নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৭ অক্টোবর ২০২২
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় গড়িষাপাড়া মহল্লার আমিরুল ইসলাম (৩৫) ছিলেন দোকানের কর্মচারী। হঠাৎ করেই কবিরাজ বনে গেছেন । দিচ্ছেন সর্বরোগের সমাধান। আরোগ্য পাওয়ার আসায় প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সহজ সরল মানুষ। এক বছরেও বেশি সময় ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, জ্বীনের সহায়তায় পানি পড়া, তাবিজ-কবজ,ঝাঁড়ফুক ও গাছ দিয়ে সারাচ্ছেন নানা রকম জটিল রোগ। প্রেমে ব্যর্থ, সফলতা, পারিবারিক কলহ নিষ্পত্তিসহ বিপথগামী জ্বীন আছর করা ভুতকে বোতলে আটকে রাখার চিকিৎসা দিচ্ছেন এই কবিরাজ। চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রচার প্রচারনাও চালাচ্ছেন তিনি। ফলে সেবা প্রত্যাশীদের আনাগোনা বাড়ছে ওই কবিরাজের বাড়িতে। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার ও সোমবার তাঁর বাড়িতে বসছে আসর।
গত সোমবার কথিত কবিরাজ আমিরুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে,- গেটের বাইরে কমপক্ষে ১৫-২০জন মানুষ অপেক্ষা করছেন। ঘরের ভেতরে ৮-১০ নারীর চিকিৎসা চলছে। সেখান থেকে উদ্ভটসব আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।
কথা হয় ঢাকার সাভার থেকে আসা মনি বেগমের সাথে। সমস্যা তাঁর স্কুল পড়ুয়া মেয়ের। মেয়েকে প্রেম ভালোবাসা থেকে দূরে রাখতে এসেছেন তিনি। হেলেনার ভাষ্য- অন্ধকার ঘরের মধ্যে তন্ত্রমন্ত্র পড়ে একটি তাবিজ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এজন্য কবিরাজকে ১২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। তাঁরমত অনেক নারীই নানা সমস্যার সমাধান পেতে কবিরাজের হাতে তুলে দিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
পাশের তাড়াশ উপজেলা থেকে জালাল উদ্দিন এসেছেন তাঁর মেয়েকে নিয়ে। তাঁর ভাষ্য, তার মেয়ের শরীরে জ্বীনের আসর পড়েছে। সেই জ্বীন তাড়াতে কবিরাজের কাছে এসেছেন ঝাঁড়ফুঁক দিতে। ৮ হাজার টাকা জমা দিয়ে একটি তাবিজ পেয়েছেন তিনি।
প্রতিবেশিরা জানান,- আমিরুল মাধ্যমিকের গন্ডি পার হয়নি। অভাবের তাড়নায় অন্যের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বছরখানেক আগে নিজেকে বড় কবিরাজ পরিচয় দিয়ে এলাকায় প্রচার প্রচারনা চালিয়েছেন। রোগী টানতে গ্রামে গ্রামে দালাল নিয়োগ করেছেন।
ছাপিয়েছেন ভিজিটিং কার্ড। সেখানা সর্বরোগের সমাধানের বিষয় উল্লেখ করেছেন তিনি। সহজ সরল মানুষকে পানি পড়া, তাবিজ,ঝাড়ফুক ও গাছগাছরা দেওয়াসহ জ্বীন,ভূত-পেতœীকে বোতলে আটকে রাখার মন্ত্র দিয়ে মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন কথিত এই কবিরাজ।
কথিত কবিরাজ আমিরুল ইসলাম দাবি করে বলেন,- তার সাথে ১৪টি মাদার জ্বীন রয়েছে। প্রতি শুক্রবার ও সোমবার তারা হাজির হয়। তাঁদের মাধ্যমেই নানা রোগের সমাধান দেওয়া হয়। সংসার চালানোর জন্য টাকা নিয়ে থাকেন তিনি।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ঝাড়ফুঁকে কোন রোগ সারেনা। সহজ সরল কিছু মানুষকে বোকা বানিয়ে বাড়িত আয় করছেন ওই কবিরাজ।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন বলেন, কবিরাজের এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে জানা নেই তাঁর। খোঁজ খবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন তিনি।