২০ সালে এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাকসিম এ খান কখনো ছুটি নিয়েছেন বলে তাঁদের জানা নেই। গত বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে ২৪ জুলাই তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। এই সময় তিনি ভার্চ্যুয়াল অফিসের অনুমতি নিয়ে গেছেন। সবশেষ স্পেনে এবং নেদারল্যান্ডসে দুটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ১৬ থেকে ২১ মে দেশের বাইরে ছিলেন তাকসিম। সে সময়ও তিনি ভার্চ্যুয়াল অফিস করেছেন, ছুটি নেননি।
ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবারই দেশের বাইরে যাওয়ার আগে একটি অফিস আদেশ জারি করেন তাকসিম এ খান। ওই অফিস আদেশের মাধ্যমে তিনি অনলাইনে অফিস করার বিষয়টি জানিয়ে যেতেন এবং একজনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পক্ষে রুটিন দায়িত্ব পালন করতে বলতেন। তাই এখন পর্যন্ত কোনোবারই দেশের বাইরে যাওয়ার সময় কাউকে ভারপ্রাপ্ত এমডি করে যাননি তাকসিম এ খান। তাই এবার যদি কাউকে ভারপ্রাপ্ত এমডি করা হয়, তা হলে তা গত ১২ বছরের মধ্যে প্রথম ঘটনা হবে।