ডিআইজির সহযোগিতায় পুত্রবধূ কর্তৃক শ্বশুর প্রতারিত!

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১০ জুন ২০২৩

ডিআইজির সহযোগিতায় পুত্রবধূ কর্তৃক শ্বশুর প্রতারিত!

পিরোজপুরের জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার আলকাজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি তার পুত্রবধূর মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন। আর এক্ষেত্রে এই প্রতারণায় বড় ছেলের দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগমকে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি আক্তারুজ্জামান (সালমার কর্তৃক তারা বাবা দাবীকৃত) সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ তুলে পুলিশ সদরদপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শ্বশুর।

আলকাজ উদ্দিন অভিযোগ করেছেন, বিয়ের পর বিভিন্ন কৌশলে সালমা অন্তত ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে এবং প্রমাণিতও হয়েছে। কিন্তু তারপরও সে দীর্ঘদিন ধরে আরও মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের লক্ষে আলকাজ উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানা ও আদালতে মিথ্যা অভিযোগ এবং মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।

সালমা বেগমের সব অভিযোগ ও মামলা আদালত ও পুলিশের তদন্তে বরাবরই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এরই প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে আলকাজ উদ্দিন সালমার বিরুদ্ধে মঠবাড়িয়া সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় সালমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদনও হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্যপ্রমাণসহ প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়। আর এতে সালমা ক্ষুব্ধ হয়ে হয়রানির নতুন পথ খুঁজতে থাকে।

অভিযোগে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি আক্তারুজ্জামানের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, ডিআইজি আক্তারুজ্জামান ভুক্তভোগীদের সঙ্গে অন্যায়ভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ শুরু করেন। ২৯ বছর বয়সী সালমা আক্তার কলেজছাত্রী ও ছোট মেয়ে পরিচয় দিয়ে ডিআইজি আক্তারুজ্জামানকে তার দলে ভিরিয়েছেন এনেছেন বলে তাদের আলকাজের।

এরই জেরে গত ১১ (বৃহস্পতিবার) মে রাত আনুমানিক ৮টায় মঠবাড়িয়া থানা পুলিশের ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার আলকাজ উদ্দিনকে থানায় ডাকেন। তিনি তার দূর সম্পর্কের নাতি আল আমিনকে সঙ্গে নিয়ে মঠবাড়িয়া থানায় হাজির হন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ নাতি আল আমিনকে থানার হাজতে বন্দি করে।

এ সময় ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ওপরের নির্দেশ আছে। সাংবাদিককে কল করে সালমার বিরুদ্ধে যে নিউজ আছে তা ডিলেট করান, নয়তো আপনার নাতিকে মামলা দিয়ে চালান করে দেবো। এরপর আলকাজের কাছ থেকে ওই রিপোর্ট করা সাংবাদিক মেহেদী হাসানের নম্বর নিয়ে তাকে কল করেন ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার। নিউজও ডিলেট করতে বলে নতুবা সাংবাদিককেও ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা বলে।

এরপর প্রমাণসহ প্রকাশ করা সংবাদের ভিডিও রিপোর্ট ফেসবুক থেকে ডিলেট করা হলে নাতি আল আমিনকে হাজত থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু আলকাজ ও তার নাতিকে সারারাত থানায় বসে থাকতে বাধ্য করে পরদিন দুপুর ২টায় ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার একটি সাদা কাগজে আমাকে স্বাক্ষর দিতে বলে। এ সময় আলকাজ ওসিকে জিজ্ঞেস করেন, কাগজে কিছু লেখা নেই কেন? তখন ওসি বলেন অপারেটর আসলে বাকিটা লিখে নেবো আপনি সই দেন। এরপর আলকাজ সেই কাগজে সই দেন।

এরপর ওসি কামরুজ্জামান বলে সালমাকে যেন ২ লাখ টাকা দেন। এতে সে আর হয়রানি করবে না। তখন ওসি কামরুজ্জামান বলেন, কখনো কখনো হয়রানি থেকে বাঁচতে টাকা দিতে হয়। কিছু করার নেই। কিন্তু অন্যায়ভাবে পূত্রবধূ চিহ্নিত প্রতারক সালমা আক্তারকে কোনো টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সে ডিআইজি ও পুলিশের নাম ভাঙিয়ে আলকাজ উদ্দিনদের লাগাতার হয়রানির হুমকি দিচ্ছে।

এছাড়া পুলিশ বেআইনিভাবে সালমার পক্ষে প্রমাণ তৈরি ও তার বিপক্ষে থাকা প্রমাণ লোপাটের প্রচেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন আলকাজ।

অভিযোগে আলকাজ উদ্দিন আরও বলেন, সম্প্রতি জানতে পেরেছি, সালমা আমার ছেলে নাসির উদ্দিনের সঙ্গে তার বিয়ে অস্বীকার করে। আমার ছেলে ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর এ লক্ষে ওই বিয়ে পড়ানো মঠবাড়িয়া পৌরসভার কাজী মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাবিন বইও বেআইনিভাবে জব্দ করার অপচেষ্টা চালায় বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা। কাজী মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে জোর করে কাবিনের বই নিয়ে তা গায়েব করে ফেলার অপচেষ্টা ছিল পুলিশের যা সম্পূর্ণ ডিআইজির নির্দেশে হচ্ছে। এছাড়া প্রতারক সালমা আক্তারও ডিআইজি আক্তারুজ্জামানের নাম ভাঙিয়ে আমাদের ও সেই কাজীকে সরাসরি হামলার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশে কর্মরত একজন ডিআইজি কিভাবে বিনা যাচাইয়ে একজন প্রতারক নারীর পক্ষ নিলো তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এ অবস্থায় ডিআইজি আক্তারুজ্জামানের নির্দেশে পুলিশের এহেন সব অপতৎপরতায় আমরা রীতিমতো ভীত, শঙ্কিত ও বাকরুদ্ধ।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত সালমা আক্তারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।