দুর্জয় রায় । ১১ এপ্রিল ২০২৩
আওয়ামী লীগ বনাম প্রথম আলোর এই লড়াই মূলত রাজনৈতিক। ২০০৭ সালের ১৩ই জানুয়ারি গঠিত সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বাদ দিয়ে দুই দলের কিছু ডিগবাজী নেতা এবং সুশীল সমাজের কিছু সুবিধাবাদী উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি নিয়ে মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান করে যে “জাতীয় সরকার” গঠনের প্রক্রিয়া বা মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো তাতে প্রথম আলোর পূর্ণ সমর্থন ছিলো। জনশ্রুতি আছে, এই পরিকল্পিত "জাতীয় সরকার"-এর একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার কথা ছিলো মতিউর রহমানের।
কিন্তু সেনা-নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উৎসাহ ও উস্কানিতে এই হাঁসজারু {রসিকরাজ সুকুমার রায়ের কল্পিত হাঁস ও সজারুর মিলনে জন্ম উদ্ভট প্রাণি} বা খচ্চর {ঘোড়া ও গাধার মিলনে জন্ম} সরকারের পরিকল্পনার প্রতি দেশের জনগণ আস্থা স্থাপন করতে পারেনি। বরং এই “জাতীয় সরকার” যে একটা দুরভিসন্ধির ফসল এবং এই ব্যবস্থা যে পরিণামে দেশের জন্য ক্ষতি বয়ে আনবে তা জনগণ ঠিকই বুঝেছিলো এবং তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো।
পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর তিনি দলীয় সভায় দলের ডিগবাজী নেতারা যারা জাতীয় সরকারে যোগ দেয়ার গোপন ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছিলো তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেনঃ “ফরগেট করেছি, ফরগিভ করবো না”। শেখ হাসিনার এই সাবধান-বাণী আসলে সেই দুরভিসন্ধিমূলক জাতীয় সরকারের পরিকল্পনার সাথে জড়িত সবার জন্যই প্রযোজ্য ছিলো। পরবর্তীতে দলের ডিগবাজী নেতারা তা টের পেয়েছেন, এখনো পাচ্ছেন। মতিউর রহমানও সেই সাবধান-বাণীর ফলটাই টের পাচ্ছেন।
রাজনীতির দাবা খেলায় “ফরগেট” ও “ফরগিভ” করার সুযোগ নাই; করলেই কিস্তি মাত, খেলা শেষ। সে দিক থেকে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এই অবস্থান ও য়্যাকশন অযৌক্তিক নয়।
আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও প্রথম আলোর সম্পাদক হিসেবে মতিউর রহমানের সাফল্য ঈর্ষণীয়। এতো সাফল্যের পর তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে সাংবাদিকতায় তো আর কিছু পাওয়ার নেই। এবার সরাসরি ক্ষমতার স্বাদ নেয়া যাক। আর ভীড়ে গিয়েছিলেন ইউনুসদের দলে। তাঁর আজকের এই দুর্গতির জন্য তিনিই দায়ী। এই দুর্গতি থেকে উদ্ধারের পথ তাকেই খুঁজে বের করতে হবে।