নিজস্ব প্রতিবেদক । ১১ নভেম্বর ২০২৩
বিএনপি–জামায়াতের ব্যাপারে সবাইকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সৃষ্টি করি, আর তারা (বিএনপি–জামায়াত) ধ্বংস করে। কিন্তু এই ধ্বংস যেন আর করতে না পারে। মানুষকে পুড়িয়ে মারবে, এটা সহ্য করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার নবনির্মিত রেলস্টেশনের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে আইকনিক কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। এর মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সরাসরি রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো।
দেশে এত উন্নয়নের পরও যারা উন্নয়ন দেখে না, তাদের বর্তমান সরকারের করে দেওয়া আধুনিক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ১০ টাকার টিকিট কিনে চোখের চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসলে এটা তাদের চোখের দোষ নয়, মনের দোষ। আজকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা, বাসে, রেলে আগুন দেওয়া হচ্ছে। আমরা রেলের জন্য যেসব নতুন লোকামোটিভ এনেছিলাম, সেগুলোও আগুন দিয়ে তারা পুড়িয়েছে। যারা এত বীভৎস কাজ করতে পারে; এই দুর্বৃত্তপরায়ণতায় যারা জড়িত তাদের চোখ নয়, আসলে মনই অন্ধকার। কাজেই এদের ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। কারণ, এরা ধ্বংস জানে সৃষ্টি করতে পারে না। আমরা সৃষ্টি করি, আর তারা ধ্বংস করে। কিন্তু এই ধ্বংস যেন আর করতে না পারে। মানুষকে পুড়িয়ে মারবে, এটা সহ্য করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রেলযোগাযোগের মাধ্যমে সমগ্র দেশকে কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি রেল পরিষেবা, গতি ও পরিবহনকে বিশ্বমানের করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। তিনি বলেন, তিনি নিজেসহ দেশবাসী এখন কক্সবাজার থেকে পঞ্চগড়, রাজশাহী, দেশের দক্ষিণাঞ্চল, সুন্দরবন পর্যন্ত রেলপথ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। মজার সুরে তিনি আরও বলেন, ‘কেন গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়াকে ছেড়ে দেওয়া হবে (রেল সংযোগ থেকে), তার মানে সারা বাংলাদেশ কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এই রেলপথ উদ্বোধন করে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। এটা এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আজ সেই দাবি পূরণ হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা রামু পর্যন্ত করা হয়েছে এবং ঘুমধুম পর্যন্ত করার কথা। এ জন্য আমরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসতে চাই। ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে আমরা সংযুক্ত হতে চাই। সেটা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর।
এ সময় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ের কার্যক্রম এবং দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী রেলস্টেশনে পৌঁছালে স্থানীয় শিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রেললাইনটা চকরিয়া থেকে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর ও পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে যাতে সংযুক্ত হয়, তার ব্যবস্থাও করা হবে। তিনি বলেন, তাঁর সরকার ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মিলে সম্প্রতি খুলনা থেকে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ব্রডগেজ রেল চলাচলের উদ্বোধন করেছে। যে লাইনটা একসময় খালেদা জিয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
রেললাইন উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী নিজেই টিকিট কেটে কক্সবাজার থেকে রামু যাওয়ার ট্রেনে চড়েন। প্রধানমন্ত্রীর হুইসেল ও সবুজ পতাকা নেড়ে ট্রেন চলাচলের যাত্রা উদ্বোধন করেন।