বগুড়ায় সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের দখলে

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৪ নভেম্বর ২০২২

বগুড়ায় সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের দখলে

রাজিবুল ইসলাম রক্তিম (বগুড়া) : বগুড়ায় বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো ওষুধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। তাদের কোম্পানির ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লেখা আছে কিনা তা দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। কেউ কেউ আবার রোগীদের দাঁড় করিয়ে তাদের মুঠোফোন দিয়ে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলে রাখেন। এতে করে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন এইসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগী ও রোগীর স্বজনরা। যেখানে সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করা নিষেধ। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়া রোগীদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ঔষধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে কাড়াকাড়ি করার মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। বিষয়টি পুরুষ রোগীর জন্য স্বাভাবিক হলেও নারী রোগীর জন্য খুবই বিব্রতকর।

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও বেসরকারি ১৫০০ শয্যাবিশিষ্ট টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও রফাতুল্লাহ কমিউনিটি হাসপাতাল গুলোতে শতশত রোগীরা আসেন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে। কিন্তু সেবা নিতে এসে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কারণে।

সরেজমিনে এই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডাক্তারদের চেম্বারে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই বিভিন্ন নামীদামী ঔষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের মহড়া। তারা দল বেঁধে ডাক্তারদের চেম্বারের আশেপাশে ঘুর ঘুর করে এবং ডাক্তারের সহকারীকে বিভিন্ন পন্থায় ম্যানেজ করে একজন একজন করে ডাক্তারের সাথে দেখা করে কোম্পানির ওষুধের স্যাম্পল দিয়ে থাকে। ডাক্তারের চেম্বার থেকে চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা যখন বাইরে বের হয়ে আসে তখন ব্যবস্থাপত্র দেখতে তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে রোগীর উপর। এরপর ব্যবস্থাপত্রটি নিয়ে দেখা শুরু করে তাদের কোম্পানির ওষুধ গুলো ব্যবস্থাপত্রে লেখা আছে কিনা দেখা শুরু করে। কেউ কেউ আবার তাদের স্মার্ট ফোন দিয়ে ছবি পর্যন্ত তুলছে। এতে রোগীরা অস্বস্তি ও বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ছেন ক্ষুণ্ন হচ্ছে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা।

চিকিৎসা নিতে আসা ফরিদা ইয়াসমিন (৫৫) নামের এক রোগী বলেন, আমি বেশি অসুস্থ্য হলে হাসপাতালে আসি ডাক্তার দেখানোর জন্য সেখানে এসে দেখি ডাক্তারের চেম্বারের আশেপাশে অনেক ঔষধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি বসে বিভিন্ন রকম খোশ গল্পে ব্যস্ত আছে। আবার কেউ কেউ ডাক্তারের চেম্বারে ভিতরে বসে ডাক্তারকে তাদের কোম্পানির ঔষধ ব্যবস্থাপত্র লেখার জন্য অনুরোধ করছে ঔষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পর বাধ্য হয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পাইছি।

নাম না প্রকাশের শর্তে শহরের বেশ কয়েকটি নামীদামী ফার্মেসী ব্যবসায়ী জানান, ঔষুধ কোম্পানি গুলোর আগ্রাসী মার্কেট পলিসির ফলে দেশে প্রয়োজনীয় ঔষধের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় ঔষধের ব্যবহার বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি ঔষুধ বাজারজাতকরণ নীতিমালা থাকলেও তা মানে না কোম্পানি গুলো। ফলে অসাধু ও অর্থলোভী ডাক্তার, হাতুড়ে ডাক্তার ও ফার্মাসিষ্টদের ফাঁদে পড়ে অশিক্ষিত ও দরিদ্র রোগীরা ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ সেবন দিকে ঝুঁকছে।

তারা আরো জানান, ডাক্তারদের এই মহামূল্যবান উপকৌটন দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে ঔষধ কোম্পানী গুলো ভালো মানের ওষুধ বাজারজাত করলে রোগীরা প্রতারিত ও ভেজাল ওষুধ থেকে রক্ষা পাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, ডাক্তারের দেওয়া ব্যবস্থাপত্রে তাদের কোম্পানির ঔষুধ লিখার জন্য প্রতিমাসেই আমরা তাদের কলম, প্যাড, চাবির রিং থেকে শুরু করে ঘরের আসবাবপত্র টিভি-ফ্রিজসহ মোটা অংকের উপহার দিয়ে থাকি। তার বিনিময় ডাক্তাররা তাদের ব্যবস্থাপত্রে আমাদের ঔষধ লিখবে। এই কারনে আমার ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে ভীড় করি ব্যবস্থাপত্রের একটি কপি মেইল করে কোম্পানির হেড অফিসেও পাঠানো জন্য।

এ বিষয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: মো: আব্দুল ওয়াদুদ সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঔষধ কোম্পানি প্রতিনিধিদের ডাক্তারদের চেম্বার ভিজিট করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যদি এই সময় লঙ্ঘন করে রোগীদের হয়রানি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।