'বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান'

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৬ আগস্ট ২০২৩

'বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান'

বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা

বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। একই অবিনাশী সত্তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। বাংলা, বাংলার প্রকৃতি, বাংলার মানুষ, জীবন-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখনই সাড়ে সাত কোটি মানুষের আলোকবর্তিকা হয়ে, মুক্তির বাণী হাতে জন্ম নেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির রাখাল রাজা, বাঙালির মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জন্মের সঙ্গেই বাংলার, বাংলার ধর্মপ্রাণ, শান্তি প্রিয়, কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।

তার লক্ষ্য ছিল লুণ্ঠিত মানবতার উদ্ধার, ব্রত ছিল মানব কল্যাণ আর আদর্শ ছিল সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বজ্র কণ্ঠে প্রতিবাদ। টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট একটি ঘরে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিব এককালে দেশ, কাল, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে পুরো বিশ্বের অন্যতম নেতা হয়ে অধর্ম, অশান্তি, অন্যায়, অবিচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ভারতীয় উপমহাদেশের মানচিত্র এভাবে বদলে দেবেন তা হয়তো কেউই আঁচ করতে পারেননি। মুজিব চেতনায় জাগ্রত, হৃদয়ে স্পন্দিত, শোকাহত-প্রতিবাদী-মুজিব বিপ্লবী জনতা কোটি কোটি।

ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও যে বাঙালি নির্ভীক চিত্তে বাঙালির জয়গান গেয়েছেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন, মুক্তির সংগ্রাম আর বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলেন তিনি। তিনি জানতেন বাঙালিকে স্বাধীন করতে হলে কি ধরনের মূল্য দিতে হবে। জীবনপণ সংগ্রাম করতে হবে। কেউ তাকে দাবায়ে রাখতে পারেনি। খোকা, ‘মুজিব’ থেকে সংগ্রামের মাধ্যমেই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু যখন একটি উন্নত, স্বাধিকারচেতা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির স্বপ্ন দেখেছেন তখন বাংলা ও বাংলার মানুষ ইংরেজদের শোষণে বিপন্ন ছিল আর এর পর পাকিস্তানি রক্তপিপাসু হায়েনারা এসে ধর্মের নামে আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের অধিকার, আমাদের সম্মান, আমাদের স্বাধীনতার ইচ্ছা সবই কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তখন একজন তরুণ মুজিব ছিলেন বলেই তখনো বাংলার শিরায় শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল, একজন দৃঢ় মুজিব ছিলেন বলেই পাকিস্তানি শোষকেরা আমাদের ভাষা, আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান। আজ যে স্বাধীনতা আমরা উপভোগ করছি, যে স্বাধিকার আমাদের মাঝে বিদ্যমান তা সেই মহান মানুষটারই অবদান। তিনিই সবার প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন ধর্মের ভিত্তিতে দেশ চললে বাঙালি জাতির আলোক শিখা হয়ে যাবে, তিনি আঁচ করেছিলেন স্বাধীন ভূমি ব্যতীত শান্তি অসম্ভব আর তাই উদ্ভাবন করেছিলেন ছয় দফা। ছয় দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘সাঁকো দিলাম স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’

শেখ মুজিব যে পাকিস্তানের জন্য হুমকি হয়ে উঠবেন তা পাকিস্তানি শাসকেরা বুঝতে পেরেছিলেন আর তাই আগরতলা মামলার মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দিয়ে বাঙালি জাতির ভেতর সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের পূর্বেই নিভিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে একই সূত্রে গাঁথা বলে ভাবতেন। এ জন্যই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সরকার স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নিকট প্রস্তাব করে ‘শেখ মুজিবকে চাও, নাকি স্বাধীনতা চাও?’ অর্থাৎ পাকিস্তান সরকারের এই হিংসাত্মক ও অচেতন প্রস্তাব থেকেই প্রমাণিত হয় যে বঙ্গবন্ধুকে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমার্থক হিসেবে দেখেছেন।

জবাবে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন ‘আমরা শেখ মুজিবকেও চাই, স্বাধীনতাও চাই।’ তাজউদ্দীন আহমদও বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অভিন্নরূপে দেখেছেন। তিনি জানতেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশ অসম্ভব।
বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধুর দেশ বলে জানতেন, তারা বঙ্গবন্ধুর কারণেই এ দেশকে চিনেছেন। ১৯৭৩ সালে ন্যাম এর আলজিয়ার্স সম্মেলনে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি, ব্যক্তি ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের সমতুল্য।’ এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ত্ব নিয়েই তিনি সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করেছেন, জেলখানায় বসেও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নজাল বুনেছেন, রাইফেলের মুখেও অটল থেকেছেন। এই সাহসিকতা নিয়েই হেঁটে চলেছেন গেঁয়ো পথে, কৃষকের দুয়ারে, দিল্লি হতে লাহোরে আর সবখানেই বাঙালির মুক্তির চিরন্তন বাণী গেয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ নাম দুটিকে কখনো ভিন্নরূপে কল্পনাও করা যায় না। একটিকে আরেকটি থেকে আলাদা করা যায় না। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই উর্বর ভূমি, এর ভেতর বাস করা ১৮ কোটি মানুষ এবং এর সংস্কৃতিকে যদি একটি দেহরূপে কল্পনা করা হয় তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সেই দেহের প্রাণ। এই দেহ তৈরি আর শৈশবে লালিত হয়েছে তারই হাত ধরে এবং এখন বিকশিত হচ্ছে তারই অংশ, তার আদর্শের বাস্তব রূপ শেখ হাসিনার হাত ধরে। পিতা এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা, রেখে গিয়েছেন আদর্শ, তারই কন্যা দিয়েছেন উন্নয়ন, চির উড্ডীন সবুজের মাঝে লাল সূর্য।

তাই মুজিব মানেই বাংলাদেশ। মুজিব আদর্শই বাংলাদেশের অলিখিত সংবিধান। বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র, শোষণ দূর করার হাতিয়ার, আর উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ আদর্শকে ধারণ করেই দেশরতœ শেখ হাসিনা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। অল্প সম্পদ স্বল্প পুঁজি, অদক্ষ জনগণ নিয়েও লড়াই করে বাঁচতে শিখিয়েছেন। শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে আলোকিত করেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকে, তৈরি করেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু, চালু করেছেন মেট্রোরেল, আকাশের বুকে উড়িয়েছেন শান্তির কপোতরূপী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, আর দৃশ্যমান করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এগিয়ে চলেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে।

সেই স্বপ্নের মূলমন্ত্র হয়েও পথ দেখাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, সেই পথে সহায়ক হয়ে কাজ করবে মুজিব আদর্শে উজ্জীবিত তরুণরা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন ও অনুপ্রেরণা জোগাবেন নারীরা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আর সমুদ্র অর্থনীতির উপযুক্ত ব্যবহার করে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং আঞ্চলিক শক্তি থেকে বিশ্বশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বঙ্গবন্ধুর দেখিয়ে যাওয়া পথই হোক আমাদের পথ, তার আদর্শই হোক আমাদের আদর্শ, তার শোকই হোক আমাদের শক্তি, তার ভালোবাসাই হোক আমাদের অনুপ্রেরণা।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। 

- আদম তমিজি হক, সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা