সরকারি জমিতে দোকানঘর নির্মাণ, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ জজ আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সরকারি জমিতে দোকানঘর নির্মাণ, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ জজ আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে

সরকারি জমিতে দোকানঘর স্থাপনা নির্মাণে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধা জেলা দায়রা জজ আদালতের জজ আবুল মনসুরের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নামমাত্র ৫২ হাজার টাকার রিসিট জমা দিয়ে দোকান মালিকদের থেকে ৫ লক্ষ টাকার অধিক অর্থ আদায় করেছেন জজ আবুল মনসুর।

নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ব্যক্তিগত ক্ষমতার বলে জেলা দায়রা জজ আবুল মনসুর জনগণের থেকে ৫ লক্ষের ও অধিক টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোর্ট এলাকার জমি হওয়ায় ব্যক্তিগত ক্ষমতা ব্যবহার করে এসব স্থাপনা নির্মানে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জজ আবুল মনসুর ও তার অনুসারীরা।

এনিয়ে কোর্টের জায়গারে কথিত লিজ প্রক্রিয়ার আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানান তারা। তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কথিত লিজের প্রক্রিয়া প্রকাশ করতে হবে। এ সব তথ্য জানার অধিকার নাগরিক অধিকার।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সম্প্রতি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত গাইবান্ধার কাচারি বাজারে পুরাতন জজ কোর্টের জায়গায় দখল-বেদখল ও মূল্যবান বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কাটা হয়েছে। এ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। প্রথমত- কোন প্রক্রিয়ায়, কীভাবে, কবে, কখন মূল্যবান জায়গাটি লিজ দেওয়া হয়েছে তা অস্পষ্ট। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর কেন হঠাৎ করে লিজ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল তাও অস্পষ্ট। রাতারাতি সেখানকার পুরনো গাছ-গাছালি কেটে হরিলুট করার পরও আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জায়গাটির তত্ত্বাবধায়ক জেলা ও দায়রা জজ আদালত কর্তৃপক্ষের নির্বিকার ভূমিকা জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।

‘সরকারি জায়গায় গাছ কাটার ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা তাও পরিষ্কার না। শোনা যায়, প্রতি স্কয়ার ফুট আট টাকা ফি দরে লিজ দেওয়া হলেও এই লিজ ফি কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয়েছে তা জানা দরকার। নিয়ম অনুযায়ী পৌর এলাকার যেকোনও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পৌরসভা থেকে নকশা অনুমোদন করা বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা সেটিও অজানা। ব্যবসায়ী ছাড়াও প্রভাবশালী বিভিন্ন শ্রেণির পেশার মানুষকে এই জায়গায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের অনেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ হাতবদল করেছেন।

‘এমনও শোনা যায়, কর্তৃপক্ষ নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে কথিত ভাড়াটেদের কাছে শর্ত দিয়েছে, যেকোনও সময় বিনা নোটিশে এ জায়গা ছাড়তে হবে। তাহলে যারা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে জায়গার বরাদ্দ নিয়েছেন ভবিষ্যতে তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রকাশ করা কর্তৃপক্ষের নৈতিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। আমাদের বিশ্বাস, কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে কথিত লিজের প্রক্রিয়ার বৈধতাসহ সব প্রশ্নের জবাব প্রকাশ করবেন। আর এ সব তথ্য জানার অধিকারকে আমরা নাগরিক অধিকার বলে মনে করি।’

এবিষয়ে কথা বলতে জজ আবুল মনসুরের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করলেও ফোন ধরেননি তিনি।

বিবৃতিদাতারা হলেন- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য আমিনুল ইসলাম গোলাপ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গাইবান্ধা জেলা সভাপতি প্রণব চৌধুরী, বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা আহ্বায়ক আহসানুল হাবীব সাঈদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) জেলা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন জেলা আহ্বায়ক মৃণাল কান্তি বর্মণ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগ জেলা সম্পাদক রেবতি বর্মণ, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলন জেলা আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নওশাদুজ্জামান এবং বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী।