নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৭ নভেম্বর ২০২২
কিউ, এম, সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে দাদন ব্যবসায়ীর দায়ের করা মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচতে দুজন ব্যবসায়ী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলা সদরের ইসলামী ব্যাংক এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলার উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের ভালাইন গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ইউপি মেম্বার ভূক্তভোগি শামীম হাসান।
লিখিত বক্তব্যে মেম্বার শামীম বলেন, তার প্রতিবেসী সোহেল রানাকে একটি এনজিও থেকে ঋণ তুলে দেয়ার সময় উপজেলা সদরের ভাড়াটিয়া মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে আবু নৈয়ম মো: মাসুম গ্যারান্টার হিসেবে মেম্বার শামীমের কাছ থেকে একটি ফাঁকা চেক নেন। সোহেল রানা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করলেও মেম্বার শামীমের চেক ফেরৎ না দিয়ে সেখানে ১০ লাখ ৮ হাজার টাকার অংক বসিয়ে তা ডিজঅনার করে কোর্টে মামলা (৩৭৪সি/২০১৯ মহা:) দায়ের করে। এছাড়া সোহেল রানার নামে ১২ লাখ ৮০ হাজার টাকার (৩২১সি/২০১৯) ও তার স্ত্রী শাহনারা খাতুনের নামে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকার (৩১৭সি/২০২৯ মহা:) পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করে।অপর ভূক্তভোগি খাজুর ইউনিয়নের কুঞ্জবন বাটুলতলী গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুল মতিন বলেন, মাসুম খাজুর ইউনিয়নের বিলমোহাম্মদপুর গ্রামের মকবুল হোসেন সরকারের ছেলে নুরুজ্জামান সরকারের নামে নওগাঁ মাল্টিপারপাস সোসাইটি নামক এনজিও থেকে ঋণ তুলে দেওয়ার সময় গ্যারান্টার হিসেবে আব্দুল মতিনের কাছ থেকে একটি ফাকা চেক নেন। পরবর্তীতে মাসুম সে চেকে এক কোটি দশ লাখ টাকার অংক বসিয়ে কোর্টে মামলা (৯৯৪সি/২০১৯ নওগাঁ) দায়ের করে। এই দুই মিথ্যা মামলায় জামিন নিয়ে কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে তারা নি:স্ব হয়ে পড়েছেন। মামলার ভয়ে তারা সারাক্ষণ তটস্থ থাকেন।
চেকের মামলা করেই মাসুম খান্ত হয়নি। বরং আব্দুল মতিনসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মারপিটের মিথ্যা অভিযোগে আরও একটি মামলা (১৩৮পি/২০২২ মহা:) দায়ের করে হয়রানী করে। মামলাটির তদন্ত রিপোর্টে মহাদেবপুর থানার এসআই বেলাল হোসেন উল্লেখ করেন যে, এনজিও থেকে ঋণ তুলে দেয়ার সময় আব্দুল মতিন গ্যারান্টার হিসেবে একটি ফাকা চেক দেন। মাসুম কৌশলে সে চেক নিয়ে আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। পরবর্তীতে মারপিটের মামলাটি নথিজাত হয়। আবু নৈয়ম মাসুমের মিথ্যা মামলার দায় থেকে বাঁচতে ভূক্তভোগিরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দাদন ব্যবসা বিরোধী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানতে চাইলে মোবাইলফোনে মাসুম জানায়, টাকা ঋণ দিয়ে ফেরৎ না দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু নৈয়ম মো: মাসুম মহাদেবপুরের স্থায়ী বাসিন্দা নয়। কখনো কুঞ্জবন, কখনো ঘোষপাড়া আবার কখনো বাজারে ভাড়া বাসায় থাকে। কখনো সে নিজেকে পত্নীতলা আবার কখনো সাপাহার উপজেলার বাসিন্দা বলে পরিচয় দেয়। ৬২সি/২০১৫ সাপাহার, ৮৫সি/১৫ সাপাহার, ২০৩সি/১৫ সাপাহার প্রভৃতি মামলায় বাদি মাসুম তার ঠিকানা সাপাহার শিমুলতলী, ৩৮৯সি/২১৮ মহা:, সিআর ৩৯১/২০১৮ মহা:, ৩৬৫সি/২০১৯ মহা:, ৩৭১সি/২০২০ মহা:, সিআর ৩২৬/২০২০ মহা: প্রভৃতি মামলায় মহাদেবপুর, আর বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের একটি পত্রে ফতেপুর, পত্নীতলা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে কৌশলে চেক সংগ্রহ করে একের পর এক মামলা করে আসছে সে। তার মামলার খপ্পরে পড়েছেন মহাদেবপুর, পত্নীতলা, সাপাহার, ধামইরহাটসহ কয়েকটি উপজেলার শতাধিক মানুষ। কোন কোন মামলায় অসহায় মানুষের জেল খেটেছেন আবার কেউ কেউ পলাতক রয়েছেন। এখনও তার দায়ের করা শতাধিক চেকের মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় টাকা দাবির পরিমাণ কয়েক কোটি। সে এত টাকার মালিক কিভাবে হলো, এসব টাকার আয়কর, ভ্যাট দেয়া হয় কিনা এসব নানা প্রশ্ন এখন মহাদেবপুরের ট্যক অব দ্য টাউন।
সাপাহার উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদিগুন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাসুমের দায়ের করা একটি মামলার (সিআর ১৬৪/১৬ ধাম) তদন্ত রিপোর্টে পত্নীতলা সার্কেলের তদানিন্তন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উল্লেখ করেন সাপাহার থানা এলাকায় মাসুমের জমজম ক্লথ স্টোর, জমজম ফিসারিজ এবং জমজম সমবায় সমিতি নামে একটি এনজিও ছিল। ওই এনজিওর সভাপতি হিসেবে ঋণ দানের সময়, চাকরি দেয়ার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ফাকা চেক নেন। এছাড়া সমিতির সদস্যদের নামে বিবিন্ন ব্যাংকে ভূয়া একাউন্ট খুলে নিজেই ভূয়া স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে চেক বই তুলে সেসব চেকে মোটা অংকের টাকা বসিয়ে ডিজঅনার করে কোর্টে মামলা দায়ের করে। মামলায় সাজাভোগের ভয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মিমাংশা করে নিরিহ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আদায় করাই তার প্রতারণার ধরণ। তার এ প্রতারণার পদ্ধতি এবং সাধারণ মানুষ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে হয়রানি অপরাধ বিজ্ঞানে নতুন অধ্যায়ের সংযুক্তি ঘটিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অসংখ্য মানুষকে কোন জামানত ছাড়াই কিভাবে মাসুম এত মোটা অংকের টাকা ঋণ দেয় তাও সন্দেহজনক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।