নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৯ অক্টোবর ২০২৩
বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এখন মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) পঙ্কজ নাথ। গতকাল বুধবার মেহেন্দীগঞ্জে উপজেলার উলানিয়া ইউনিয়নে সড়কসহ কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় পঙ্কজ নাথ এমন মন্তব্য করেন। আজ দুপুরে উলানিয়া বাজার এলাকায় এ অনুষ্ঠান হয়।
এ সময় পঙ্কজ নাথ বলেন, এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মহিউদ্দীন আহম্মেদ বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর ঢাকায় এমপি হোস্টেলে হাঁসের মাংস ও খিচুড়ি খেয়ে আমোদ-ফুর্তি করেছেন। আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য এর সাক্ষী।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মহিউদ্দীন আহম্মেদের সহযোগীরা মেহেন্দীগঞ্জে ও বরিশালে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেছেন। এখন তাঁরাই মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগ করছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মহিউদ্দীন আহম্মেদের মেয়ে শাম্মী আহম্মেদ বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। তাঁর বড় ছেলে সাহাব আহম্মেদ মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী শাম্মী আহম্মেদ। শাম্মী আহম্মেদ কয়েক দিন ধরে এলাকায় অবস্থান নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। তিনি আজ বিকেলেও হিজলা-গৌরবদী ইউনিয়নের একতা বাজারে একটি সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন।
এর আগে গত সোমবার বিকেলে হিজলার কাউরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে কর্মী সমাবেশ হয়। সেখানে হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ এবং সাংগঠনিক উপজেলা কাজীরহাটের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা এমপি পঙ্কজের নানা সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। ১০ বছরে এলাকায় তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করায় আগামী নির্বাচনে এখানে শাম্মী আহম্মেদকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। ওই কর্মিসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শাম্মী আহম্মেদ।
শাম্মী আহম্মেদের কর্মী সমাবেশের দুই দিন পর পঙ্কজ নাথ আজ তাঁর বাবাকে নিয়ে মন্তব্য করেন। পঙ্কজ নাথ বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মহিউদ্দীন আহম্মেদ। ক্ষমতা পেয়ে তিনি ওই সময় বরিশাল শহরে হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের বাড়ি দখল করেছিলেন। ঢাকায় বাবর রোডে এক বিহারির বাড়ি দখল করেছিলেন। এ জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁকে ওই সময় গভর্নর করেননি। এতে মহিউদ্দীন আহম্মেদ বঙ্গবন্ধুর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন পঙ্কজ।
পঙ্কজ নাথ আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর মহিউদ্দীন আহমেদ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে বরিশালে এসে মেহেন্দীগঞ্জের আওয়ামী লীগের পক্ষের নেতাদের থানায় ঝুলিয়ে পিটিয়েছেন। তাঁর লোক কামাল খানসহ (বর্তমানে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র) অন্যরা মেহেন্দীগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভেঙে উল্লাস করেছিলেন। এখন পুনরায় তাঁরা একত্র হয়েছেন আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। তবে তাঁদের এ ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে।
এসব বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ সন্ধ্যায় পঙ্কজ নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মেহেন্দীগঞ্জ আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধুর খুনির সমর্থদের কাছ থেকে মুক্ত করতে চাই।’ এ সময় এসব বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন।
শাম্মী আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুনেছি। তবে এসব নোংরা ও জঘন্য মিথ্যাচারের ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বরিশালের মানুষ জানে আমার বাবা কে ছিলেন, তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা কী ছিল।’
পঙ্কজ নাথের অভিযোগ প্রসঙ্গে কামাল উদ্দিন খান বলেন, এলাকায় দল ও জনগণ এখন আর তাঁকে (পঙ্কজ নাথ) চায় না। তাই উনি এখন দিকশূন্য হয়ে নানা বেফাঁস মন্তব্য করছেন। এর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কামাল খান বলেন, তিনি গত ১০ বছরে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্মম অত্যাচার করেছেন। দুটি উপজেলা ও আটটি ইউনিয়নের দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করিয়েছেন। গত ১০ বছরে তাঁর অন্যায়-অত্যাচারে ১১ জন খুন হয়েছেন। এখন এসব চাপা দিতে এমন অলীক মন্তব্য করছেন।
মহিউদ্দীন আহম্মেদের ছেলে সাহাব আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহিউদ্দীন আহম্মেদ কেমন নেতা ছিলেন, সেটা এ অঞ্চলের মানুষ জানেন। আমার বাবাকে পাকিস্তানি সরকার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ায় তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনি গুরুতর হাঁপানির রোগী ছিলেন। একজন হাঁপানির রোগী কি হাঁসের মাংস খেতে পারেন? আর তিনি যদি এটা করতেন, তাহলে এত দিন এসব কথা কেউ কি বলত না? তাহলে কি দলীয় সভানেত্রী আমার বোনকে তিনবার দলের সম্পাদকমণ্ডলীর পদ দিতেন? এটা কতটা হাস্যকর ব্যাপার হতে পারে যে যাঁকে দল শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে সব পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে, তিনি কিনা এখন এসব কাল্পনিক গল্প শোনাচ্ছেন।’
দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পঙ্কজ নাথকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে পঙ্কজের কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে পঙ্কজ নাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর তাঁকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। তিনি তাঁর জবাব দিয়েছেন এবং একই সঙ্গে তাঁর ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত বাতিল চেয়ে একটি আবেদনও করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের অক্টোবরে পঙ্কজ নাথ ও আবেদনকারী শতাধিক নেতা-কর্মীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন আর দলীয় কার্যক্রমে আর কোনো বাধা নেই। সুত্র- প্রথম আলো