নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৮ নভেম্বর ২০২২
আগামী ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রাচীনতম দল আওয়ামী লীগের ২২ তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওই সম্মেলনেই ঠিক হবে আগামী তিন বছরের জন্য কারা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দেবেন। দলীয় সূত্র বলছে, এবারের সম্মেলন খুব একটা জাকজকমপূর্ণ হবে না। সাদামাটা ভাবেই অনুষ্ঠিত হবে ২২তম আসর।
আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক বাক্যে মেনে নেন দলের কাউন্সিলর-প্রতিনিধিরা । দু-একবার নিজ থেকে অবসরে যাওয়ার প্রস্তাব তুললেও দলের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনাকে ছুটি দিতে রাজি হননি। সুতরাং সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাই থাকছেন—এটা প্রায় নিশ্চিত। এই জন্য এবারও আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদটি।
আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টানা দ্বিতীয় মেয়াদে এই দায়িত্বে আছেন। এখন পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনায় যেটা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে সেটি হলো- এই মুহূর্তে ওবায়দুল কাদেরের বিকল্প খুঁজছে না দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
তিনি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন তাকেই আবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে পারেন শেখ হাসিনা। তাছাড়া আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসাবে তিনি ভালোই করছেন। তিনি এখন পর্যন্ত সফলতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
ওবায়দুল কাদের দলের প্রতিটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন কখনো স্ব-শরীরে কখনো ভার্চুয়ালি এবং তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের বুদ্ধিভিত্তিক ও দাঁতভাঙ্গা জবাবে তার জুরি নেই। যোগ্যতার দিক থেকেও তিনি দলের অন্যন্য নেতাদের তুলনায় এগিয়ে। সবকিছু মিলিয়ে তিনিই আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে- ওবায়দুল কাদেরের দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পিছনে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের ক্ষমতাসীন দলের জোড়ালো ভুমিকা ছিল, এবারও সেই ক্ষমতাসীন দলটি তাঁর জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে সুপারিশ করতে পারেন।
উল্লেখ, দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে তিনি এই প্রতিবেদকের সামনে বলেছিলেন ‘নেত্রী (হাসিনা) আমাকে আবারো দলের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন কারণ নেত্রী আসলে আমার বিকল্প খুঁজে পাননি। অন্যথায় আমি হতাম না’।
এদিকে ভেতরে-ভেতরে এক ডজনের মতো নেতা সাধারণ সম্পাদক পদের দাবিদার হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। করোনা মহামারির মধ্যে দীর্ঘদিন দৃশ্যত বাইরে না আসা ওবায়দুল কাদেরের এই রাজনৈতিক তৎপরতা আশা যোগাচ্ছে তাদের ।
গত দুই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাকের নামও আলোচনায় ছিল। এর বাইরে সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী আরও কয়েকজন নেতা নানাভাবে সক্রিয় আছেন। তাঁরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। কেউ কেউ দলের বিভিন্ন জেলার বিভেদ মেটাতে উদ্যোগী ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ, দীপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
নতুন করে আলোচনায় যুক্ত হয়েছেন দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ ও মির্জা আজম। এর বাইরে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে আর সাধারণ সম্পাদক ঠিক করেন সভাপতি নিজেই। এবার কে হতে পারেন সাধারণ সম্পাদক—এ বিষয়ে দলীয় সভাপতি এখন পর্যন্ত তাঁর মনোভাব প্রকাশ্যে বা ঘনিষ্ঠ নেতাদের কাছে প্রকাশ করেননি। সাধারণত তিনি জাতীয় সম্মেলনের তিন থেকে সাত দিন আগে বিষয়টি খোলাসা করেন। এবারও এমনটাই হওয়ার কথা।