নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন দলটির বর্তমান সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর সাধারণ সম্পাদক পদে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এই অধিবেশনে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন দলটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এক বাক্যে মেনে নেন দলের কাউন্সিলর এবং নেতাকর্মীরা । দু-একবার নিজ থেকে অবসরে যাওয়ার প্রস্তাব তুললেও দলের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনাকে ছুটি দিতে রাজি হননি। সুতরাং সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাই থাকছেন—এটা প্রায় নিশ্চিত। এই জন্য এবারও আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মূল আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদটি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের টানা তৃতীয় মেয়াদে এই পদে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন।
তারা বলছেন, যেহেতু ওবায়দুল কাদের শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন তাকেই আবারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে পারেন শেখ হাসিনা। তাছাড়া আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসাবে তিনি ভালোই করছেন। তিনি এখন পর্যন্ত সফলতার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
করোনাকালীন সময়েও ওবায়দুল কাদের দলের প্রতিটি প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন কখনো স্ব-শরীরে কখনো ভার্চুয়ালি এবং তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের বুদ্ধিভিত্তিক ও দাঁতভাঙ্গা জবাবে তার জুরি নেই। সবকিছু মিলিয়ে তিনিই আগামী সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ বাংলা ওয়্যার কে বলেন, 'সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের কোন আভাস আমি দেখছি না কারন গতকাল গণভবনে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ রকম আভাসও পায়নি'
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ওবায়দুল কাদেরের পাশাপাশি দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ও জাহাঙ্গীর কবির নানকের নামও জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বড় ধরনের রদবদল চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি নির্বাচনে বিজয় অর্জনে দলের অভিজ্ঞ ও পুরনো নেতাদের উপরই আস্থা রাখবেন। তবে কয়েকটি পদে নতুন মুখ দেখা যাবে। কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে। সেগুলো আমলে নিয়ে কয়েকটি পদে পরিবর্তন আসবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আওয়ামী লীগ এবার সাদামাটা সম্মেলন করছে। কাউন্সিলের সয়মও কমিয়ে একদিনে আনা হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি। থাকছে না ঢাকা জুড়ে আলোকসজ্জা।
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে, ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
এ স্লোগান লেখা পোস্টার ছাপার কাজও শেষ হয়েছে।
এবার সম্মেলনের মঞ্চ পদ্মা সেতু ও নৌকার ডিজাইনে হচ্ছে। পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ। মঞ্চের আয়তন হবে দৈর্ঘ্যে ৮০ ফুট ও প্রস্থে ৪৪ ফুট এবং উচ্চতা হবে সাত ফুট। মঞ্চে ১২০ জনের বসার চেয়ার রাখা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য পাশেই আলাদা মঞ্চ থাকবে।
দলের কাউন্সিল অধিবেশন পরিচালনার জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, মশিউর রহমান ও সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
জাতীয় সম্মেলনে অতিথি ও কাউন্সিলর মিলিয়ে লক্ষাধিক লোক উপস্থিতির আয়োজন করা হয়েছে। এবারের সম্মেলনে সারা দেশে দলের ১৫ হাজার কাউন্সিলর ও প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। দুপুরে ৫০ হাজার নেতাকর্মীর খাবারের আয়োজন থাকবে।