লেবুর হালি ৮০, শশার কেজি ৮০ এবং বেগুনের কেজি ১০০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৪ মার্চ ২০২৩

লেবুর হালি ৮০, শশার কেজি ৮০ এবং বেগুনের কেজি ১০০ টাকা

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ টাকা পটল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ৩০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগেই ছিল ৬০ টাকা, , বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ২০-৩০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা।
এদিকে কয়েক মাস ধরে গরু ও খাসির মাংস ছোঁয়াই যাচ্ছে না, পোয়ায় (২৫০ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে। এমতাবস্থায় মুরগির মাংস দিয়ে প্রোটিনের স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে রমজান সামনে রেখে রেকর্ড গড়েছে। দেশের ইতিহাসে এতো দামে মুরগি বিক্রির নজির নেই। শুধু তাই নয়, মাছের দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবজির বাজারেও আগুন। মাংসের পর সবজি ও মাছের এ অসহীয় মূল্যে নাজেহাল নিম্ন আয়ের মানুষ।
রাজধানীর মাংসবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা, অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ২৭০ টাকা। ব্রয়লার ২৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৭০০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার টাকা।
মাছের বাজার গিয়ে দেখা গেছে, মাঝারি আকৃতির রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে; অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ২৬০ টাকা। জাপানি মাছ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৯০ টাকা। মৃগেল মাছ ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। কই মাছ কেজি প্রতি ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। মাঝারি গলদা চিংড়ি মাছ ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫৫০ টাকা। তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। গরিবের মাছ বলে পরিচিত পাঙাশও বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা।
পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায় যা আগে ছিল ৪০০ টাকা। সুরমা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। অন্যদিকে দেশি কই মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০০ টাকা। চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০০ টাকা। শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫০ টাকা।
এদিকে শুধু মাছ ও মাংসের দাম বাড়েনি। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিমের দামও। বর্তমানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা কয়েক দিন আগেও ছিল ৪০ টাকা।
এ ছাড়া পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা যা আগে ছিল ৪০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ।
শুধু সবজি বাজারে নয়, ফল বাজার অধিকাংশই ফলেরও দাম বেড়েছে। বিশেষ করে রমজান উপলক্ষ্যে দাবাস খেজুর ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে অথচ কয়েক দিন আগে ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল। মরিয়ম খেজুর ১২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার টাকা। আজোয়া খেজুর প্রতি কেজি ৯০০ টাকা, যা আগে বিক্রি হতো ৭০০ টাকা, আপেল ৩২০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা, কমলা ২৪০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা।

এদিকে ঊর্ধ্বগতির বাজারে কয়েকটি সবজির দাম বৃদ্ধি পায়নি। লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর রোজার আগে প্রতিকেজি বুটের বেসন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। ইসবগুলের ভুসি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা, যা আগে ৯০০ টাকা ছিল। ২০০ গ্রামের ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, যা আগে ১৬০ টাকা ছিল।
প্রতিলিটার রুহ আফজা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা, যা আগে ৩০০ টাকা ছিল। বাজারে যে ছোলা প্রতিকেজি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেই একই মানের ছোলা গত বছর ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকা ছিল।
প্রতিকেজি খেজুরের গুড় বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, যা আগে ২২০ টাকা ছিল। মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, যা আগে ৬০ টাকা ছিল। বেড়েছে সবজি মধ্যে বেগুনের দামও বেড়েছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্চে ৮০-১০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ৭০ টাকা ছিল।
সবজির দাম কেন বাড়তি- এ বিষয়ে একই বাজারের সবজি বিক্রেতা সবুজ আলী যুগান্তরকে বলেন, শীতের মৌসুম শেষে সবজির দাম বাড়তি থাকবে এটা স্বাভাবিক। কারণ এ সময় শীতের সবজির মৌসুম শেষে সিজনাল সবজিগুলো আর হচ্ছে না। তাতে আবার রমজানে সবজির চাহিদাও একটু বেশি হয়। এ জন্য সবজির দামও কিছুটা বাড়তি হতে পারে।
বৃহস্পতিবার বাজার করতে এসেছিলেন সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বর্তমান বাজার কেমন এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগান্তরকে বলেন, কী আর বলব, যেটাতেই হাত দেই সেটারই দাম বেড়েছে। অল্প কিছু টাকা মাইনে পাই, সেটা দিয়ে কোনোভাবে বেঁচে থাকি। যেভাবে বাজারের দাম ঊর্ধ্বগতি এভাবে বাড়তে থাকলে পথে পথে ভিক্ষা করতে হবে মনে হয়।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে পরে আর তা কমে না। যতই দিন যায়, ততই বাড়তেই থাকে।
রাজধানীর কাঁঠালবাজারে বাজার করতে এসেছিলেন রাকিব হোসাইন, তিনি পেশায় একজন চাকুরীজিবি। তিনি জানান, মাংস কেনা তো মুশকিল আবার মাছের বাজারও চড়া। তবে আগে তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কই এমন জাতীয় মাছ কিনে খাওয়া যেত; কিন্তু এখন আর এগুলোর কম দাম নেই। এসবের দামও অনেক বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আয়-ব্যয়ের হিসাব এখন মেলানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বাজারের প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে কিন্তু আমাদের আয় বাড়েনি। এ বেতনে পরিবার চালানো খুব কঠিন। যে হারে সবকিছুর দাম বাড়ছে, সেটা দিয়ে চলা অসম্ভব। পরিবারের সদস্যদের চাহিদাও পূরণ হয় না। সন্তানদের আকুতি দেখলে নীরবেই কাঁদি। আর কিছু করার নেই।
এজে/