নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৭ অক্টোবর ২০২২
সন্ধ্যাটি ছিলো পিপলএনটেকের প্রাক্তনদের। তারা সকলে এসেছিলেন তাদের এগিয়ে চলার ও সাফল্যের গল্প শোনাতে। শুনিয়েছেন মাত্র চার মাসের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি কিভাবে তাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে। তারা বলেছেন তাদের নিজেদের কেবল নয়, বদলে গেছে তাদের পরিবারের চালচিত্র। আর সর্বোপরি তারা গড়ে তুলতে পারছেন একটি যোগ্য ভবিষ্যত প্রজন্ম। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় তারা একেকজন এখন দক্ষ আইটি প্রফেশনালস। তাদের কেউ আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার কেউ বা প্রজেক্ট লিড। আবার কেউ কেউ নিজেই এখন প্রশিক্ষক-শিক্ষক।
আয়োজনটি ছিলো পিপলএনটেকের অ্যালামনাই সামিট ২০২২। নিউইয়র্কের কুইন্সে একটি পার্টি হলে মিলনমেলা বসেছিলো এই অ্যালামদের । আয়োজনের মধ্যমনি হয়ে ছিলেন পিপলএনটেকের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও এবং বর্তমানে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ও চেয়ারম্যান আবুবকর হানিপ। ছিলেন পিপলএনটেকের প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএফও ফারহানা হানিপ। আর তাদের ঘিরে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, নিউজার্সি কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা। তবে আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিলেন সেইসব অ্যালাম যাদের গল্পগুলো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনেছেন উপস্থিত সকলে।
সফল অ্যালামরা তাদের গল্প শোনালেন। এর একেকটি গল্পই ছিলো ইউনিক। তারা যেমন নিজেদের এগিয়ে চলার কথা শুনিয়েছেন তেমনি শুনিয়েছেন, পিপলএনটেক তাদের জীবন গড়ে দিতে ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
পিপলএনটেক-কে তারা উল্লেখ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের সিঁড়ি হিসেবে। আর প্রত্যেকের মুখেই বারবার উচ্চারিত হচ্ছিলো এই ভাগ্য পরিবর্তনের কারিগর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপের কথা।
তারা বলছিলেন প্রশিক্ষকদের কথা। যাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা নিজেরাই এখন একেকজন প্রশিক্ষক। তারা বলছিলেন পিপলএনটেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপের কথা। যিনি সকল প্রচেষ্টায় পিপলএনটেককে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
আর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ তাদের শোনান তার নিজের জীবনের গল্পটিও। দেশে স্বনামধন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এদেশে পড়তে এসে কিভাবে একটি সংগ্রামময় সময় পার করে নিজেকে এই আইটি খাতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
আবুবকর হানিপের সে গল্প সকলের জন্যই অনুপ্রেরণার।
আবুবকর হানিপ বলেন, নিজে টু হান্ড্রেড থাউজেন্ড প্লাস মাইনের চাকরি করতেন যুক্তরাষ্ট্রে তথা বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানে কিন্তু ভেবেছিলেন একার উন্নতি শুধু নয়, আরও মানুষ যাতে এই ভাবে তাদের জীবনটিকে পাল্টে দিতে পারে সেই প্রচেষ্টাই তাকে নিতে হবে। আর সেই ভাবনা থেকেই পিপলএনটেক প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
তিনি জানান, বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষগুলোকে এদেশে সংগ্রামের জীবন থেকে বের করে এনে সুন্দর জীবন দেওয়ার ব্রত তিনি নিয়েছিলেন আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে। গড়ে তুলেছিলেন পিপলএনটেক। শুরুটা হয় মাত্র একজন ছাত্রকে দিয়ে। তিনি যখন পেয়ে গেলেন মূলধারায় বড় মাইনের চাকরি... এরপর আরও ছাত্র আসতে থাকে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। আর এই সময়ের মধ্যে ৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে আইটি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারায় কাজ পাইয়ে দিয়েছে পিপলএনটেক। যারা এখন স্বাচ্ছন্দের জীবন যাপন করছেন। আর গড়ে তুলছেন নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে ভূমিকা রাখতে পারছেন বাংলাদেশের অগ্রগতিতেও।ডব্লিউইউএসটির শিক্ষার্থীরাও পিপলএনটেকের প্রশিক্ষণার্থীদের মতো মূলধারায় বড় বড় কাজে যোগ দিতে শুরু করেছেন। একসময় ডব্লিউইউএসটির অ্যালামরা এদেশের ফরচুন হান্ড্রেড কোম্পানির উচ্চপদে আসীন হবে এই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ। এবং বলেন, এটাই তার লক্ষ্য।
পিপলএনটেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ বলেন, আজ আমরা আমাদের এলামদের সাফল্যকেই উদযাপন করতে চাই। অ্যালামরা এখন আর ক্যাম্পাসে নেই কিন্তু তারা সকলেই আমাদের অন্তরে রয়েছেন। কেউ কেউ এখন উচ্চ পর্যায়ে উঠেছেন, তাদের এই অর্জনে আমরা গর্বিত।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে সফল করে তুলতে পিপলএনটেকের অ্যালামদের পাশে থাকার আহবান জানান তিনি। কমিউনিটির পক্ষ থেকে পাওয়া অব্যহত সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান ফারহানা হানিপ।
পিপলএনটেকের সফল অ্যালামদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান অতিথি ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, আপনাদের সাফল্য আমাদের মুগ্ধ করে এবং একজন বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করে।
বাংলাদেশি ডায়াসপোরার অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পদচিহ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আবুবকর হানিপ তাদের অন্যতমদের একজন, বলেন ড. মনিরুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি সৈয়দ আশিকুর রহমান পিপলএনটকের এই সাফল্যের প্রশংসা করে বলেন এমন একটি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে সামনে এগিয়ে নিতে আবুবকর হানিপ ও ফারহানা হানিপ যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তা অনুসরনীয়।
অতিথিদের মধ্যে এটর্নি এন মজুমদারসহ অন্যরা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। আর ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে সফল অ্যালামদের সাফল্যের গল্প। বক্তব্য রাখেন পিপলএনটেকের কর্তা ব্যক্তিরাও।
এরপর গ্রুপ ছবি তোলা হয়। আর সবশেষে মজাদার নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পিপলএনটেকের ২০২২ সালের অ্যালামনাই সামিট।