নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৮ জুন ২০২৩
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলেরই একজন জ্যেষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমু এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য নিয়েই দলটির ভেতরে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁর কাছে কৈফিয়তও চাওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতিসংঘ বা বিদেশিদের মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপের পক্ষে নন।
যদিও তাঁদের অনেকে চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ বা আলোচনার প্রশ্নে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনাও রয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ বা আলোচনার ব্যাপারে এখনো দলগতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের প্রশ্নে দলের একজন নেতার বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরের প্রতিক্রিয়া বেশ দ্রুত প্রকাশ্যে এসেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকায় ১৪–দলীয় জোটের এক জনসভায় ওই জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনার কথা বলেছিলেন। পরদিনই গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর উল্টো বক্তব৵ দেন।
জাতিসংঘ বা বিদেশিদের মধ্যস্থতায় আলোচনার বিষয় নাকচ করে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতিসংঘের মধ্যস্থতা বা হস্তক্ষেপ করতে হবে, এমন কোনো রাজনৈতিক সংকট দেশে এখনো তৈরি হয়নি। আমাদের দেশে আমরা আলোচনা করব। এটা নিজেদের সমস্যা, নিজেরাই সমাধান করব।’ গতকাল ছয় দফা দিবসের এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ–ও বলেন, বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত এখনো নেই।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আলোচনা বা সংলাপের প্রশ্নে গতকাল অন্তত তিনজন মন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনার বিষয় নাকচ করেছেন। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমির হোসেন আমুর বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত বক্তব্য।’ অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছেন, আলোচনার বিকল্প নেই।
বিএনপির সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধের মীমাংসার কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই। বিরোধী দল নির্দলীয় সরকারের দাবিতে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে গত ২৪ মে।
নির্বাচন নিয়ে বিরোধপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করেছে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন। তাঁরা বলছেন, চাপের কারণে এখন কোনো ইস্যু এলেই মন্ত্রীরা এবং আওয়ামী লীগের নেতারা তা নিয়ে একের পর এক বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং তাঁদের বক্তব্যে সমন্বয়ের ঘাটতি প্রকাশ পায়। এখন সংলাপ বা আলোচনার প্রশ্নেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যদিও ক্ষমতাসীনেরা কোনো চাপের বিষয় স্বীকার করতে রাজি নন।