নিজস্ব প্রতিবেদক । ৩০ ডিসেম্বর ২০২২
বগুড়া শহরে বিভিন্ন জায়গায় টানা পার্টি ও ছিনতাইকারী দলের উপদ্রব চলছে দীর্ঘদিন ধরে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান তৎপরতা থাকলেও কমানো সম্ভব হচ্ছে না টানা পার্টি ও ছিনতাইকারী দলের উৎপাত। দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড। এদের হাত থেকে নিস্তার পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগীরা জানান, চারমাথা বাসস্ট্যান্ড, দত্তবাড়ী সিএনজি স্ট্যান্ড, চেলোপাড়া সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুলতলা থেকে সাতমাথা রোড, দত্তবাড়ী থেকে বারপুর রোড, সাতমাথা থেকে তিন মাথা রেলগেট রোড, নিউ মার্কেট ও রানাপ্লাজার সামনে ওৎ পেতে বসে থাকে টানা পার্টির সদস্যরা। এই জায়গা গুলো টানা পার্টি ও ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য।ভোরবেলা ও গভীর রাত হলেই শহরের বিভিন্ন জনশূন্য মোড় ও রাস্তায় অবস্থায় নিচ্ছে ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির সদস্যরা। রাস্তায় কোনো নারী বা পুরুষ রিকশায় করে একা যাওয়ার সময় তারা টার্গেট করছে। চলতি পথে যেখানে সামনে ও পেছনে কোনো যানবাহন কম সেখানেই তারা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে ব্যাগ ও সঙ্গে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে সর্বস্বান্ত করে ছেড়ে দেয় এমনকি ধারালো ছুরি দিয়ে আহত করে।
সোহরাব ইসলাম নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী। আমার বাসা বগুড়া শহরের মালতিনগর। পেশাগত কাজের কারণে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় আমাকে। কিছুদিন আগে ব্যবসার কাজ শেষ করে ঢাকা থেকে বগুড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ভোররাতে সাতমাথা নেমে পরি। সাতমাথা থেকে রিক্সা করে বাসার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় জেলখানা মোড়ে আসার সাথে সাথে ১০/১২ জনের ছিনতাই কারী একটি দল আমার পথ রোধ করে আমার কাছে থাকা ব্যবসায়ের ৮০০০০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে সিএনজিতে করে টল পুলিশের একটি টিম ছিল আমি চিৎকার করেও পুলিশের সহযোগিতা পায়নি।
ভুক্তভোগী ৩ নং রেলগেট ব্যবসায়িক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মোকারম ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ জানান, গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জলেশ্বরীতলা থেকে ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে রিক্সায় করে আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে জলেশ্বরীতলা কালীমন্দির এর কাছে আসা মাত্র আমার বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলে থাকা দুই জন আরোহীর একজন আমার হাতে থাকা মোবাইল থাপা মেরে জেলখানা রোডের দিকে যাওয়ার সময় লোকজন তাদের কিছু ধাওয়া করলে তারা মোবাইল রাস্তায় ফেলে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, পুলিশ প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ অতি দ্রুত এইসব ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে আমরা সাধারণ জনগণ এদের থেকে নিস্তার পেতে পারি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন জানান, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব বৃদ্ধি, পারিবারিক শাসনের অভাব, রাজনৈতিক অবক্ষয় এইসব অপরাধের মূল কারণ। সামাজিকভাবে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সোচ্চার না হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অনেক ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হলেও থানা পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন না। ফলে বিষয়টি গণমাধ্যমেও আসছে না। অনেক ঘটনাই চাপা পড়ছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগী মান-সম্মান ও থানা পুলিশকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) জনাব আব্দুল রশীদ জানান, ছিনতাইকারী ও টানা পার্টির বেশকিছু গ্রুপকে ইতোমধ্যে আমাদের জেলা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। টানা পার্টি নিয়ে আমাদের বিভিন্ন টিম কাজ করছে। সদর থানা ও ফাঁড়ির টহল টিমকে এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। থানা পুলিশের কোন সদস্য যদি এই কাজে টালবাহানা করে এমন অভিযোগ পেলে এবং তা প্রমাণিত হলে সেই সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।