নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৯ অক্টোবর ২০২২
মোকছেদুল মুমীন : পানির অপর নাম জীবন। এই কথাটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। খাবার ছাড়া জীবনধারণ করা কষ্টকর, কিন্তু পানি ছাড়া জীবন ধারণ করা অসম্ভব। সুস্থতা ও রোগ প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের শরীরে প্রতিদিন পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শরীর সুস্থ ও কর্মময় রাখার জন্য সুষম খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে।
বিশুদ্ধ পানির সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র (ফিল্টার) স্থাপিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখরের নিদের্শনায় এই ফিল্টারগুলো স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এরমধ্য দিয়ে নিরাপদ ও সুপেয় পানির আওতায় এলো নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ পানির দাবিটিও পূরণ হলো।
খাদ্যের ছয়টি উপাদান-এর মধ্যে একমাত্র পানিই হচ্ছে ক্যালোরি বিহীন খাদ্য উপাদান। যা আমাদের শরীরে ক্যালরির মাত্রা ও পুষ্টির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক কর্মময় জীবন যাপনের জন্য ক্যালরি বিহীন খাদ্য উপাদানটি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করার পাশাপাশি শরীরের ইন্টারনাল অর্গানগুলোর সুস্থ ও সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্য বিশুদ্ধ পানি পানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের পানির চাহিদা হচ্ছে ৮ থেকে ১০ গ্লাস বা ২ থেকে ৩ লিটার। তবে প্রয়োজন ভেদে কমবেশি হতে পারে। তবে দৈনিক ৮ গ্লাসের নিচে পানি পান করা উচিৎ নয়। আর সে পানি হতে হবে অবশ্যই বিশুদ্ধ। পানি বিশুদ্ধ না হলে পানি বাহিত বিভিন্ন ধরণের রোগ দেখা দিতে পারে শরীরে। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য আমাদের প্রত্যেকের চাহিদামত বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ পানি পানির অভাবে অনেক রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডায়েরিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ও জন্ডিসসহ অনেক পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব হয় দূষিত পানির কারণে।
তিনি বলেন, শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে পানির ভূমিকা অপরিসীম। পানি আমাদের হজমশক্তি বাড়ায় ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে। পানি রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু শরীর পানিশূন্য হয়ে গেলে অনেক ধরণের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট এর ইমব্যালেন্স হতে পারে। কিডনীতে সমস্যা হতে পারে। তাই বিশুদ্ধ পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করলে আমাদের পিপাসা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের পানিশূন্যতাও দূর হয়। ফলে শারীরিক ক্লান্তি দূর হয় এবং শক্তিও ফিরে আসে। পানি রক্ত ও রক্ত কণিকায় অক্সিজেন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। যার দরুন আমরা সুস্থ ও স্বাভাবিক কর্মময় জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হই।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসূত্রে জানা গেছে, পানির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মোট ৬৫টি ফিল্টার স্থাপিত হয়েছে। এরমধ্যে অগ্নিবীণা হলে ৫টি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২২টি, দোলনচাপা হলে ৫টি ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব হলে ১টি ফিল্টার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া লাইব্রেরি, পরীক্ষার হল, মসজিদ, ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে কমপক্ষে একটি করে পানি বিশুদ্ধকরণ যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। সরবরাহকৃত এসব ফিল্টার পাঁচস্তরে পানির ফিল্টার করে থাকে বলে জানিয়েছে এর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এপেক ওয়াটার টেকনোলজি।
এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম বলেন, নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ে স্থাপিত ফিল্টার উন্নতমানের যা বাইরে থেকে আমদানি করা হয়েছে। এটি খুব সহজেই দেওয়ালে ঝুলানো যায়। পানি বিশুদ্ধকরণে ফুটানোর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। বিদ্যুৎ ও গ্যাস দিয়েও এটি পরিচালনা করতে হয় না। এই যন্ত্র খুব সহজেই পানিতে থাকা ক্লোরিন, ফ্লুরাইড, ক্ষুদ্রকণা, বেরিয়াম, ক্রোমিয়াম, লেদ, মার্কারী, ক্যাডমিয়ামের মতো পানিতে মিশে থাকা ক্ষতিকারক পদার্থকে খুব সহজেই পৃথক করে। দামেও তুলনামূলক সাশ্রয়ী।
ক্যাম্পাসঘুরে দেখা যায় ইতোমধ্যেই ফিল্টারগুলো স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছে। অগ্নিবীণা হলের প্রভোস্ট কল্যাণাংশু নাহা বলেন, মাননীয় ভিসি স্যারের উদ্যোগে গোটা ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যে পাইলট প্রজেক্ট আকারে ক্যাম্পাসের অগ্নিবীণা হলে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে ৫টি ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছিল। তাতে সফলতা পাওয়ায় পরে পুরো ক্যাম্পাসে চাহিদাকৃত ফিল্টার স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দারুণ খুশি।
বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, স্থাপিত পানির ফিল্টারগুলো থেকে শিক্ষার্থীরাসহ সকলেই নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবে। পানিবাহিত রোগবালাই প্রতিহত করা যাবে। বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব অনুধাবন করে স্থাপিত পানির ফিল্টারগুলো রক্ষণাবেক্ষনে আমাদের সকলেরই আন্তরিক ও যতœবান হতে হবে।