বাংলাদেশে একটানা ১৪ বছর গণতন্ত্র আছে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১০ অক্টোবর ২০২৩

বাংলাদেশে একটানা ১৪ বছর গণতন্ত্র আছে: প্রধানমন্ত্রী

ফরিদপুরের ভাঙ্গার কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ নেই, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাঁর সঙ্গে আছে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটানা ১৪ বছর আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে। স্থিতিশীলতা আছে। যে কারণে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া গেছে। সমগ্র বাংলাদেশে ওয়াইফাই সংযোগ আছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেল যোগাযোগ উদ্বোধন উপলক্ষে ফরিদপুরের ভাঙ্গার কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য মানুষের কল্যাণ করা। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে। দেশের কল্যাণে কাজ করে। আমরা দেশকে আরও উন্নত করতে চাই।’
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ নিলে অনেকে বলেছিলেন এটা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের টাকায় এই খরস্রোতা নদীতে সেতু করা সম্ভব নয়। আমি জানি অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষ আমার সঙ্গে নেই। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আছে। বাংলাদেশের মানুষ পাশে থাকলে অসাধ্য সাধন করা যায়—সেটাই আমরা করেছি। আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আজকে সেখানে রেল সেতু চালু করে দিলাম। বঙ্গবন্ধুর সুরে বলতে চাই, বাংলাদেশের মানুষকে আর কেউ দাবায় রাখতে পারবে না।’
আবার ক্ষমতায় এলে ফরিদপুরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া হবে: শেখ হাসিনাআবার ক্ষমতায় এলে ফরিদপুরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়া হবে: শেখ হাসিনা
এ সময় দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আসলে দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে। আপনাদের কাছে আমার আহ্বান নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।’
নৌকাই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আনে দাবি করে তিনি বলেন, ‘ওই লুটেরা বিএনপি। যে এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। দুর্নীতি করে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে। যে পলাতক আসামি। মুচলেকা দিয়ে দেশে ছেড়ে ভেগেছে। অর্থ আত্মসাৎ করেছে, অস্ত্র চোরাকারবারি। এই হলো বিএনপির নেতা। আর জামায়াতে ইসলামী হচ্ছে যুদ্ধাপরাধী। যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাস্তি দিয়েছি। এরা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। এই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য একমাত্র নৌকা মার্কাই আপনাদের সব রকম সহায়তা দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, আজকে পদ্মা সেতুতে রেললাইন আপনাদের উপহার দিয়ে গেলাম। আপনারা ফরিদপুরবাসী নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।’
ফরিদপুরের ভাঙ্গার কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
ফরিদপুরের ভাঙ্গার কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: ফোকাস বাংলা
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত দিন-রাত পরিশ্রম করে এ দেশের উন্নতি করেছি। হাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট। গ্রামে কাঁচা রাস্তা খুব কমই আছে। যা আছে ভবিষ্যতে সেটাও পাকা করে দেব। রেল সম্প্রসারণ করে দিচ্ছি। নৌপথ ড্রেজিং করে সম্প্রসারণ করছি। বিমান কিনে বিমানপথ চালু করে দিচ্ছি। বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন করে সারা বিশ্বে আজ উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। নৌকা আপনাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা পদ্মা সেতু, রেলসেতু করে দিয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নতি করেছে। নৌকা আপনাদের কলেজ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় দিচ্ছে।’
পদ্মা রেলসেতু চালুর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এসেছি একটি উপহার নিয়ে। সেটি হচ্ছে রেল। আমি ট্রেনে করে ভাঙ্গায় এসেছি। এটা কেউ কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। আমি আপনাদের পদ্মা সেতুর সঙ্গে সঙ্গে রেললাইনও উপহার দিয়ে গেলাম।’
আওয়ামী লীগ জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জনগণের কোনো ভোটের অধিকার ছিল না। অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করেছিল। আমরা ভোট ও ভাতের অধিকারের সংগ্রাম করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। মিলিটারি ডিক্টেটর জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া। এঁদের সময় কেউ ভোট দিতে পারত না। দশটা হোন্ডা, ২০টা গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। এখন আর সেই অবস্থা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমার মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছেন। আজকে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমি ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক কালচারাল সেন্টার নির্মাণ করে দিচ্ছি। কেন, আমাদের ধর্মটা সম্পর্কে যেন মানুষ জানে। সব ধর্মের সব মানুষ তার ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে। স্বাধীনভাবে তারা ধর্ম পালন করবে। এটাই আমাদের নীতি। ইসলাম ধর্ম সেটা শেখায়। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’
ধ্বংস করাই বিএনপির চরিত্র বলে অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি এসে কী করেছে? সবার ওপর অত্যাচার। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা। কাউকে ছাড়েনি তারা। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ দেশকে গড়তে চায়। আজকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য এ দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।’
পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের ঘটনা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি সামান্য ব্যাংকের এমডির পদের জন্য...সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে হেরে গেল। আর সেই ক্ষোভে হিলারি ক্লিনটনকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের টাকা বন্ধ করে দুর্নাম দিতে চেয়েছিল, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, দুর্নীতি করতে আসিনি। মানুষের সেবা করতে এসেছি। শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি সবার অনেক দিনের আশা, এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার। ইনশা আল্লাহ, ভবিষ্যতে সরকারে আসতে পারলে আমরা সেই বিশ্ববিদ্যালয় করে দেব।’
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ওয়াদা দিয়েছিলেন, তা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। এখন সবার হাতে মোবাইল ফোন। সবাই অনলাইন ব্যবহার করেন।

এ সময় সমাবেশে উপস্থিত লোকজনের কাছে শেখ হাসিনা জানতে চান, ‘কী, মোবাইল ফোন আছে না হাতে, আছে? কই দেখি’—উপস্থিত মানুষজন তখন তাঁদের সঙ্গে থাকা মোবাইল হাতে তুলে ধরে দেখান প্রধানমন্ত্রীকে। পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মোবাইল ফোন কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর।’