নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৮ অক্টোবর ২০২২
গুরুদাসপুর(নাটোর)প্রতিনিধি:
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় অল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় কলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। অনেক কৃষকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে কলাচাষে। কলার বাম্পার ফলন সেই সাথে ন্যাযমুল্য পাওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ও খরচ খুবই কম। জৈব সার ব্যবহার করে কলা চাষ করার ফলে স্থানীয় বাজারে এ কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা।
ছোট ভ্যান, ট্রলি, নছিমন-করিমনে যে যার মতো করে কলা নিয়ে আসছেন হাটে। সাজিয়ে রাখা হচ্ছে কলার হাটজুড়ে। দুরদুরান্ত থেকে ফরিয়া মহাজনরা আসছেন সেই কলা কিনতে। যাবে বিভাগীয় শহর থেকে দেশের নানাপ্রান্তে। উৎসুক কৃষান কৃষানীদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। ভোররাত থেকেই চলছে কলা কাটা আর গাড়িতে সাজানোর কাজ। যতদুর চোখ যায় শুধু কলা আর কলা। পাশেই দাড়িয়ে রয়েছে সারি সারি কলাবাহী ট্রাক।
শুক্র ও শনিবার বাদে সপ্তাহে ৫ দিনই হয় কলা বেচা কেনা। এমন চিত্র দেখা যায় চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর হাটে।
গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের কলাচাষী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, মাছের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে কলাচাষ করেছি। মাছে লাভ কম হলেও কলায় প্রচুর লাভ হয়েছে। একবার কলার গাছ লাগালে ৩ থেকে ৪ মৌসুম বিক্রি করা যায়। এবছর ৩০ বিঘার পুকুর পাড়ে কলার চাষ করেছিলাম। খরচ বাদে শুধু কলাতেই চার লাখ টাকা লাভ হয়েছে।
শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারী কলেজের প্রভাষক কৃষিবিদ জহুরুল হক সরকার বলেন, আমি এক একর জমিতে কলাচাষ করেছি। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার কলাবিক্রি করেছি। এই এলাকার মাটি অত্যন্ত উর্বর। তাই ফসলের পাশাপাশি সব ধরনের ফল, যেমন- ভাঙ্গি, তরমুজ, লিচু, আম ও কলা ভালো হয়। একারণে এই এলাকার কৃষকরা ফসলের সাথে ফলচাষেও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে।
নাজিরপুর হাট ইজারাদার নজরুল ইসলাম জানান, গুরুদাসপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ছাড়াও নাটোরের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম থেকে প্রচুর পরিমানে কলা আসে এই হাটে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ ট্রাক কলা দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে। প্রতি কাইন কলা আকার ভেদে ৩শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক ট্রেন কলা আসে এই হাটে।
কলা চাষে সফল চাষী মজিবর রহমান বলেন, জৈব সার ব্যবহার করার কারণে এখানে ফলন ভালো হয়। এছাড়াও অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি এবং খরচ কম হওয়ায় আমাদের এলাকার কৃষকরা এখন কলাচাষে ঝুকছে বেশি। আমি ৫ বছর যাবত কলাচাষ করছি। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে সাগর কলা, অমৃত সাগর, মেহর সাগরসহ বিভিন জাতের চারা রোপণ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ৩শ থেকে ৪শ চারা রোপণ করা যায়। বছর খানেকের মধ্যেই রোপণকৃত গাছ থেকে কলা পাওয়া যায়। আমার কলাচাষে সফলতা দেখে এলাকার কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. মতিয়র রহমান বলেন, গত বছর উপজেলায় ২৫০ হেক্টও জমিতে কলাচাষ করা হয়ে ছিলো। এবছর আরও ৫০ হেক্টর কলাচাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কলা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।