নিজস্ব প্রতিবেদক । ৩১ অক্টোবর ২০২২
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি : প্রতিবন্ধি স্বামীর সংসারে রোকেয়া বেগমের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ছিল। নানা টানাপোড়েনে প্রায়শই পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হতো। আয়ের জন্য শিশু দুটিকেও কাজে ঠেলে দিতেন। তবে বছর দুয়েক হলো রোকেয়ার সংসারে আর অর্থ দৈণ্যতা নেই। নেই অসন্তোষও। সন্তান দুটিও বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।
রোকেয়াকে এই সুখের দিন দেখিয়েছে হাঁস পালন। ধারের টাকায় ১০ টি হাঁস দিয়ে শুরু করা রোকেয়ার খামারে এখন যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন জাতের শ দুয়েক হাঁস। হাঁস পালনে রোকের অভাব ঘুঁচেছে। পরিবারে এসেছে স্বচ্ছলতা।
রোকেয়ার বাড়ি গুরুদাসপুরের হরদোমা গ্রামে। রোকেয়া জানালেন, একটা সময় ছিল যে সময় অর্থভাবে অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতেন। আয়ের জন্য সন্তানদেরও বিভিন্ন কাজে লাগাতেন। দুই বছর আগে প্রতিবেশির দেওয়া পরামর্শে ধারের টাকায় হাঁস পালন শুরু করেছিলেন।
তিনি বলেন- আয়ের সাথে বেড়েছে খামারের পরিধি। সকালে খামারের হাঁসগুলো পাশের পুকুরে চলে যায়। সারাদিন পুকুরের শামুক-ঝিনুক খায়। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে ব্যাপক আয় করছেন তিনি।
হাঁস পালনে শুধু যে রোকেয়া বেগমের ভাগ্য ফিরেছে তা নয়। তার মতো দিনহীন বহু পরিবার হাঁসপালনে স্বচ্ছলতা দেখছেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে গুরুদাসপুরে গড়ে উঠেছে শ দুয়েক হাঁসের খামার। হাঁসপালনে খামারিদের সুদিন ফেরায় এই পেশায় নামছেন আরো অনেকেই।
গুরুদাসপুর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার মতে- আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে গুরুদাসপুরে তিন জাতের হাঁস বেশি পালন করা হয়। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পালন হয় খাঁটি ক্যামবেল জাতের হাঁস। এছাড়া ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের হাঁসও পালন করছেন খামারিরা।
গুরুদাসপুর প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে- শুধু চলনবিলেই তালিকাভুক্ত হাঁসের খামার রয়েছে ৪৫১টি। এরমধ্যে ২শর ওপরে খামার রয়েছে শুধু গুরুদাসপুরেই। প্রতিটি খামারে হাঁস রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার। এছাড়া তালিকার বাইরেও পারিবারিক পর্যায়ে শত শত খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারীদের পাশাপাশি খামারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষ বেকারত্ব ঘুঁচিয়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে- খামার পর্যায়ে রাজহাঁস পালন হচ্ছে ৩৮ হাজার ৫৫০টি। এছাড়া পাতিহাঁস ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯২টি। বর্ষার শুরুতে খাদ্য কম লাগায় ১ দিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করেন খামারিরা। ৬ মাস পর থেকে এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। এতে খামারিরা খরচ বাদে প্রতি মাসে ১০ হাজারের বেশি অর্থাৎ বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করে থাকেন।
স্থানীয়রা বলছেন- সরকারি তালিকাভুক্ত ছাড়াও কয়েক’শ হাঁসের খামার রয়েছে। এসব খামারে কয়েক লাখ হাঁস রয়েছে। হাঁসপালনে এই অঞ্চলের বহু মানুষের বেকারত্ব ঘুঁচেছে। বেড়েছে আয়। পূরণ হচ্ছে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদাও।
পিঁপলা গ্রামের খামারি সোহাগ বলেন, তিনি সারা বছরই হাঁস পালন করেন। এখন তার খামারে ক্যাম্বেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ৪-৫ মাস বয়সী হাঁস কেনেন তিনি। সাড়ে ৫ মাস বয়স থেকেই ডিম দেওয়া শুরু করে হাঁসগুলো। এখন তার খামারের ৪৮০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। বছরে খরচ বাদে ৩-৪ লাখ টাকা লাভ থাকে তার।
গুরুদাসপুর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, হাঁসপালনে খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে হাঁসের খামারের সংখ্যা। বাণিজ্যিক খামার ছাড়াও ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার হাঁস পালন করছেন।