নিজস্ব প্রতিবেদক । ৩১ জানুয়ারি ২০২৩
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ নয়জনের বিরুদ্ধে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল অভিযোগের প্রতিবেদন চেয়েছেন আদালত। আজ সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এই আদেশ দেন। আগামী ১০ এপ্রিল এই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। আদালত বলেন, দুদকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেওয়া হবে কিনা। ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষে সমিতির সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন সরকারের দায়ের করা মামলায় এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় অন্য যারা আসামি তাঁরা হলেন—ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী শারমিন হক আমীর, সাবেক রাজস্ব পরিদর্শক মিঞা মো. মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী মো. আখতারুজ্জামান, রাজস্ব পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন, প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম, জনতা ব্যাংকের সাবেক ডিজিএম শ্যামল বিশ্বাস, উপসচিব শেখ এনায়েত উল্লাহ ও উপপ্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালেকুর রহমান।
আজ মামলার বাদীর দেওয়া অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করতে গিয়ে আদালত বলেন, দুদকে কি কাগজপত্র আছে বা এ সংক্রান্ত কি কি অভিযোগ আছে তা আগে জানা প্রয়োজন। পরে তিনি দুদকের প্রতিবেদন তলব করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী গাফফার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত বছর ১০ নভেম্বর এই মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত আজ শুনানির জন্য দিন ধার্য করে বাদীকে অভিযোগের স্বপক্ষে কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাদী অভিযোগ সংক্রান্ত নথিপত্র আদালতে দাখিল করেন। এই আইনজীবী জানান গত বছর ২ আগস্ট দুদকে বাদী অভিযোগ দিয়েছিলেন। দুদক কার্যকর করা ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরে তিনি আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। তখন আদালত দুদকে যে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন তলব করেন।
গাফফার হোসেন আরও বলেন দুদকের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেওয়া হবে কিনা। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি ১৬ জুলাই, ২০১৭ থেকে ৩০ জুন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার ১৭৩ টাকা ঢাকা ওয়াসা থেকে রাজস্ব আদায় বাবদ পায়। আর ২০১৮ সাল থেকে ২০১৯ অর্থবছরে একই কাজ বাবদ সমিতি আয় করে ৩৪ কোটি ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকা। এর মধ্যে ২০১৭ থেকে ২০১৮ অর্থবছরে সমিতির হিসাবে জমা হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৩ টাকা। অবশিষ্ট ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা ছয়টি ব্যাংক থেকে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে আসামি তাকসিম এ খানের প্রত্যক্ষ মদদে ও নির্দেশে অন্য আসামিরা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আসামিদের এই আত্মসাতের বিষয়টি সমবায় অধিদপ্তরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া সমিতির গাড়িসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সমিতির হেফাজত থেকে স্থানান্তর করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার সমমূল্যের সম্পদ চুরি করেন আসামিরা। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিশ্বাসভঙ্গ করে অর্থ আত্মসাৎ ও চুরি করেছেন বলে দণ্ডবিধির ৩৮০ / ৪২০ / ৪০৯/ ৫০৬ / ১০৯ ধারায় ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনেন বাদী।
গত বছর একই অভিযোগে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই বাদী মামলা দায়ের করেছিলেন। তখন মামলাটি উত্থাপন করা হলে আদালত মামলাটি গ্রহণ না করে ফেরত দেন। আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী কর্তৃক কোনো টাকা আত্মসাৎ করা হলে, তা দুর্নীতি দমন কমিশনের শিডিউল ভুক্ত অপরাধ। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ মামলা করতে পারেন না এবং এমন মামলা গ্রহণের এখতিয়ার আদালতের নেই।
বিষয়: