নিজস্ব প্রতিবেদক । ১১ অক্টোবর ২০২২
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ঘরের বাইরে আনার পরিকল্পনা করছে তার দল। আর সে দিনটি হতে পারে চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর। ওই দিন দলের চেয়ারপারসনকে পল্টনের মহাসমাবেশে উপস্থিত করে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি দিতে চায় বিএনপি। ‘১০ ডিসেম্বর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়’- বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান তার এ বক্তব্যে এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে ধারণা বিএনপি নেতাকর্মীদের।
২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ নামে কর্মসূচি পালন করেন। এবারও ঠিক একই আদলে আগামী ১০ ডিসেম্বর কর্মসূচি পালন করতে চায় দলটি। হঠাৎ আলোচনায় আসা ‘১০ ডিসেম্বর’ ঘিরে এমন পরিকল্পনার কথা জানা গেছে সম্প্রতি কিছুটা গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠা বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে। শনিবার ঢাকার এক সমাবেশে ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশ চলবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কারও কথায় দেশ চলবে না। এই সরকারের বিদায় ঘটিয়ে তবেই আমরা ঘরে ফিরব।’
জানা গেছে, বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। ওই দিন তারা নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনসমাগম ঘটাতে চায়। ঢাকার বাইরে থেকেও নেতাকর্মী আনা হবে। বিএনপি বলছে, যত বাধাই আসুক, তারা কর্মসূচি পালন করবেই। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ওই সমাবেশে নেওয়ার চেষ্টা করবেন তার নেতাকর্মীরা। বাধা পেলে বাসার সামনে দাঁড়িয়েই তিনি বক্তব্য দেবেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে পল্টনের মহাসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক সময়ের আলোকে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ হবে আটলান্টিক মহাসাগরের মতো। ওই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন। আমান উল্লাহ আমানের কথায় তাই বোঝা যাচ্ছে। হয়তো পুলিশ বাসার গেটে বাধা দেবে। ম্যাডাম তো আর পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করবেন না। তিনি সেখানেই দাঁড়িয়ে যাবেন। আমরাও প্রতিবাদ শুরু করব সেখান থেকে। মার্চ ফর ডেমোক্রেসির সময়ও তাই হয়েছিল। এবারও তাই হবে।’ বাসা থেকে বের হতে খালেদা জিয়ার আইনগত বাধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই সরকার তো খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা নিতে দেয়নি। বিদেশ যেতে বাধা দিয়েছে। সুতরাং বাধা তো সবখানেই দিচ্ছে। ১০ ডিসেম্বরেও হয়তো বাধা দেবে। কিন্তু কর্মসূচি পালন হবে। আমাদের মনে একটি শক্তি যুগিয়েছে জনগণ, ১০ তারিখ আমরা এ সরকার ফেলে দিতে পারব।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু মনে করেন, আমান উল্লাহ আমানের বক্তব্য কথার কথা হলেও ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরা একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাই। এর মধ্য দিয়ে সরকার পতনের চূড়ান্ত অধ্যায় শুরু হবে। জনতার বিপ্লব ঘটবে।
আর দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘আমরা ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বড় সমাবেশ করব। ওই দিন কী হবে না হবে এটা সময় হলেই জানতে পারবেন। আগে জানানোর বিষয় নয়।’ দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের
আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ১০ তারিখের পর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চলবে। আর কোনোভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। শিগগিরই তারেক রহমান দেশে আসবেন।’
বিএনপি সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’র আদলে কর্মসূচি পালন করা হবে। দলের নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘গৃহবন্দি’ থেকে প্রথমবারের মতো জনগণের সামনে আনার চেষ্টা করা হবে। এতে নেতাকর্মীরা বেশ চাঙ্গা হবেন। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে। প্রতিবাদে ওই দিনই হরতাল বা অবরোধের ডাক আসতে পারে। এ বিষয়ে কথা বলতে আমান উল্লাহ আমানকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার সকালে দলের এক কর্মসূচিতে নিজের ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেন, ‘১০ তারিখ নয়। যখনই এ সরকার অবৈধভাবে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকে দেশের জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চায়নি এ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। জনগণ এ সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাদের দাবি অনুযায়ী আমরাও মাঠে নেমেছি।’ সূত্র- সময়ের আলো