নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশের আস্থা নেই: ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২০ আগস্ট ২০২২

নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশের আস্থা নেই: ইসি

বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশের আস্থা নেই। এমন পরিস্থিতিই নিজেদের জন্য বড় সংকট ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি যে খসড়া কর্মপরিকল্পনা ঠিক করছে, তাতে এই চ্যালেঞ্জের কথা নিজেরাই উল্লেখ করেছে।

অবশ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপায়ও খুঁজছে ইসি। তবে শেষ পর্যন্ত ইসি দলগুলোর আস্থা কতটা অর্জন করতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে শিক্ষাবিদ, দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাংবাদিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। তখন ইসি বলেছিল, সংলাপে আসা প্রস্তাব ও সুপারিশগুলোর ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।

ইসি সূত্র জানায়, সে কর্মপরিকল্পনার একটি খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনাররা খসড়া পর্যালোচনা করছেন। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে এই খসড়া চূড়ান্ত করা হতে পারে। কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আবার সংলাপে বসার কথা ভাবছে ইসি। অবশ্য সে সংলাপ হবে অনেকটা কর্মশালার মতো। একসঙ্গে অনেক দল ও অংশীজনদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেখানে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে অংশীজনদের মতামত ও পরামর্শ নেওয়া হবে।

এর আগে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনও একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘রোডম্যাপ’ (কর্মপরিকল্পনা) ঘোষণা করেছিল। অবশ্য তখন মূলত আইন ও বিধি সংস্কারসহ কিছু রুটিন কার্যক্রম ইসি কবে নাগাদ শেষ করবে, তার রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল। ইসি সূত্র জানায়, এবারও কমিশনের নির্দেশে ইসি সচিবালয় গতবারের রোডম্যাপের আলোকে একটি খসড়া রূপরেখা দিয়েছিল। তবে তা গ্রহণ করেনি ইসি। কারণ, সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী, সে বিষয়ে কিছু ছিল না। এরপর একজন নির্বাচন কমিশনারকে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসির প্রতি আস্থার সংকটের পাশাপাশি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার, ভোটের সময় মাঠ প্রশাসনে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা, ভোটার ও প্রার্থীর এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বেশ কিছু বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইসি।

এখন পর্যন্ত ইসির নেওয়া পদক্ষেপে আস্থা অর্জিত হতে পারে—এমন কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। ইসি তাদের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারছে না।
বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন
নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেন, নির্বাচনের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো কী, তা নির্ধারণ ও বিশ্লেষণের পর সেগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে বিষয়ে এখন চিন্তাভাবনা চলছে। শেষ পর্যন্ত এই কমিশন পূর্ণ আস্থা অর্জনে সক্ষম হবেন বলে তিনি আশাবাদী। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে চায় ইসি।

তবে এখন পর্যন্ত বিরোধী দলগুলোকে আস্থায় আনতে পারেনি ইসি। বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা দুটি প্রশ্নবিদ্ধ জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচনী ব্যবস্থা ও ইসির প্রতি বিভিন্ন দল ও ভোটারদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। নতুন ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলে আসছেন, আস্থা অর্জনই এই কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন কমিশনারদের মুখেও বিষয়টি একাধিকবার এসেছে।

গত ৩১ জুলাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, অতীতের অনেক নির্বাচন নিয়েই সমালোচনা বা তর্ক-বিতর্ক হলেও ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের যে সমালোচনা হচ্ছে, সেটিও তীব্র, তিক্ত।

ওই দিন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছিলেন, ইসির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। অংশীজনসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে হবে।