শুভ জন্মদিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

শুভ জন্মদিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন-সারথী। বিশ্বরাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রভা, বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনগ্রসর জাতি-দেশ-জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র, বিশ্বনন্দিত নেতা।

এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি জাতি।
মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এই নিভৃত পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। শৈশব কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গীপাড়ায় বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলে-পিঠে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি, রাজরোষ আর জেল-জুলুম ছিল তাঁর নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিন-রাত্রি, যাপিত জীবন। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কদাচিৎ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর অন্যান্য ভাই- বোন হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধূলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের সাথে তাই তাঁর নিবিড় সম্পর্ক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বাধিকারের প্রশ্নে আপসহীন এ দেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত পথে এগিয়ে চলা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার ঘটনাবহুল ও কর্মময় জীবনের ছিয়াত্তর বছর পূর্ণ করেছেন। পিতার প্রদর্শিত পথে চলতে গিয়ে ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন বারবার। কিন্তু আপন ইতিকর্তব্য থেকে তাকে কেউ কিছুমাত্র টলাতে পারেনি। তিনি তার পিতার মতোই বাঙালিকে ভালোবেসে আপন সত্তাকে মাতৃভূমির সত্তার সঙ্গে একীভূত করে দিয়েছেন অবলীলায়, যার ফলে বাঙালির আর্থ-সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন তার দিবারাত্রির ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হতে পেরেছে। বাঙালির ভাগ্যোন্নয়নে নিজ নেতৃত্বের অপরিহার্যতা নিঃসংশয়ে প্রমাণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পঁচাত্তরের আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বিদেশে নির্বাসিত থাকা অবস্থাতেই শেখ হাসিনা ১৯৮১-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তার ঠিক তিন মাস পর তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। সে বছরের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন ঢাকা বিমানবন্দরে পা রাখলেন, তখন আমাদের তরুণ বয়স। সে দিনের সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য আজও আমার চোখে ভাসে। বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে হারিয়ে আমাদের নেত্রী শোকে-তাপে, বিয়োগব্যথায় মুহ্যমান ছিলেন। তিনি তখন দুটি শিশুসন্তানের মা, তাকে খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে তার অশ্রুপ্লাবিত চোখ, আর তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত আবেগমুখর জনতাকে দেয়া তার দুর্মর প্রতিশ্রুতি।

সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির আগে বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশে কেউ রাজনীতিক হিসেবে শেখ হাসিনার নাম শোনেনি। তার সেদিনকার ভাষণটিই ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে দেয়া তার প্রথম ভাষণ। অবশ্য বাংলাদেশের তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে যে তার অতিঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই? বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইডেন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে) ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৬-তে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তখন আন্দোলনের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঢাকার ৩২ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনেই গৃহীত হয় এবং তার বড় মেয়ে হাসিনা ছিলেন সেসবের প্রত্যক্ষদর্শী। এসব ঘটনা তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার বড় বলয়কে সমৃদ্ধ করেছে। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে পিতার অতি নিকটে থেকে নেত্রী রাজনীতিসহ সব জ্ঞান অর্জন করেছেন।

১৯৮১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত টানা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে সত্যি সত্যিই সামরিক স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করলেন তিনি। এ সময়কালের মধ্যে তাকে অন্তত দুবার গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে এক জনসভায় যোগ দিতে গেলে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতা-কর্মীরা মানবঢাল রচনা করে তাকে রক্ষা করলেও, সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হলেন প্রায় ৩৪ জন মানুষ, আহত হলেন আরও অনেকে।

ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের চাপে এরশাদ শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও, সামরিক স্বৈরশাসন এবং স্বাধীনতা-বিরোধী ধর্মীয় মৌলবাদের অপচ্ছায়া সম্পূর্ণ দূর হয়নি। ১৯৯০-এর নির্বাচনে তাদের পেটোয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদৌলতে বিএনপি জিতে গেল ভোট চুরির নির্বাচনে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সরকার গঠন করেন। এরপর ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯-এর নির্বাচনগুলোতেও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে তিনি পরপর তিনবার এবং মোট চারবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একাত্তরতম জন্মজয়ন্তীতে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রচিত মানপত্রে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন: ‘তোমার সপ্ততিতম-বর্ষশেষে একান্তমনে প্রার্থনা করি, জীবন-বিধাতা তোমাকে শতায়ু দান করুন; আজিকার এই জয়ন্তী-উৎসবের স্মৃতি জাতির জীবনে অক্ষয় হউক।’ প্রিয় বিশ্বনেত্রীর সাতাত্তর তম জন্মদিনে আমরা এই একই প্রার্থনা করি। সবসময় ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন প্রিয় নেত্রী, শুভ জন্মদিন।

লেখক: হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আদম তমিজি হক