নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৪ আগস্ট ২০২২
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বিরোধীরা একটা সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করছে। সেটা করুক, আমি তো চাচ্ছি, আমি নির্দেশ দিয়েছি— তারা আন্দোলন করছে, করতে দাও। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করবে, আমি আসতে দেব। খবরদার, তাদের কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, বিরক্ত করা না হয়। তারা আন্দোলন করতে চায়, করুক, অসুবিধা কী?
রোববার (১৪ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে সভায় সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তো কিছু লোক থাকেই, প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে খামোখা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। ওই ছুতা ধরে— সেটা হচ্ছে কিছু কিছু। হঠাৎ এত দাম তো বাড়ার কথা নয় প্রত্যেক জিনিসের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে আন্তরিকতার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করছি, সেটা দেশের মানুষ জানে ও বোঝে। হ্যাঁ-না কথা বলবে। বিরোধী দল সুযোগ যখন পাচ্ছে, সেটা কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু তারা যদি বেশি করতে চায়, এর প্রভাবে তো দেশের মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। এটাও তাদের বোঝা উচিত।
বিরোধী দলের আন্দোলনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আন্দোলন করে তারা কতটুকু সফল হবে সেটা জানি না। কিন্তু যেটা করছে তাতে দেশের জন্য আরও ক্ষতি হবে। আমরা সেটা সামাল দিতে পারব, সেই বিশ্বাস আমার আছে।
যখনই বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমবে সরকার তাতে সমন্বয় করবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, সেটা আমার নির্দেশ রয়েছে। তা করে দিচ্ছি। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার সীমিত করতে হবে। হয়তো কিছুদিন আমাদের কষ্ট করতে হবে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যখন চালু হবে তখন বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটা দূর হয়ে যাবে।
নির্বাচনী ইশতেহার পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যা যা ওয়াদা দিয়েছি সেগুলো পূরণ করেছি। করোনাভাইরাস, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা না থাকলে দেশের কোনো সমস্যা হতো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বিষয়গুলোতে আমরা আমদানি-নির্ভর সেখানে সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিজ নিজ জমিতে সবাইকে উৎপাদন করতে হবে। আমাদের খাবারটা যেন আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতে পারি, বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে না হয়। সেই ব্যবস্থাটাই আমাদের নিতে হবে।
নিষেধাজ্ঞায় আমেরিকা ও রাশিয়ার লাভ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রুবলের দামও বাড়ছে, ডলারের দামও বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী রুবল ও ডলার স্টক হয়ে গেছে। মরছে সব দেশের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য চরম দুর্ভোগ। সব দেশের একই অবস্থা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধ মানুষের জীবনে সর্বনাশটা ডেকে এনেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্ট-এ কারবালার চেয়েও জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটে। আমার শুধু একটা প্রশ্নই জাগে মনে যে, আমার বাবা-মা-ভাইয়েরা কী অপরাধটা করেছিল? কেন এভাবে হত্যা করা হলো? এই শূন্য হাতে একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ এবং একটা প্রদেশ, তাকে রাষ্ট্রে উন্নীত করা এবং এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা.. হাতে সময় পেলেন মাত্র সাড়ে তিন বছর। কোনো সম্পদ ছিল না।
সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংগঠনের মাধ্যমেই তো আমরা কাজ করি। আমাদের যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক যাই আসুক আওয়ামী লীগের বা আমাদের সহযোগী সংগঠন সবসময় তারা কিন্তু সজাগ থাকে এবং মানুষের পাশে সবার আগে দাঁড়ায়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। সেই সংগঠনকে সুসংহত করা— এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন সরকারে ছিল, আমাদের যখন মেয়াদকাল শেষ হয়ে যায় তখন আমরা কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে আসি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ পর্যন্ত আর কখনোই ক্ষমতার পরিবর্তন এভাবে শান্তিপূর্ণভাবে হয়নি। প্রতিবারই কিন্তু একেকটা ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘটেছে। এটা কিন্তু সবার একটু মাথায় রাখতে হবে। এর কারণ আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, নীতিতে বিশ্বাস করে। জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। সেজন্য ওই একবারই... তারপরের ঘটনা তো সবাই জানে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন। সেই সময়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার, মানুষ খুন করা, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার- সেখানে হিন্দু-খ্রিস্টান কেউ বাদ যায়নি। ২০০১ সালের নির্বাচনের যে চিত্র সেটি সবার মনে আছে। তারপর বিএনপি-জামায়াত এসে বাংলাদেশকে পাঁচ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা। ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান যে শুধু ইনডেমিনিটি দিয়ে মাফ করে দিয়ে পুরস্কৃত করেছে তা তো নয়। এরশাদ এসে খুনি ফারুককে প্রেসিডেন্ট ক্যান্ডিডেট করল। খালেদা জিয়া এসে আরও একধাপ ওপরে। রশিদ-ফারুক-হুদা তিনজনকে নমিনেশন। ফারুককে জেতাতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেটা পারেনি। হুদা আর রশিদকে জিতিয়ে পার্লামেন্টে বসাল।
তিনি বলেন, খুনি রশিদকে পার্লামেন্টের লিডার অব অপজিশনে বসাল। তার মানে এই দেশে খুনিদের সৌহার্দটা কত এটা জনগণের জানা উচিত। সেই খুনিদের তারা পুরস্কৃত করার মানে কী? ১৫ আগস্ট হত্যার সঙ্গে এদের যে সম্পৃক্ততা, জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা, ইনডেমিনিটি দিয়ে তাদের বিচার হবে না। আমরা যারা পনেরোই আগস্ট আপনজন হারিয়েছি আমাদের তো বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। মামলা করার অধিকার ছিল না, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। অর্থাৎ বিচারহীনতার একটা সংস্কৃতি এ দেশে চালু করে দিয়েছিল। যেখানে তুমি কোনো দিন ন্যায় বিচার চাইতেই পারবে না। খুব ইয়ে লাগে যখন কেউ মারা গেলে আমার কাছে বিচার চায়। আমার তো বিচার পেতে ৩৫ বছর সময় লেগেছে। আমার বাপ, মা, ভাই সব হারানোর পরেও বিচার চাইতে পারিনি।