নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩
২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সাধন চন্দ্র মজুমদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। বছরে তিনি আয় করতেন আড়াই লাখ টাকা। তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য ও এক মেয়াদে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর এখন তাঁর আয় ও সম্পদের হিসাব হচ্ছে কোটিতে। বর্তমানে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি। আর বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে চার কোটি টাকার কাছাকাছি।
নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পরপর তিনবার সংসদ সদস্য হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন সাধন চন্দ্র মজুমদার। ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হওয়ার পর তিনি খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এবারও তিনি দলের মনোনয়নে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনগুলোতে প্রার্থী হিসেবে দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।
সাধন চন্দ্র মজুমদার তাঁর হলফনামায় বরাবরই পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা ও কৃষি। এবারের হলফনামায় তাঁর আয়ের উৎস হিসেবে তিনি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ভাতা, কৃষি খাত, ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের সুদ, অংশীদারি কারবার (ঠিকাদারি), ব্যবসা ও অন্যান্য উৎস উল্লেখ করেছেন। এসব উৎস থেকে বর্তমানে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ২৫৬ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ২ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৬১৮ টাকা। মন্ত্রী হওয়ার পর পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় দুই গুণ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ১৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৫৭ গুণের বেশি।
এবারের হলফনামায় খাদ্যমন্ত্রী আয়ের উৎস হিসেবে উল্লেখ করেছেন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ভাতা ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা; কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা; ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৩ টাকা; শেয়ার-সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানতের সুদ ও অংশীদারি কারবার (ঠিকাদারি) থেকে আয় ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আয় হয়েছে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৩ টাকা। এই মিলে তাঁর বার্ষিক মোট আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ২৫৬ টাকা। ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় কৃষি খাত থেকে ২৫ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বার্ষিক আয় হতো সাধন মজুমদারের।
হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সাধন চন্দ্র মজুমদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় তাঁর মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদমূল্য ছিল ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। নগদ টাকা, কৃষি-অকৃষি জমি, বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা, সঞ্চয়পত্র ও আমানত হিসেবে ব্যাংকে বিনিয়োগ করা টাকাসহ বর্তমানে তাঁর মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ২৩ লাখ ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা। এই হিসাবে ১৫ বছরের ব্যবধানে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সম্পদ বেড়েছে ৯৮ গুণ।
হলফনামা অনুযায়ী বর্তমানে সাধন চন্দ্র মজুমদারের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৩ টাকা (ব্যবসার পুঁজি)। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা ১২ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ টাকা। সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ২ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯ টাকা, ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি, প্রায় ৬ লাখ টাকা মূল্যমানের আসবাবপত্র ও স্বর্ণালংকার রয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হলফনামা দাখিলের সময় অস্থাবর সম্পদ হিসেবে কাছে নগদ ছিল ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা ছিল ২০ হাজার টাকা। ৯০ হাজার টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র ছিল তাঁর। ২০১৪ সালে খাদ্যমন্ত্রী দুটি গাড়ি থাকার তথ্য উল্লেখ করেছিলেন। যার একটির দাম ছিল ১৬ লাখ টাকা, অন্যটি ৪১ লাখ টাকার। ২০১৮ সালের হলফনামায় তাঁর একটি গাড়ি থাকার তথ্য ছিল। ওই গাড়ির মূল্য ছিল ৬৪ লাখ টাকা।
বর্তমানে খাদ্যমন্ত্রীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৫০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের কৃষিজমি এবং ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩২ টাকা দামের অকৃষিজমি। ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের কৃষিজমি এবং বসতবাড়িসহ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষিজমি ছিল তাঁর। বর্তমানে একটি বেসরকারি ব্যাংকে খাদ্যমন্ত্রীর ঋণ রয়েছে ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫৪ টাকা।