হলুদ সরিষার ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৯ ডিসেম্বর ২০২২

হলুদ সরিষার ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

চারদিকে জেকে বসেছে শীত। ফসলের ডগায় ঝরে পড়ছে শিশির বিন্দু। চারিদিকে ভ্রমরের গুঞ্জন। সরিষা ফুলের সুবাসে চারদিক টালমাটাল। সরিষার গন্ধে মৌ মৌ করছে ফসলের মাঠ। সরিষা ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া মাঠ। হলুদ ফুলে দুলছে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার কৃষকদের স্বপ্ন। এবার সরিষার ভালো ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকের স্বপ্ন পূরণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে কৃষি বিভাগ।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা আগ্রহ নিয়েই সরিষা চাষ করছেন। উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে সরিষা খেত। মাঠে সরিষা ফুলের মনোরম দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ এবার অনেকটাই কম। তাই তারা ভালো ফলন ও অধিক লাভের আশা করছেন। এ আশা অনেকটাই পূরণ হবে এবং তাদের জীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে।

স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, আগে স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করায় ফলন কম হতো। উৎপাদনে সময়ও লাগতো বেশি। ফলে তারা তেমন লাভবান হতেন না। বর্তমানে উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করায় তারা লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে বারি-১৪ জাতের সরিষা। এটা ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরেও ফলন হয় প্রায় দেড় মেট্রিক টন। সরিষা চাষ তোলার পর ওই জমিতে নির্বিঘ্নে বোরো চাষ করা সম্ভব। ফলে বারি জাতের সরিষা আবাদে দিন দিন তাদের আগ্রহ বাড়ছে। এছাড়াও সরিষার পাতা, ফুল ও ফলে জৈব সার তৈরি হওয়ায়, বোরো চাষে সারও কম লাগছে। অন্যদিকে সরিষার ফলনও ভালো হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, মাঠের যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই হলুদের সমারোহ। প্রকৃতি যেন হলুদ রঙের অপরূপ সুন্দর একটি গালিচা বিছিয়ে রেখেছে। মাঠে দুলতে থাকা সরিষা ফুল দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। অনেকে সরিষা ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। চারিদিকে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত ফসলের দিগন্ত। যেন হলুদের বিস্তৃর্ণ একখন্ড রাজ্য। ভালো ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখেও স্বস্তির ছাপ। বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিদের আগ্রহ বেড়ে গেছে। কৃষিসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় দুই ফসলি জমিতে চাষ হচ্ছে তিন ফসল।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ধনবাড়ী উপজেলায় ১০ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। ধান চাষের পর পতিত জমিতে এ মৌসুমে সরিষা আবাদে ৫০০ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও ৫৬৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে সরিষা চাষ হয়েছিল ৪৩০ হেক্টর জমিতে। সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করতে সরকারিভাবে কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

মুশুদ্দি গ্রামের কৃষক আনছার আলী বলেন, ‘আগে জমিতে বছরে একবার ধান আবাদ করতাম। ধান কাটা শেষে জমি পতিত থাকতো। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় ধান আবাদের পাশাপাশি মাঝখানের সময়টা সরিষা চাষ করছি। আমি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করেছি।’

দড়িচন্দ্রবাড়ীর কৃষক আরিফুর রহমান বলেন, ‘সরিষার ভালো ফলন আশা করছি। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে আছে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ও রোগবালই তেমন দেয়নি। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ১১ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা আবাদ করেছি। কোনো ধরণের ক্ষতি না হলে লাভবান হবো বলে আশা করছেন।’

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘সরিষা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দুই ফসলি জমিতে এখন তিন ফসল আবাদ করছে কৃষকরা।’

ধনবাড়ী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এ অঞ্চলের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী। যে কারণে এলাকায় আবাদ বাড়ছে। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষদের আগ্রহও দিন দিন বাড়ছে। নানাভাবে কৃষকদের সহযোগীতা করা হচ্ছে। আগামী বছর আবাদ আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’