যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া গৃহবধূকে ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৩ জুলাই ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া গৃহবধূকে ধর্ষণ

ফেনীর সোনাগাজীতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে মহিন উদ্দিন রাজু (৩৫) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযুক্ত মহিন উপজেলার চরখোয়াজ গ্রামের আব্দুস শুক্করের ছেলে।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারী সোনাগাজী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মহিন উদ্দিন ও অজ্ঞাত আরও দুই সহযোগীকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। মামলার পর শুক্রবার রাত ৮টার দিকে মেয়র খোকন তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন।

স্থানীয়রা জানান, ২০১১ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একজনের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ওই নারীর। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে নাগরিকত্ব পান ওই গৃহবধূ। ১২ বছরের সংসারে তাদের ৬ বছরের কন্যাসন্তান রয়েছে। অভিযুক্ত মহিন উদ্দিনও বিবাহিত, তারও দুটি সন্তান আছে।

মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, গত ৭ জুলাই ওই গৃহবধূ তার কন্যাসন্তানকে নিয়ে দেশে ফিরে ফেনীতে বোনের বাড়িতে ওঠেন। পর দিন চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় মহিন উদ্দিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে বলে গৃহবধূকে ও তার মেয়েকে পাশের একটি গলিতে নিয়ে যায়। ওই সময় আরও কয়েকজন তার সঙ্গে একত্রিত হয়। সেখানে তাকে ছুরি দেখিয়ে একটি বাসায় নিয়ে কয়েকটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এ সময় ওই গৃহবধূ রাজি না হলে তার মেয়ে ও তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে কাউকে এ ঘটনা না বলার জন্য হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।

পরে তিনি বোনের বাসায় গিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বলেন এবং ১০ জুলাই ফেনী থেকে সোনাগাজীর নিজ বাড়িতে যান। বাড়িতে যাওয়ার ৩ দিন পর ১৪ জুলাই আমেরিকান গ্রিন কার্ড ও পাসপোর্ট ফটোকপি করার জন্য রাস্তায় অপেক্ষা করার সময় হঠাৎ করে মহিন উদ্দিন ও তার দুই সহযোগী এসে তাকে ও তার মেয়েকে জোরপূর্বক প্রাইভেট কারে তুলে ফেনীতে নিয়ে যায়। তিনি চিৎকার করলে তারা আমার নাকে স্প্রেজাতীয় কিছু মারলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।

পরে তারা তাকে ফেনীর একটি বাসায় জিম্মি করে তিন দিন ধরে মহিন উদ্দিন একাধিকবার ধর্ষণ এবং ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ছবি তার ভাই ও যুক্তরাষ্ট্রে তার স্বামীর কাছে পাঠায়। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূ মহিনের পা ধরে কান্নাকাটি করলে সে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে ঘটনা জেনে তার স্বামী দেশে ফিরে তাকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার থানায় মামলা করেন।

তবে অভিযুক্ত মহিন উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে যুগান্তরকে বলেন, ওই গৃহবধূর সঙ্গে আমার দীর্ঘ সাত বছরের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ হতো। তার স্বামী তাকে নির্যাতন করে বলে মোবাইলে কান্নাকাটি করে আমার সঙ্গে কথা বলত। সে তার স্বামীকে তালাক দিয়ে আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। এর মধ্যে সে আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে টাকা চাইলে আমি তাকে কয়েক ধাপে ১৭ লাখ টাকা প্রদান করি।

গত বছর আগস্ট মাসে নোটারি পাবলিক ও চরহাজারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তার স্বামীকে সে তালাক দেয়। চলিত মাসের ৮ জুলাই আমরা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে এফিডেভিট করার পর কাবিনে স্বাক্ষর করে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিবাহ করি।

এ সময় প্রমাণ হিসেবে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে কাবিননামা, নোটারি পাবলিকের এফিডেভিটের ফটোকপি ও স্বামীকে তালাক দেওয়ার ফটোকপি সরবরাহ করেন।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে তার সাবেক স্বামী ও তার দুই ভাই তাকে জিম্মি করে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি খালেদ হোসেন বলেন, অভিযুক্ত মহিন উদ্দিনকে শনিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার বাদীর শারীরিক পরীক্ষা শেষে তার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ফেনীর জুডিশিয়াল আদালতে নেওয়া হয়েছে।