বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের জন্মদিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২২ অক্টোবর ২০২৩

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের জন্মদিন আজ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্নেহধন্য, ’৬৯-এ পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত ছাত্রনেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সংসদ, সাবেক শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী, ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদর আজ ৮১তম জন্ম দিন।পরিবারের বা প্রিয়জন অনেকের কাছে তিনি প্রিয় আদরের তোফু হিসাবেই পরিচিত। শুধু দ্বীপজেলা ভোলাই নয়, সারা বাংলাদেশেই এক নামে যাকে সকলে চিনেন। শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন, সকলে ভালোবাসেন।

১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলা সদরের দক্ষিন দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে তার জন্ম হয়। তার পিতা মৌলোভি আজহার আলী এবং মা ফাতেমা খানম ছিলেন এলাকার সম্মানীত ব্যাক্তিত্ব। তার পিতা একজন ১৯৬০ সালে ভোলা সরকারী হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।
বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে আইএসসি পাস ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করেন।

কলেজ জীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃত্ত ছিলেন। ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক পদে এবং কলেজের হোস্টেল অশ্বিনী কুমার হলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৬২ সনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ১৯৬৪তে ইকবাল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) হল ছাত্র-সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৬৫তে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহ-সভাপতি, ১৯৬৬-৬৭তে ইকবাল হল ছাত্র-সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সন পর্যন্ত তিনি ডাকসুর ভিপি থাকাকালীন ৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।

১৯৬৬-এর ৮ মে থেকে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সকল রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলায় তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৬৮-৬৯-এ গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করেন।

ওই সময়ে তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় শিরোনাম হয়, তোফায়েল দি গভর্নোর অব ইষ্ট পাকিস্তান।” ওই সময়ে ইকবাল হলের ৩১৫ নাম্বার রুমের সামনে দেশী বিদেশী সাংবাদিকগন তার বক্তব্য নিতে অপেক্ষা করতে আন্দোলনের কর্মসূচী জানার জন্য। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভার সভাপতি হিসেবে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে গণজোয়ারে জাতির জনককে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ভোলা দৌলতখান-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে অংশ নিয়ে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চল ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে ১৪ জানুয়ারি তারিখে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৭০-এ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮,২০১৪এবং ২০১৮সনের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সর্বমোট ৮ বার তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তিনি শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় ̄স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।