জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিবেচনায় পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। সব প্রাকৃতিক দুর্যোগই সাময়িক অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে।বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কষ্ট ও জীবনসংগ্রামের বিষয়ে আমরা সবাই অবগত।জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু সংকটের কারণে স্থানচ্যুত হওয়া মানুষের ৮০ শতাংশই নারী। সংঘাত ও সংকট– যেমন কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে বা পানির অভাব ও ফসলহানির প্রভাবে গণ-অভিবাসনের সময় অভিবাসনের যাত্রাপথ ও শরণার্থী শিবিরসহ বিভিন্ন জায়গায় নারী ও মেয়েরা জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার মুখোমুখি হওয়ার বৃহত্তর ঝুঁকিতে থাকেন। এই ঝুঁকি থেকে বের হয়ে আসতে আজ ৩১ মার্চ সকাল ১১ টায়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, আগারগাঁও এ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব এবং এর ঝুঁকি সম্পর্কে বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।নারী মৈত্রীর আয়োজনে অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন নারী মৈত্রীর সভানেত্রী (প্রেসিডেন্ট) মাসুমা আলম।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী সংসদ সদস্য এবং মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জনাব মেহের আফরোজ চুমকি।বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের-৩ সাংসদ এবং সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ জনাব শবনম জাহান শিলা এমপি, জনাব মো. সাইদুর রহমান, মহাপরিচালক, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, খাদিজা মরিয়মনারী উদ্যোক্তা সেলের প্রধান, এসএমই ব্যাংকিং বিভাগ, ব্র্যাক ব্যাংক এবং মোঃ নাজিম হাসান সাত্তার, মহাব্যবস্থাপক, এসএমই ফাউন্ডেশন।স্বাগত বক্তব্যে নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আকতার ডলি বলেন, " নারী মৈত্রী দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে যত কাজ করে, তার মধ্যে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমরা নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা এবং তা সমাধানের মাধ্যমে তাঁদের এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য কাজ করছি। সরকারের নীতি সহায়তা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরি ও উন্নয়নে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে।তারপরও নারীর চলার পথ এখনো বাধাহীন না। নারী চাইলেই স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁর ব্যবসায়িক কাজ করতে পারেন না। তাঁদের জন্য একটা সহায়ক পরিবেশ দরকার।তাই নারী মৈত্রী বিশ্বাস করে সূদুর ভবিষ্যতে নারী নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান তৈরিতে যেমন ভূমিকা রাখতে পারবে ঠিক তেমনি নারী উদ্যোক্তাদের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা আরও জোরালো হতে সহায়তা করবে বলে জানান নারী মৈত্রীর সভানেত্রী মাসুমা আলম। তৃনমূল পর্যায়ের নারী উদ্যোক্তা রিনা আকতার বলেন, আমার খারাপ সময়ে আমার পাশে ছিলেন নারী মৈত্রী। আমি অনেক কিছু জানতাম না, বুঝতাম না, এমন সময় নারী মৈত্রীর আপারা আমাকে সহায়তা করেন এবং বর্তমানে আমি একজন সফল উদ্যোক্তা। আমি চাই আমি এখন থেকে তাদের পাশে থাকবো যারা এখনো পিছিয়ে আছে। আমি তাদের সাহস হয়ে তাদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করতে সবসময় তাদের পাশে থাকতে চাই।মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আজকের নারীরা থেমে নেই। সকল নারী সূর্যের মতো জ্বলে উঠছে আপন সত্তায়। জীবনে এগিয়ে যেতে সকলকে কাজ করতে হয়, জীবনের নানান বাস্তবতার সম্মুখীন সকলকে হতে হয়। বাধা যেমন আসবে সেই বাধা থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসার রয়েছে সমাধান। থমকে যাওয়া যাবেনা, সেজন্যও আমাদের যথেষ্ট সচেতন। এছাড়াও শহুরে নারীর পাশাপাশি গ্রামীণ নারী যাতে কোনোভাবেই পিছিয়ে না থাকে সে দিকও নজর দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ৩১ মার্চ ২০২৪
