কী এমন ঘটল যে তাঁরা এখন ভয় পাচ্ছেন, একটা খাদ্যসংকট দেখা দেবে?’ প্রশ্ন ফখরুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৯ অক্টোবর ২০২২

কী এমন ঘটল যে তাঁরা এখন ভয় পাচ্ছেন, একটা খাদ্যসংকট দেখা দেবে?’ প্রশ্ন ফখরুলের

প্রধানমন্ত্রী কেন বারবার দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন, সেটা তাঁরাও বুঝতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘(প্রধানমন্ত্রী) কেন বলছেন, সমস্যাটা তো আমরাও বুঝতে পারছি না। কারণ, উনারা কিছুদিন আগেও দাবি করেছেন যে তাঁরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছেন। আজকে কী এমন ঘটল যে তাঁরা এখন ভয় পাচ্ছেন, একটা খাদ্যসংকট দেখা দেবে?’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। সংলাপ শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রী কেন বারবার খাদ্যসংকট ও দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন? জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব যোগ করেন, ‘মূল বিষয়টা যে জায়গায়, এত বেশি দুর্নীতি সবখানে, প্রতিটি খাতে, প্রতিটি ক্ষেত্রে, তাদের এখন এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সবখানে এত বেশি দুঃশাসন হয়েছে, মিস রুল হয়েছে যে নাথিং ইজ আন্ডার দেয়ার কন্ট্রোল। যে কারণে বিদ্যুতের সমস্যাটা তৈরি হয়েছে। তারা এখন বিদ্যুৎ দিতে পারছে না।

এ প্রসঙ্গে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের জন্য বাড়ি তৈরির বিষয় উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘৮ হাজার কোটি টাকায় ইভিএম কিনতে যাচ্ছে একটা জালিয়াতির ভোট করার জন্য। অন্যদিকে, ৪৩ কোটি টাকা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদের সচিব ও মুখ্য সচিবের জন্য বাড়ি তৈরি করা হবে। আপনি কি আশা করেন, এটা অবিশ্বাস্য একটা ঘটনা। এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রে, একটা-দুইটা নয়—আজকে প্রতিটি খাতে এ রকম দুর্নীতি হচ্ছে। সে জন্যই আজকে তারা এ অবস্থায় উপনীত হয়েছে।’

এ সময় বিএনপির মহাসচিব বিমানবন্দর সড়কে প্রতিদিনকার যানজটের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আজকের একটা কথা বলি, সকাল ৯টায় বাসা (উত্তরা) থেকে বের হয়েছি। এ পর্যন্ত (গুলশান-২ নম্বর) আসতেই আমার দুই ঘণ্টা লেগেছে। তারপরও পুরোটা আসতে পারিনি, আমাকে রিকশা নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের পেছন দিয়ে আসতে হয়েছে গাড়ি রেখে দিয়ে। ১০ বছর ধরেই জনগণকে এই ভোগান্তি দিচ্ছে। অর্থাৎ তাদের কোথাও কোনো ম্যানেজমেন্ট নেই, প্রশাসনের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে গেছে।’

‘কয়েকটি সমাবেশ করলেই সরকার পড়ে যাবে, এমনটি যাঁরা ভাবেন, তাঁরা বোকার স্বর্গে বাস করছেন’—আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির মহাসচিব এটাকে সরকারির দলের ‘আতঙ্ক’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পর ময়মনসিংহে জনতা ঢলের মতো নেমেছে। ময়মনসিংহে কারফিউয়ের মতো অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এমনকি বর্ষীয়ান নেতা নজরুল ইসলাম খান যে হোটেলে ছিলেন, সেখানে তারা গুলিবর্ষণ করেছে, ককটেল নিক্ষেপ করেছে। তারপরও তারা কোনো বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি।

সমাবেশের পরদিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘উল্টো দেখেন, পুলিশকে ব্যবহার করে তারা ৪০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এভাবে দমন করে, গুলি করে, হত্যা করে, গুম করে কোনো দিনই ক্ষমতায় থাকা যাবে না, যতই তারা চেষ্টা করুক।’

এর আগে বেলা ১১টায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও দুপুর ১২টায় এনডিপির নেতাদের সঙ্গে গুলশানের কার্যালয়ে পৃথক সংলাপ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান।

সংলাপ শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আলোচনার মাধ্যমে কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছি, এ সরকারের পতনে লক্ষ্যে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দেশের সব বিরোধী দলের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন করব।’