মানসিক চাপে অসুস্থ আদম তমিজি হককে রিহ্যাব সেন্টারে পাঠাল ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১০ ডিসেম্বর ২০২৩

মানসিক চাপে অসুস্থ আদম তমিজি হককে রিহ্যাব সেন্টারে পাঠাল ডিবি

হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হককে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর একটি রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।

গত শনিবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল তাকে গুলশানের বাসা থেকে আটক করে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেয় এবং সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলশানের একটি রিহ্যাব সেন্টারে রাখা হয়েছে।

সূত্র মতে জানা গেছে, প্রায় দুই ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি কর্মকর্তারা এই সিদ্ধান্ত নেন। তারা বলছেন, আদম তমিজি হক প্রচন্ড মানসিক চাপে রয়েছেন এবং সেই জন্যই তিনি মূলত বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অসংলগ্ন কথা বার্তা বলেছেন। ডিবি কর্মকর্তারা মনে করেছেন তার চিকিৎসা প্রয়োজন, সেই জন্যই তাকে রিহ্যাব সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে বিদেশ থেকে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের পাসপোর্ট পুড়িয়ে আলোচনায় আসেন আদম তমিজি হক। পরে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। গত ১৩ নভেম্বর দেশে ফেরেন বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত এই নাগরিক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে আদম তমিজির বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। গত ১৬ নভেম্বর রাতে তার বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব।

ফেসবুক লাইভে এসে বাংলাদেশের পাসপোর্ট পুড়িয়ে ফেলে আলোচনায় এসেছেন হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজী হক। তার এমন কর্মকাণ্ডে দেশের প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তবে হক গ্রুপের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত হক গ্রুপ নিয়মমাফিক চলবে। এর অর্জিত লভ্যাংশ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
এর আগে এক ফেসবুক পোস্টে আদম তমিজী হক ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমি আদম তমিজী হক। হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের সকল শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা সকলের প্রতি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রত্যেকের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিষ্ঠান থেকে আমি ও আমার পরিবার কখনো কোনো লভ্যাংশ গ্রহণ করি নাই, ভবিষ্যতেও করবে না। আমি ও আমার দ্বারা নির্দিষ্টকৃত আমার পরিবার প্রতিষ্ঠানের মালিক ও অভিভাবক মাত্র।’

ব্যারিস্টার তমিজুল হকের ছেলে আদম তামিজী হক ১৯৭৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্কুলজীবনে ইংল্যান্ডের বোর্ডিং স্কুলে কাটিয়েছি। ১৬ বছর বয়সে তিনি বোর্ডিং স্কুল ছেড়ে লন্ডনের একটি টিউটোরিয়াল কলেজে চলে যান। তানজানিয়ার জাঞ্জিবারে অল্প কিছুদিন থাকার পরে, আদম উত্তর ইংল্যান্ডের হাডারসফিল্ডে চলে যান এবং হাডারসফিল্ডের হিলটন হোটেলে কাজ করার আগে ক্যাটারিংয়ের একটি কোর্স করেন। 

আদম তমিজী হক যুক্তরাজ্যের মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে হক গ্রুপের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে ২০০২ সালে শুরু করার পরে তিনি শুধুমাত্র ড্রাইসেল এবং সাবানের ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন এবং কেবল ২০১১ সালে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হওয়ার পরে নিজেকে বিস্কুটের সঙ্গে জড়িত করেছেন। 

আদম তামিজী এখন বাংলাদেশে বসবাস করছেন, মানবাধিকার এবং সমাজের জন্য কাজ করছেন। তিনি ২০১৭ সালে রাজনীতিতে যোগদান করেন, বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে অনেক প্রকল্পে কাজ করছেন। বিদেশি বাণিজ্য ও দেশীয় ব্যবসায়ের প্রসারের মাধ্যমে হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শ্রমিকদের নিযুক্ত করেছেন। ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি দেশের রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।

আদম তামিজী হক (জন্মঃ ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭৬) একজন বাংলাদেশি শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, এবং সমাজসেবক। তিনি এ. টি. হক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মানবিক বাংলাদেশ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং একজন বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

সুদূর ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার সময়ও তার হৃদয় বাংলাদেশেই ছিল। তার হৃদয় সর্বদা দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য কাঁদে। স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশে এসে সৎ ও সাহসের সঙ্গে দেশ ও দেশবাসীর পক্ষে কাজ করা। তিনি যেকোনো দুর্যোগে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবিলায় সব ধরনের লোকের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। পারিবারিকভাবে সুযোগপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটের উন্নয়নে মানুষের পাশে ছিলেন।

শৈশবকাল থেকেই তিনি ক্রমাগত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, দিকনির্দেশ এবং বক্তৃতায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নেতা ও রাজনৈতিক আদর্শ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার আগে তিনি বঙ্গবন্ধু আদর্শের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার সংগঠন ‘মনোবিক বাংলাদেশ সোসাইটি’ নগরীর প্রতিটি এলাকায় কাজ করছে। এর শাখা পুরো ঢাকাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও সমগ্র বাংলাদেশে এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আদম তমিজী হক সিআইপি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। সুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে আদম তমিজী হক দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্নকে লালন করেছিলেন। এ তরুণ শিল্পপতি মনে করেন যে ১৮০ মিলিয়ন মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশের সম্পদ রয়েছে; তবে সবার লোভকে সন্তুষ্ট করার পক্ষে তা যথেষ্ট নয়।

আদম তমিজী হক কেবল ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিই নন, তিনি সামাজিক ও নাগরিক দায়বদ্ধ ইতিবাচক পরিবর্তনের স্বপ্নদ্রষ্টাও বটে। ফলস্বরূপ, ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ রক্ষা এবং রাজধানীকে একটি বাসযোগ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নকে লালন করেছে।আদম তমিজী হক দরিদ্রদের মধ্যে উদার সমাজসেবী হিসেবে সুপরিচিত।

আদম তমিজী হক এমন একটি সমাজ গঠনে লড়াই করে যাচ্ছেন যেখানে দারিদ্র্যের অভিশাপ কেউ ভোগ করবে না।
তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মনোবল হিসেবে কাজ করে মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মনস্থির করেন। কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আদম তমিজী হক মানবিক বাংলাদেশ নামে একটি সংস্থা গঠন করেছেন। এ দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি অসহায় শিশুদের পড়াশোনা, চিকিৎসা ও শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অবদান রাখেন নূরউদ্দিন রানা।

আদম তমিজী হক একজন প্রতিভাবান এবং সফল ব্যক্তিত্ব যিনি সাফল্য এবং কৃতিত্বের সিঁড়িতে উঠে এসেছেন। ২০১০ সালে তিনি হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং হক গ্রুপকে বাংলাদেশের অন্যতম এফএমসিজি সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।