আইটি শিক্ষায় শিক্ষামূলক উদ্যোগ এবং নিরলস প্রচেষ্টার প্রতি স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বপ্নজয়ী নারী সম্মাননা ২০২৪’ পেলেন পিপলএনটেক ইনস্টিটিউট অফ আইটির প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির সিএফও ফারহানা হানিপ। বৃহস্পতিবার ৭ মার্চ রাজধানীর হোটেল শেরাটনে জমকালো অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা পেশাজীবী নারীদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।ফারহানা হানিপ এসময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় তার পক্ষে সম্মাননা গ্রহন করেন মাকসুদা বেগম শিরীন।ঢাকার কেরানীগঞ্জে বেড়ে উঠা ফারহানা হানিফ বর্তমানে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ফারহানা হানিপ পরিবারের প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রেয়ার ইউনিভার্সিটি থেকে ডাবল ব্যাচেলর ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে এমবিএ, মাস্টার্স ইন লিডারশীপ ম্যানেজমেন্টে পড়ছেন তিনি।যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোৎকৃষ্ট আইটি কোম্পানিতে দীর্ঘ ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে পিপলএনটেক যুক্তরাষ্ট্র, ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ অফিসের স্বত্বাধিকারী ও প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়ে সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন তিনি।এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক সেক্টর ও গভমেন্ট সেক্টর নিয়ে কাজের পাশাপাশি ওয়াশিংটন ডিসিতে উইমেন ইমপ্যাক্ট ইন পাবলিক পলিসি (ডব্লিউআইপিপি) সংগঠনের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।বর্তমানে ফারহানা হানিপের স্বপ্ন ঢাকা জেলা ১ ও ২ এলাকার বেকার যুবকদের আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করে তোলা। ঢাকা সহ গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকার যুবকদের যেন বিশ্বের অন্য কোন দেশে গিয়ে অড জব করতে না হয়, তাদের স্কিল ডেভলপমেন্ট করার জন্য পিপলএনটেক সর্বদা তাদের পাশে থাকবে এবং আইটি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলে চাকুরির ব্যবস্থা করার লক্ষ ফারহানা হানিপের।পিপলএনটেক ইনস্টিটিউট অফ আইটির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশি মালিকানায় ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠা করেন পিপলএনটেকের নির্বাহী প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ। ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বে রয়েছেন ফারহানা হানিপ।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ০৮ মার্চ ২০২৪
সারা দেশে যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি মুসলমানরা শবে বরাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। এ রাতটি ‘লাইলাতুল বরাত’ হিসেবেও পরিচিত।পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে আগামী সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটি থাকবে।রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে আসন্ন পবিত্র রমজানে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘আর কিছু দিন পরই আসছে পবিত্র রমজান মাস। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। এ প্রেক্ষিতে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে আমি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। পরম করুণাময় সব সংঘাত-সংকট থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষা করুন।’রাষ্ট্রপতি পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত মহিমান্বিত ও বরকতময় এক রজনী উল্লেখ করে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন।অপর এক পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র শবে বরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’প্রধানমন্ত্রী পবিত্র এই রজনীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।এ রাতে বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।পবিত্র শবে বরাত ১৪৪৫ হিজরি উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত, হামদ নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।রোববার এ উপলক্ষ্যে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ‘পবিত্র শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ করবেন জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতী মোহাম্মদ রুহুল আমীন।রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ‘পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের শিক্ষা ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়াজ করবেন মাদারীপুর জামেআতুছ সুন্নাহ শিবচরের মুহতামিম হযরত মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ ফরিদী।রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ‘আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে করণীয়’ শীর্ষক ওয়াজ করবেন ঢাকার বাদামতলীর শাহাজাদ লেন জামে মসজিদের খতীব শায়খুল হাদিস মুফতী নজরুল ইসলাম কাসেমী। আর রাত ৩ টা ১৫ মিনিটে ‘নফল নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত’ শীর্ষক ওয়াজ করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতী মো. মিজানুর রহমান।আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে ভোর সাড়ে ৫ টায়। মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদ সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতী মো. মিজানুর রহমান।বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও এ উপলক্ষ্যে ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।এ রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে কাটাবেন।মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মুসলমানরা বিশেষ মোনাজাত করবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
হাজী বিরিয়ানি, নান্না বিরিয়ানি, সুলতান ডাইনস্, কাচ্চি ভাই, গ্রান্ড নবাব, কোলকাতা বিরিয়ানি, হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি, হানিফ বিরিয়ানি এরকম কতো কতো মজাদার বিরিয়ানি যে আছে পুরান ঢাকার কাজী আলাউদ্দিন রোড, আগা সাদেক ও নিমতলি এলাকায়। হাজী বদরুদ্দিন মার্কেটের নীচতলার কর্নার ফেসিং যে দোকানের ডেকচির ঢাকনার আওয়াজ আর লম্বা চাউলের রঙিন বিরিয়ানির ঘ্রাণ সূত্রাপুর, নিমতলি, লালবাগ, মিরপুর, বনানী, ৬০ ফিট্, ৩০০ ফিট্ পেরিয়ে উত্তরের তুরাগ তীর পর্যন্ত ঠেকেছে তার নাম 'de আপেল বিরিয়ানি'।ঢাকাইয়্যা স্বাদে, মন মাতানো ঘ্রানে ছাত্তার বাবুর্চির রান্নায় যুগান্তকারী এক রেসিপিযোগে গরমা গরম আপেল বিরিয়ানি নিয়ে এসেছে বদরুদ্দিনের বোকা সোকা মেঝো ছেলে আপেল।মহল্লা মাথায় তোলা বিন্দিয়া, রোখসানা, রকেট, ঐন্দ্রিলা, ইস্পিতা আর বুলেটের মতো পুরান ঢাকার একঝাঁক তরুন তরুনীর উচ্ছাস ভরা এক গল্পগাঁথা ‘de আপেল বিরিয়ানি’।লেখক বিদ্যুত জাহিদ এর দ্বিতীয় এ গল্পগ্রন্থটি এইবার প্রকাশ করছেন ‘নয়া উদ্যোগ’ প্রকাশনী। প্রকাশক সাফায়াত জায়ান। প্রচ্ছদ পরাগ ওয়াহিদ । লেখকের প্রকাশিত অনান্য বইঃ কাব্যগ্রন্থঃ ‘একা আমি শ্রাবন’, ‘শাল পিয়ালের বনে চন্দ্রিমা রাতে’, ‘নদীর নাম পারুল’। উপন্যাসঃ ‘সোনালি অভিশাপ’। ছোটগল্পঃ ‘বুকে বৃষ্টির শব্দ’।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
বইমেলায় এসেছে মহাজাগরণের কবি রাসেল আশেকীর মহাকাব্য সিরিজের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বঙ্গবন্ধু, কোথায় লিখব মহাকাব্য’। কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশক ‘শান্তির প্রবেশ’ এবং পরিবেশক পাঠক সমাবেশ ও কবিতাচর্চা, প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রব এষ, মূল্য ৩০০ টাকা। প্রায় ছয় মাস ধরে রাসেল আশেকীর মহাকাব্যের এই মহাপর্বটি কবি-লেখক ও বিদগ্ধ মহলে আলোচিত। কারণ, মহাকাব্যটি সূফীবাদ উত্তর আধ্যাত্মিক পরাবাস্তবতার অমূল্য সম্পদ, যা নতুন মেটাফোর, মেটাফিজিক্স ও স্ট্রিংতরঙ্গের খনি, মানুষ নামের অন্তরগ্রহের জাগরণী এবং অন্তরশিল্পের শিল্পভূমি। মহাকাব্যজুড়ে যার সদর দরজা উন্মোচন করেছেন স্বয়ংকবি। যেখানে বঙ্গবন্ধু এসেছেন নতুন রূপে নতুনতর মাত্রায়। সেই সঙ্গে হৃদয় প্রজ্ঞায় এসেছে আসল মানুষ ও প্রেম-প্রশান্তির দাওয়াই। কাব্যগ্রন্থটি বইমেলায় কবিতা-পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার পক্ষে একমত পোষণ করেন ঢাকা -১০ আসনের এমপি ফেরদৌস আহমেদ। আজ সোমবার নারী মৈত্রীর একটি প্রতিনিধি দল ফৈরদৌস আহমেদ এর সাথে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে, নারী মৈত্রীর টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রজেক্টের কো-অর্ডিনেটর নাছরিন আকতার, মেহেদি হাসান, এডভোকেসি অফিসার এবং মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশন অফিসার আলফি শাহরীন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের গুরুত্ব ও দাবি গুলো তার সামনে তুলে ধরেনদাবি সমূহ :সকল ধরনের পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও গণপরিবহণে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা;বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা;তামাক কোম্পানির ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা;বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহিন বিক্রি নিষিদ্ধ করা;ই-সিগারেট ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট (এইচটিপি) আমদানি ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা;সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি (৫০% থেকে ৯০% এ উন্নিতকরন) ও প্লেইন প্যাকেজিংসহ তামাকজাত দ্রব্য মোড়কজাতকরণের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম প্রণয়ন করাতামাক বিরোধী সকল কার্যক্রমে নারী মৈত্রীর পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৫ জানুয়ারি ২০২৪
