ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশ কাল : পটপরিবর্তনের আশায় বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২১ জুলাই ২০২৩

ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশ কাল : পটপরিবর্তনের আশায় বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিজেদের অস্তিত্ব পুনরুদ্ধারের মিশন হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। বিগত দুটি নির্বাচন এক তরফা হওয়ার পর তৃণমুল নেতাকর্মীদের ধরে রাখতে এই নির্বাচনকেই টার্গেট করা হয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন আয়োজনে সরকার অনড় থাকলেও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে তাদের নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধ্য করা হবে। তাদের ধারাবাহিক আন্দোলন সেদিকেই যাচ্ছে।

বিএনপির জেষ্ঠ্য নেতারা বলছেন,আওয়ামী লীগের বিগত দেড় দশকের দুর্নীতি ও শোষণ-নির্যাতনে সারা দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের দ্রব্যমূল্যের সিমাহীন উর্ধগতি মানুষের মধ্যে ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচীতে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরছে। ফলে নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু হলেই বিএনপির মসনদ নিশ্চিত।

দলীয় সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাম্প্রতিক কর্মসূচী নিয়ে এমনিতেই সরকারের মধ্যে অশ্বস্তি রয়েছে। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং অংশগ্রহনমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যে তারা যে ফর্মুলা দিয়েছে সেটি মূলত বিএনপিরই দাবি। এতোদিন বিএনপি এ বিষয়টি বলে আসলেও তাতে বিন্দুমাত্র কর্নপাত করেনি সরকার। তবে এবারের কূটনৈতিক চাপ তাদের জন্য উপেক্ষা করা সহজ হবে না।

যদিও গতকাল দলীয় সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তারা সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করবেন। এ ক্ষেত্রে বন্ধু রাষ্ট্রগুলো কে কি বললো সেটি আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। নির্বাচন অংশগ্রহনমূলকই হবে তবে সেটি অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে।

তবে ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরও সকরার বহির্বিশ্বের চাপ সামলে পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করেছে। তবে এবারের নির্বাচন তার থেকে ব্যতিক্রম হবে। কেননা বিগত নির্বাচনে ভারত যেভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভূমিকা রেখেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শক্ত অবস্থানে থাকায় সেটি সম্ভব হবে না। উপরন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারনে পশ্চিমাদের চাপ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে এবারের নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনেই হবে- এমন বদ্ধমূল ধারণা পোষণ করেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক চাপ এবং গণ আন্দোলন উপেক্ষা করে এবছর আর আওয়ামী লীগের পক্ষে একতরফা নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে বিএনপিই সরকার গঠন করবে।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী অ্যানী ডেইলি মেসেঞ্জারকে বলেন, সরকার মুখে যতই বলুক এবার আর তাদের শেষ রক্ষা হবে না। বিএনপির আন্দোলন এখন এদেশের গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। এদেশে আর পাতানো নির্বাচন হবে না। জনগণের চাপে নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং বিএনিপই সরকার গঠন করবে।

এদিকে বিএনপির ঢাকা সমাবেশের পর আজ শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তারুণ্যের সমাবেশ। দলটির পক্ষ থেকে এই সমাবেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারন হিসেবে দলটির নেতারা বলছেন, দেশের ৪ কোটি ৭০ লাখ তরুন জন্মের পর কোনো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে কাছে টানতেই তারা বিভাগীয় শহরগুলোতে তারুণ্যের সমাবেশে করেছে।
এ বিষয়ে সমাবেশের আয়োজক জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজকে নতুন ইতিহাস রচিত হবে। অধিকার বঞ্চিত তরুনার এ সমাবেশকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তারা সরকার ও পুলিশ বাহিনীর চক্রান্তের বিপরীতে এই সমাবেশ সফল করে সরকারের পতনকে তরান্বিত করবে।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, চলতি মাসের মধ্যে এ ধরনের সমাবেশ শেষ করে আগামী মাসেই সরকার পতনের নতুন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামবেন তারা। গণআন্দোলন গড়ে তুলে যে কোনো মূল্যে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য।
কারন হিসেবে তারা বলছেন, বিগত দেড়দশক ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে রয়েছে। দলের সিংহভাগ সিনিয়র নেতার এবারের নির্বাচনই হতে পারে শেষ নির্বাচন। তাই যে কোনো মূল্যে তারা পরিবর্তন চান। এজন্য কূটনৈতিক চাপকে তারা সহায়ক শক্তি হিসেবে দেখছেন।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই সুরে কথা বলছেন। সরকার বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকার পতন আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার যে আন্দোলন হবে সেটাই চূড়ান্ত আন্দোলন। তিনি বলেন, এবারের চূড়ান্ত আন্দোলনে দেশের সব মানুষ অংশ নেবে এবং তাদের অধিকার আদায় করেই ঘরে ফিরবে।