সংলাপ নয়, চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতিতে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৬ অক্টোবর ২০২৩

সংলাপ নয়, চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতিতে বিএনপি

এক দফা দাবি আদায়ে রাজধানীকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা নিচ্ছে বিএনপি। দেশব্যাপী সমাবেশ ও রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে রাজধানী ঢাকা মহানগরীকে এবার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চায় দলটি। এ জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনা ঘেরাও, গণ অবস্থান, হরতাল, অবরোধ এমনকি ‘অসহযোগ’-এর মতো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণার কথাও চিন্তাভাবনায় রয়েছে। ঢাকা মহানগরী (উত্তর ও দক্ষিণ) বিএনপিসহ আশপাশ জেলাগুলোর সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আগে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাবে না বিএনপি ও মিত্ররা।

দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সব ইউনিটের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও প্রায় শেষ। ১৮ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জনসভা থেকে ‘এক দফা দাবি’ মেনে নিতে সরকারকে আলটিমেটাম বেঁধে দেওয়ার কথা রয়েছে। নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শেষ ধাপের কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ মনোভাব থেকে সাধারণ মানুষের বড় অংশ বিরোধী দলের আন্দোলনকে সমর্থন করছে। এর সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি এবং পশ্চিমা দেশগুলোর পদক্ষেপ বিএনপির জন্য সহায়ক হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে এবার ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো একতরফা নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে বিএনপির এবার আন্দোলন পরিণতির দিকে যেতে পারে।

কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোডমার্চ ও সমাবেশ অনেক করেছি। আর কোনো রোডমার্চ নেই। এখন থেকে সব ঢাকায় হবে। রাজধানীতেই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। দুর্গাপূজার আগে আমরা কোনো কঠোর কর্মসূচিতে না গেলেও এর মধ্যে সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে না দিলে জনগণই সেই ক্ষমতা দখল করবে।’

দলটির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছেন, যেহেতু নভেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সময় বেশি নেই, ফলে তারা সংলাপ বা আলোচনার প্রশ্নে কোনো চিন্তা করছেন না। তাঁরা রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়কেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করে ফেললে ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি অস্তিত্বের সংকটে পরবে। এই পরিস্থিতির বিবেচনায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এই সরকারের অধীনে কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অবস্থানে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সে জন্য অক্টোবরের শেষেই ঢাকামুখী লংমার্চ বা অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা চলছে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এক দফার আন্দোলনে যাওয়ার আগেই সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো সংলাপে না বসার কথা বলেছিল।

এখন সংলাপের আর কোনো সুযোগ নেই।’ এরপরও মার্কিন প্রাক্‌–নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো তারা দলের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করবেন বলে মির্জা ফখরুল জানান।

বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ আবার মনে করেন, সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করে সংঘাত এড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু কখনো সংলাপ হলেও তা অর্থবহ হবে না বলে তাঁদের ধারণা।