নিজস্ব প্রতিবেদক । ১২ এপ্রিল ২০২৩
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং বেনামে ব্যাংক হিসাবে টাকা লেনদেন অভিযোগের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এই জাহাঙ্গীর।
সম্প্রতি দুদকের করা তদন্তে উঠে আসে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রায় ২ কোটি টাকার অধিক বরাদ্দ থাকলেও সেই টাকা সিটি কর্পোরেশনের ফান্ড থেকে তুলে নেয় জাহাঙ্গীর ও তার লোকজন। অথচ কোভিড মহামারি বিধিনিষেধের কারণে প্রোগ্রামগুলো অনুষ্ঠিতই হয়নি।
কাগজপত্রে দেখানো হয়েছে ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে রাজবাড়ি মাঠে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত হয় এবং এজন্য তহবিল থেকে অর্থ দেয়া হয়েছে কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে তখন উন্মুক্ত জায়গায় সব ধরনের অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং এই ধরনের কোনো অনুষ্ঠান সেদিন রাজবাড়ি মাঠে অনুষ্ঠিত হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয় জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এর জন্য তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোস্তাফিজুর রহমানের জন্য ৪৬ লাখ এবং তৎকালীন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রেজাউল বারির জন্য ৪৫ লাখ টাকার আরেকটি চেক ইস্যু করা হয়।
কিন্তু মাস্টাররোলে থাকা জিসিসি দুই অঞ্চলের কর্মী নাজমুল ইসলাম সুলাইমান তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে সেগুলো ক্যাশ করেন। এব্যাপারে রেজাউল বারী জিসিসিকে জানান তার নামে ইস্যু করার চেকের বিষয়ে তিনি অবগত নন।
গত ২০২১ সালের নভেম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হয়। পরে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে তাঁকে মেয়র পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
দুদকে পেশ করা অভিযোগে বলা হয়, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা সরঞ্জাম ক্রয় করতে অনুদানের প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচের হিসাব রাখা হয়নি। কী কী পণ্য কত টাকায় কেনা হয়েছে, কোথা থেকে কেনা হয়েছে- এ-সংক্রান্ত কোনো নথি সংরক্ষণ করা হয়নি। করোনা মোকাবিলায় আরও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচের হিসাব রাখা হয়নি। জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি কমিটি করোনা মোকাবিলায় অর্থ খরচসহ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
অভিযোগ করা হয়, জাহাঙ্গীর আলম ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁর পছন্দের ২৩টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কাজ করিয়েছেন। ২০১৮-১৯ ও ২০২০-২১ এই দুই অর্থবছরে ২৩ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়নি। পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে কাজ করাতে করপোরেশন এলাকায় আর কোনো প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদারি লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়নও করা হয়নি।
দুদক সূত্র জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নামে একটি হিসাব খোলা হয়েছে। ওই হিসাবটি প্রকৃতপক্ষে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অফিসিয়াল হিসাব নয়। ফিন-বাংলা অ্যাপারেলস, জিএসএম কম্পোজিট মিলের কাছ থেকে সোয়া ২ কোটি টাকা অগ্রিম হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ গ্রহণ করে ওই ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়ে পরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ইস্পহানি ফুডস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পরে এই টাকা সিটি করপোরেশনের হিসাবে জমা না দিয়ে নিজের গোপন হিসাবে জমা দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। তিনটি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে তাদের অর্থ প্রদানের বিষয়টি অবহিত করেছে।
তথ্যসূত্র : দ্য ডেইলি স্টার ক্রাইম ফাইলস ও সমকাল