নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
‘অতীতের মতো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিল্লির প্রকাশ্য প্রভাবে বাংলাদেশের জনগণ উদ্বিগ্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন, ভারতীয় কূটনীতিকেরা বাংলাদেশে এসে প্রকাশ্যে একতরফা ডামি নির্বাচনের পক্ষে বক্তব্য রাখছেন। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আলোচনা বৈঠক বসছে দিল্লিতে, যা বাংলাদেশের জন্য সম্মানজনক নয়।
আজ শুক্রবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি গত তিনটি নির্বাচনেও দিল্লির প্রকাশ্য প্রভাবের অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দিল্লি থেকে বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা চায়। অথচ বিএনপিসহ অধিকাংশ দলবিহীন এই নির্বাচনকে তারা সমর্থন দিচ্ছে। তার মানে, গণতন্ত্র তাদের কাছে এখন অপাঙ্ক্তেয়। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মতো দেশটির গণমাধ্যমে বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকেরা যেসব মতামত প্রকাশ করছেন, তার প্রায় সবই তাঁদের সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়।
দিল্লি বাংলাদেশেও কি লেন্দুপ দরজি চায়? এমন প্রশ্ন তুলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের প্রশ্ন দিল্লি কি বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তে একটি গণবিরোধী ভোট ডাকাত দলের সঙ্গে সম্পর্ক চায়? তবে বাংলাদেশের জনগণ চায় দিল্লি সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করুক, জনগণের ভোটের অধিকার গলা টিপে হত্যার পক্ষে অবস্থান পরিবর্তন করুক।
নির্বাচন সামনে রেখে সরকার জঙ্গি নাটকের পরিকল্পনা করছে বলে দাবি করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সরকার ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বিভ্রান্ত করার কৌশল হিসেবে নাশকতা ও জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করছে। আমরা জানতে পেরেছি, একজন ডিআইজিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জঙ্গি নাটক মঞ্চস্থ করার। এ জন্য বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজনকে তুলে নিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের দিয়ে জঙ্গি নাটক মঞ্চায়ন হতে পারে।’
রিজভী বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী একটি দেশের পরিকল্পনায় ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সরকার জঙ্গি নাটক করে স্বার্থসিদ্ধি করেছিল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তেও একই নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে পারে। আমি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্বকে বলব, আপনারা আওয়ামী লীগের কোনো নাটককে বিশ্বাস করবেন না।’
একতরফা সাজানো ডামি নির্বাচন নিয়ে সোচ্চার হতে এবং বাংলাদেশের জনগণের একান্ত চাওয়া গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান রিজভী।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, দলদাস নির্বাচন কমিশন (ইসি) শেখ হাসিনার পাঠানো আসন বণ্টনের তালিকায় সিলমোহর দেওয়ার জন্য একতরফা নির্বাচন নাটকের আয়োজন করেছে। এই নির্বাচন ঘিরে নির্বাচন কমিশনারদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণ রীতিমতো হাস্যকর। তাঁরা প্রায়ই বিএনপিকেও হুমকি–ধমকি দিচ্ছেন।
আসন তালিকা চূড়ান্ত বলে রিজভীর একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান বলেছেন, রুহুল কবির রিজভীর কাছে যদি তালিকা থাকে, প্রকাশ করতে বলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ‘তিনি (ইসি আনিছুর রহমান) সাধুসন্ত হওয়ার অভিনয় করছেন। কেন তালিকা আমি দেব। সরকারকে বলেন, আপনার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেন, পেয়ে যাবেন।’
এ প্রসঙ্গে রিজভী যোগ করেন, ‘আপনাদের নেতা ওবায়দুল কাদের আগেই ঘোষণা করেছেন, ‘১৮৯৬ জন প্রার্থী এবারের নির্বাচনের ফাইনাল খেলায় অংশ নিচ্ছে। ৭০ শতাংশ মানুষ ভোট দেবে। সরকার জানে কত পার্সেন্ট ভোট কাস্ট করবে। আপনাদের কাজ হলো ঘোষণা করা।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমালোচনা
এর আগে সকালে রাজধানীর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের কাঁচাবাজারে ‘ডামি নির্বাচন বর্জন’ ও ‘অসহযোগ’ আন্দোলন সফল করতে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ করেন রিজভী। এ সময় তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তারা নব্য রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল দেখলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রচার করছে যে বাংলাদেশের নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা এবং লক্ষ্য অর্জনে অবরোধ কার্যকর করতে তারা সমুদয় প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। বর্তমানে যে নির্বাচন হচ্ছে, তা হলো প্রতারণার নির্বাচন। দেশের ৬৩টি রাজনৈতিক দল সে নির্বাচন বর্জন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবৈধ সরকারের দালালি করছে।
প্রচারপত্র বিতরণের সময় মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা জামান, থানা বিএনপির নেতা হারুনুর রশিদ, রিপন হাসান, সোলায়মানসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।