'বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন রাজনীতির কবি'

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৮ মার্চ ২০২৩

'বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন রাজনীতির কবি'

একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ! মার্চ মাসের শুরু থেকেই সারা দেশ অসহযোগ আন্দোলন, বিক্ষোভ-সংগ্রামে টালমাটাল। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের বঙ্গবন্ধু কবিতায় ধরা দিয়েছে একাত্তরের উত্তাল সেই সময়-মুজিবুর রহমান।/ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগ্নি-উগারী বান।/বঙ্গদেশের এ প্রান্ত হতে সকল প্রান্ত ছেয়ে,/জ্বালায় জ্বলিছে মহা-কালানল ঝঞ্ঝা-অশনি বেয়ে। বাংলাদেশ তখন চলছিল শেখ মুজিবের নির্দেশে।

রাজনীতির কবি প্রতিদিন রচনা করছিলেন বাংলাদেশ নামক মহাকাব্যের নতুন নতুন স্তবক! প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল ঘোষণা করলে সারা দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ঢাকা হয়ে ওঠে, প্রতিবাদে, ক্ষোভে উত্তাল মিছিলের শহর। একাত্তরের ১৫ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অকস্মাৎ ঢাকায় এলেন। ইতোমধ্যে ৭ মার্চে রেসকোর্সের জনসভায় রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে সেই ঐতিহাসিক ভাষণ।

স্বাধীনতার অমোঘ আহ্বান। ভাষণ নয়, যেন বাংলার মানুষের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষার এক অনন্য কবিতা! ঢাকায় এসে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে আলোচনার নামে সাজানো নাটকের অন্তরালে করলেন গভীর গোপন ষড়যন্ত্র। ১৬-২৪ মার্চ পর্যন্ত মুজিব-ইয়াহিয়া বেশক’টি বৈঠক চলার পর আলোচনা অমীমাংসিত রেখেই কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ ঢাকা ত্যাগ করেন ইয়াহিয়া।

আর ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পরিকল্পিত নীলনকশা অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনী শুরু করে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংস গণহত্যা। ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালির ওপর রাতের গভীরে চালায় অতর্কিত হামলা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পশ্চিম পাকিস্তানে।

জানা যায়, গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্টের (ইপিআর) ওয়্যারলেস সেটের মাধ্যমে পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেন থেকে গোপন ট্রান্সমিটার সেটের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা পাঠান। সেই রাতে বঙ্গবন্ধু তার সব সহকর্মী নেতাকে নিরাপদ অবস্থানে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন; কিন্তু তিনি থেকে যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের নিজ বাড়িতেই। গ্রেফতার বরণ করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অকুতোভয় এক মহান সংগ্রামী বীর। শত্রুর মুখোমুখি হতে কখনো পিছপা হননি। রাজনৈতিক জীবনে বহুবার গ্রেফতার হয়েছেন; কিন্তু কখনো আত্মগোপন করেননি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ২৫ মার্চের সেই ভয়াবহ রাতে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাননি।

দেশ ও মানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসা, মানবিকতা ও অসম সাহসিকতার অসামান্য ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয় করেছিলেন বাংলার ধনী-গরিব, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়।

তাই তো তিনি আমাদের মহান নেতা। তারই নেতৃত্বে স্বাধিকারের জন্য দীর্ঘ ২৩ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি আমরা। তারই আহ্বানে ১৯৭১ সালে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ, শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলেরা অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেছে। শত্রুর কাছে থেকে ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। এনেছে লাল-সবুজের পতাকার স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ তাই অবিচ্ছেদ্য।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। এসব ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যত ষড়যন্ত্র, অপচেষ্টাই হোক না কেন, তাকে কখনো বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।

তিনি ছিলেন আমাদের অবিসংবাদিত নেতা। তাই তো তিনি আমাদের জাতির পিতা। বাঙালির অন্তরের অন্তস্থলে রয়েছে তার অটল আসন পাতা। বাংলাদেশের সব্যসাচী লেখক কবি সৈয়দ শামসুল হক তার ‘আমার পরিচয়’ কবিতায় সে কথাই প্রকাশ করেছেন-

এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান?/যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;/তাঁর ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-/চোখে নীল আকাশ, বুকে বিশ্বাস, পায়ে উর্বর পলি।

বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজ ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। একই সঙ্গে বাংলাদেশ দিনটি উদযাপন করবে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও।

আজকের এইদিনে পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুর আগমনীতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু কে নির্মম হত্যার জন্য নিন্দা জানিয়ে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন আদম তমিজি হক।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর জন্ম। কালক্রমে তার হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান পায় আজকের বাংলাদেশ।

এই দিনে পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন শেখ মুজিব নামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।

দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন।

১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬ এর ছয়-দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বাঙালির জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর মাত্র ৫৪ বছরের জীবনের এক-চতুর্থাংশই কেটেছে কারাগারে; তার পুরো জীবনটাই ছিল বাঙালির জন্য নিবেদিত; সেজন্য ফাঁসির মঞ্চকেও তিনি ভয় পাননি। টুঙ্গিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এ মহানায়ক উঠে এসেছেন জাতীয় অঙ্গনে, দ্যুতি ছড়িয়েছেন বিশ্বমঞ্চে।

লেখক- আদম তমিজি হক