নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৩ অক্টোবর ২০২২
আশরাফুল আলম সাঈদ (যিনি হিরো আলম নামে অধিক পরিচিত) একজন বাংলাদেশী সঙ্গীত ভিডিও মডেল, অভিনেতা, গায়ক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত ব্যক্তি। আজ তার ৩৮তম জন্মদিন। আশরাফুল আলম সাঈদ ১৯৮৫ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুর রাজ্জাক, মা আশরাফুন বেগম।
হিরো আলম প্রথম দিকে নিজ গ্রাম এরুলিয়ায় সিডি বিক্রির কাজ করতেন এবং পরবর্তীতে স্যাটেলাইট টিভি সংযোগের (ক্যাবল পরিচালনা) ব্যবসায় নামেন। ক্যাবল সংযোগের ব্যবসা চলাকালে শখের বশে তিনি সঙ্গীত ভিডিও নির্মাণ শুরু করেন।
আশরাফুল আলমের ইউটিউবে আপলোড করা সঙ্গীত ভিডিও নিয়ে ২০১৬ সালের দিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরা ট্রল এবং মিম তৈরি শুরু করলে দ্রুতই তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন।এসময় মুশফিকুর রহিমসহ আরও বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তারকা আশরাফুল আলমের সাথে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
এরপর বিবিসি হিন্দি, জি নিউজ, এনডিটিভি, ডেইলি ভাস্কর, মিড-ডেসহ ভারতের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলো তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।ফলে তিনি ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে আলোচিত হন।ইয়াহু ইন্ডিয়ার এক জরিপ অনুসারে সেসময় ভারতীয় অভিনেতা সালমান খানের চেয়ে আলমকে বেশিবার গুগলে অনুসন্ধান করা হয়েছে।
১১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে আশরাফুল আলম অভিনীত প্রথম ছবি মার ছক্কা মুক্তি পায়।২০১৮ সালে তিনি বিজু দ্য হিরো নামে একটি বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।এছাড়া বাংলাদেশে বেশকিছু বিজ্ঞানপনচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নিয়ে আবার আলোচনায় আসেন। ২০১৮ সালের গুগল অনুসন্ধানের প্রবণতায় বাংলাদেশে দশম অবস্থানে থাকেন হিরো আলম।
১৬ অক্টোবর ২০২০ মুক্তি পায় হিরো আলমের দ্বিতীয় সিনেমা ‘সাহসী হিরো আলম’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন এ আর মুকুল নেত্রবাদী আর প্রযোজনা করেন হিরো আলম নিজেই। হিরো আলমের বিপরীতে অভিনয় করেন তিন নায়িকা সাকিরা মৌ, রাবিনা বৃষ্টি ও নুসরাত জাহান। পরে তিনি গান গাওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করেন ও তার প্রথম গান ছিল “বাবু খাইছো”।
এরপর তিনি বেশ কিছু গান ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছাড়েন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কয়েকটি রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুলগীতি। তবে রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুলগীতি ছাড়ার পর তার বিরুদ্ধে এগুলো বিকৃত করে গাওয়ার অভিযোগ ওঠে।২০২২ সালের ২৭ জুলাই, বাংলাদেশে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা হিরো আলমকে তাদের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে যায়। পরে কখনও অনুমতি ছাড়া পুলিশের পোশাক পরবেন না, বিকৃত করে রবীন্দ্র ও নজরুল সঙ্গীত গাইবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
ছাড়া পেয়ে হিরো আলম বাংলাদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে তার প্রতি মানসিক নির্যাতন ও অশোভন আচরণ করার অভিযোগ আনেন। হিরো আলমের উক্তি অনুসারে পুলিশ তাকে বলে যে, “তোর চেহারা কি হিরোর মতো? আয়নায় একবার নিজের চেহারা দেখেছিস? হিরোদের চেহারা কেমন হয় সিনেমায় দেখিস না? তোর হিরো আলম নাম পরিবর্তন করবি”।
পরে হিরো আলমকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গান গাইতে নিষেধ করায় গোয়েন্দা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়। এছাড়া নাম থেকে ‘হিরো’ শব্দটি বাদ দেওয়া ও চেহারা নিয়ে তাচ্ছিল্য করার বিষয়টিকে অনেকে বর্ণবাদী আচরণ বলে আখ্যায়িত করেন।বিষয়টি বিবিসি, এএফপি-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরও খবর হয়।