নিজস্ব প্রতিবেদক । ০১ নভেম্বর ২০২২
মোকছেদুল মুমীন জাককানইবি প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন ও দুটি আবাসিক হলের জন্য ক্রয় করা হয় ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ টি লিফট। এক বছর অতিবাহিত না হতেই ১৫টি লিফট যেগুলো সচল সেগুলোও প্রায়ই চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়ে পড়ে। লিফটের ভেতর আটকা পড়ে নাভিশ্বাস আর আতঙ্কিত হন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে দুটি আবাসিক হলের ভবন নির্মাণের কাজ শেষে সুইজারল্যান্ড থেকে ৫৫০ ব্রান্ডের ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা হয় ১৫ টি লিফট। ১৫ লিফটের মধ্যে দুই হলে ৯ টি এবং ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে তিনটি করে মোট ছয়টি লিফট স্থাপন করা হয়। ওই ছয়টির মধ্যে চারটি লিফট শুরু থেকেই অধিকাংশ সময় অচল থাকে।
দুটি লিফট দিয়ে দশতলা ভবনে উঠানামা করেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ পাঁচ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। চলন্ত লিফট হটাৎ বিকল হয়ে ভেতর আটকা পড়ে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলমান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থাগ্রহন না করায় উদ্বিগ্ন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা।
প্রতিনিয়ত লিফটে আটকানোর ঘটনা ঘটছে,আর প্রায় সময় লিফট বন্ধ থাকে একটা না একটা।
১২ অক্টোবর দুপুর একটা দিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের লিফটে আটকা পড়েন ৬ শিক্ষার্থী।
১৯ অক্টোবর লিফটে আটকে পড়া ইংরেজী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গ্রুপে তার আতঙ্কের বার্তায় লিখেন, ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার পর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতাটা হলো আজকে। লিফটে আটকে গিয়েছিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি গ্রুপে সাব্বির হাসান শাওন বলেন, লিফট সমস্যা এতোটা গুরুতর হওয়ার পরও প্রশাষন থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।তবে কি প্রশাষন কর্তৃপক্ষ কোনো স্টুডেন্টের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে??বর্তমানে লিফটে ওঠা মানে স্বেচ্ছায় জীবন দেওয়ার মতো অবস্থা।
স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক সিকদার বলেন, বৈদ্যুতিক কোন সমস্যা ছাড়াই বিকট শব্দে ৪র্থ ফ্লোরে এসে আটকে যায়।প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্থায়ী কোন সমাধান করছেনা।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রভোস্ট নুসরাত তানিয়া বলেন, এই হলের ৫টি লিফট-ই সচল। এক বছরের মধ্যে শুধু একবার যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে এক সপ্তাহ লিফট বন্ধ ছিল। তবে জেনারেটর ব্যবস্থা না থাকায় মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চলে গেলে শিক্ষার্থীরা আটকা পড়েন। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে টেকনিশিয়ান নিযুক্ত রয়েছে। টেকনিশিয়ানরা খুব দ্রুতই শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে সক্ষম হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদার জানান, হলের লিফটে মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। তবে বেশি সমস্যা হয় ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে। বিষয়টি আসলেই বিব্রতকর।
ডিপিডি হাফিজুর রহমান বলেন, লিফটে সিকিরিউটি ডিভাইস অনেক। ব্যবহারকারীরা উল্টাপাল্টা চাপাচাপি করলে সমস্যা হতেই পারে। মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। বাংলাদেশের অনেকস্থানে এই ধরনের ঘটনা ঘটে। এতে আতঙ্কের কিছু নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, চালক ছাড়া গাড়ির যে অবস্থা, লিফটেরও ওই একই অবস্থা। অনেকেই এর আগে কোনদিন লিফট ব্যবহার করেনি। তারা একই বাটনে বারবার চাপেন। উন্নতমানের হলেই কি? লিফটগুলোর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না বলেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। আমরা লোকবল চেয়ে আবেদন করেছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করছি।