পৌর মেয়রকে ‘কোপানো’র নির্দেশ এমপির

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২০ জুলাই ২০২২

পৌর মেয়রকে ‘কোপানো’র নির্দেশ এমপির

মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র কামাল খানকে ‘কুপিয়ে জখম’ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে। থানার পুলিশ পরিদর্শকের (তদন্ত) মোবাইল নম্বরে কল করে সংসদ সদস্য তা জানিয়ে দেন।

ইতোমধ্যে ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে খোদ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ঢাকা পোস্টের কাছে ওই অডিও এসে পৌঁছেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, গত ৪ জুলাই পংকজ নাথের অনুসারীরা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতুল চৌধুরীকে কুপিয়ে দুই হাতের রগ কেটে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালনের জন্য রাতুলের অনুসারীরা ৫ জুলাই পৌর ভবনের সামনে জড়ো হন। খবর পেয়ে সেখানে ফোর্সসহ উপস্থিত হন মেহেন্দীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামান। তখন পরিদর্শককে এমন নির্দেশনা দেন সংসদ সদস্য।

সংসদ সদস্য ও পুলিশ পরিদর্শক তৌহিদুজ্জামানের ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে সংসদ সদস্য পংকজ নাথকে বলতে শোনা যায় :

পংকজ নাথ : তুমি কোথায় এখন?
পরিদর্শক (তদন্ত) : স্যার, আদাব স্যার।
পংকজ : আদাব, ভালো আছেন? হ্যাঁ।
পরিদর্শক : জি স্যার। স্যার।
পংকজ : আপনি কোথায় এখন? থানায় না, বাইরে?
পরিদর্শক : স্যার, আমি পৌরসভার সামনে আছি স্যার।
পংকজ : যা হইছে হইছে। ওই শালায় তো খারাপ। ওরা মারামারি করলে আমাগো লোকজনরে কইয়া দিছি রামদা লইয়া ওপেন মিছিল করতে। কামাল খানরে শুইদ্ধা কোপাইবে...ফাইজলামি করলে কিন্তু কামাল খান (পৌর মেয়র) কোপ খাইবে। আমি কইয়া দিছি...কেমন?
পরিদর্শক : আচ্ছা স্যার, দেখি।
পংকজ : সিদ্ধান্ত হইছে মেয়র সামনে পড়লে মেয়ররে কোপাইব। যে সামনে পড়বে, তারেই কোপাইব। কেমন?
পরিদর্শক : আচ্ছা স্যার, দেখি স্যার। আমরা আছি স্যার, বাইরে আছি।
পংকজ : ওসি কই? ওসি কই?
পরিদর্শক : ওসি স্যার বরিশাল আছে, স্যার।
পংকজ : যে কোপ খাইছে (পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতুল চৌধুরী) ওইডা খারাপ। নেশাখোর, অ্যাডিক্টেড...তাই না? এ নিয়া যেন মাতবরি না করে, বাড়াবাড়ি না করে...আমি পোলাপানরে রেডি হইতে কইছি। তোরা রেডি হ...যা আছে কপালে...যুদ্ধ হইয়া যাইব একটা।


(ভাষারীতি ও বিধির কারণে কিছু শব্দের বানান সংশোধন করা হয়েছে)

এ বিষয়ে মেহেন্দীগঞ্জ পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল খান বলেন, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি ডিআইজি, পুলিশ সুপার এবং থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, এমপি তো, আমরা একটু খোঁজ নিয়ে দেখি। এটা আমার প্রতি তার (এমপি) একটা ক্ষোভ। আমি আওয়ামী লীগ সংগঠনকে ধরে রেখেছি তো, এটা এমপির সহ্য হচ্ছে না।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, অডিও ক্লিপের কণ্ঠস্বর এমপি পংকজের। সংসদ সদস্যের এমন নির্দেশনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। দলের কর্মী নয় শুধু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ যাদের কোপানোর নির্দেশনা তিনি (এমপি পংকজ নাথ) দিয়েছেন, এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। এতে প্রমাণিত হয়েছে, দলের প্রতি তার কোনো দরদ নেই।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ বলেন, আমি রাজনীতি করি। কখন কাকে কী বলি তা ঠিক নেই। এ জন্য বলতে পারব না কল রেকর্ডিংটা আমার কি না! তবে যে অফিসটার বিষয়ে বলেছি, সেটি হয়ে গেছে অপরাধীদের আখড়া। ওখানে নেশাখোর অ্যাডিক্টেট দখলে নিয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাহস করে কাউকে না কাউকে তো কথা বলতেই হবে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে বিগত এক দশকে কমপক্ষে ৯ জন নেতা খুনের ঘটনা ঘটেছে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। আর শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়েছেন শতাধিক নেতা-কর্মী।