২৩ শর্তে বিএনপি আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৭ জুলাই ২০২৩

২৩ শর্তে বিএনপি আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি


ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, সম্মান প্রদর্শন করে আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ-সংগঠন ও বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ-সংগঠনকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে এবং বিএনপিকে নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকেল ৪টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান খন্দকার গোলাম ফারুক।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকে যেসব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ ছিল, জনগণকে দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং ওয়ার্কিং ডেতে সমাবেশ না করার জন্য আমি ডিএমপির পক্ষ থেকে, নগরবাসীর পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

কমিশনার বলেন, আজকের পরিবর্তে আগামীকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আওয়ামী লীগের তিনটি অঙ্গ সংগঠন (আওয়ামী যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ) সমাবেশ এবং বিএনপি মহাসমাবেশ করার জন্য আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করেছে। আগামীকাল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হলেও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। পবিত্র আশুরা শুরু হয়ে গেছে। ২৪ জুলাই থেকে আশুরা উপলক্ষ্যে তাজিয়া মিছিল প্রতিদিনই হচ্ছে। আজ ও কালও মিছিল হবে।

আশুরার চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ করার জন্য যে অনুমতি চেয়েছেন, আমরা তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আগামীকাল দল দুটিকে সমাবেশ করা অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিএনপি তাদের পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে। আর আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট এলাকার সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। মোট ২৩টি শর্ত সাপেক্ষে দল দুটিকে আবেদন করা জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, প্রথমত- সমাবেশ করার ক্ষেত্রে দল দুটিকে তাদের সমাবেশস্থলের চৌহদ্দি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত বিএনপিকে তাদের সমাবেশ সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের তিন অঙ্গ সংগঠনকে মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট পর্যন্ত সমাবেশ ও এর মাইকের ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

দুই দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোনোভাবেই সমাবেশে লাঠিসোঁটা নিয়ে আসা যাবে না। ব্যাগ বহন করতে পারবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো বক্তব্য দিতে পারবেন না। ডিএমপির পক্ষ থেকে সমাবেশের যে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, এই সীমানার বাইরে তাদের সমাবেশ ও মাইক ব্যবহার করতে পারবেন না। জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য যতটুকু সম্ভব নিজেরা ভলান্টিয়ার নিযুক্ত করবেন। আইন-শৃঙ্খলা এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিজস্ব শৃঙ্খলা ব্যবস্থা রাখতে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখবেন।

চেকপোস্ট-আটক নিয়মিত অভিযানের অংশ

গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে রাতে বিভিন্ন জায়গার রেড দিয়ে গ্রেপ্তার করা শুরু করেছেন, বিশেষ করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের। কিন্তু আমরা সরকার দলীয় কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা শুনিনি। রাতের বেলায় কেন?

সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই আমাদের চেকপোস্ট আছে। ২০১৫ সালের মহররমের সময় তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা হয়েছে। এখন মিছিল চলছে। আমরা সেই জঙ্গি হামলার কথা ভুলে যাইনি। কাল বড় দুটি রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। এখানে যেকেউ বা কোনো কুচক্রী মহল বাইরে থেকে এসে কোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের চেকপোস্ট স্থাপন এবং সন্দেহজনক ব্যক্তি ও মামলা-ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হয়। এটা নিয়মিত অভিযানের পাঠ, এটা বর্তমানে করা হচ্ছে ভবিষ্যতেও করবো।

শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড করলে আইনানুগ ব্যবস্থা

দুই দলের প্রতি অনুরোধ রেখে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতি হওয়ার মতো কোনো ধরনের কাজ করবেন না। যেকোনো দলের মধ্যে যদি আমরা এরকম দেখি তাহলে কঠোর আইনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সমাবেশে থাকবে পুলিশ, এবিপিএন, আনসার, র‌্যাব, স্ট্যান্ড বাই থাকবে বিজিবি

দুটি রাজনীতির দলকে ২৩ শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই অনুমতি কি দেওয়া হচ্ছে থ্রেট অ্যানালাইসিস করে নাকি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে? কোনো থ্রেট আছে কি না? জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের কাছে বড় ধরনের কোনো হুমকি নেই। তবে কোনো কুচক্রী মহল সুযোগ নিয়ে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা নাশকতা ঘটনা ঘটাতে পারে। সেটা যাতে না পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে, আনসার থাকবে এপিবিএন, র‌্যাব থাকবে, বিজিবি থাকবে স্ট্যান্ডবাই। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবো। যাতে করে কোনো কুচক্রী মহল আইনশৃঙ্খলা অবনতি বা দুর্ঘটনা ঘটাতে না পারে।

রাজনৈতিক কোনো দলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান নয়

আবাসিক এলাকায় হোটেলে পুলিশ অনেককে আটক করেছে। আবাসিক হোটেলে গিয়ে খোঁজা হয়েছে যে, কে বিএনপি, কে বিএনপি না। আটকদের অনেককেই পুলিশকে বোঝাতে হয়েছে যে আমি বিএনপির না। সমাবেশে আসিনি। আটক কী সমাবেশ ঠেকানোর উদ্দেশ্যই করা হচ্ছে? জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমার কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা কোনো পলিটিক্যাল পার্টির বিরুদ্ধে অভিযানে নামিনি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এর আগে সকালে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের ‘শান্তি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু।

আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ এর আগে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বৃহস্পতিবার শান্তি সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু গতকাল দিনভর নাটকীয়তা শেষে রাতে জানানো হয়- শুক্রবার বিকেল ৩টায় আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলার (পুরোনো) মাঠে তাদের শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

অন্যদিকে দুপুরে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসমাবেশ নয়াপল্টনেই অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। বিনা কারণে শুধু ভয় আর আতঙ্ক ছড়াতে সরকারের হুকুমে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।