সৌদি আরবে নিহত দুই বাংলাদেশি কর্মীর পরিবার মোট ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দূতাবাস সৌদি মুদ্রায় ক্ষতিপূরণের ওই পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে নিহত দুই শ্রমিকের পরিবারের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রেরণ করেছে। কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী ২০০৬ সালের ২৭ জুন দাম্মাম শহরে এক অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন। দীর্ঘসময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি। ২০১৮ সালের আগস্টে দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারেন সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর পাটোয়ারি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন। সৌদি পুলিশ জানায়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করা হবে। দূতাবাস এ বিষয়ে নিহত সাগরের পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে যোগাযোগ করে। তাঁর পরিবার বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুকূলে আমমোক্তারনামা দেন। এরপর দূতাবাসের প্রতিনিধি দাম্মামের আদালতে অভিযুক্ত উমরের মৃত্যুদণ্ড দাবি করে অভিযোগ দাখিল করে। বিচারে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত ২০২১ সালের ২৪ মার্চ এক রায়ে অভিযুক্ত উমর আল শাম্মেরির বিরুদ্ধে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করেন। অভিযুক্তের বাবা রক্তপণ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারের আপস প্রস্তাব করেন। দূতাবাসের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালের আপস প্রস্তাবে নিহত সাগর পাটোয়ারীর ওয়ারিশরা সম্মত হন। আদালত অভিযুক্তের পরিবারের কাছ থেকে রক্তপণের চেক গ্রহণ করে মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করেন। ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে ৫১ লাখ রিয়াল জমা হয়। অন্যদিকে খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী মোসাম্মৎ আবিরণ বেগম ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ রিয়াদে নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানি কর্তৃক নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানি, গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির এবং তাদের পুত্র ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করেন। দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতের প্রধান আসামি গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের (কেসাস–জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ সৌদি রিয়াল অর্থদণ্ড প্রদান করে মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের হলে আপিল আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে রক্তপণের বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। নিহতের পরিবার সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে আসামিদের ক্ষমার সম্মতি লিখিতভাবে বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানান। দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনায় নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল রক্তপণ পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা নিতে সম্মত হয়। অভিযুক্তের পরিবার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে দূতাবাসের শ্রম শাখার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীলর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ে তাঁর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এরপর আদালত ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ প্রধান আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় বাতিল করে আপস অনুযায়ী নিহত আবিরণ বেগমের বৈধ ওয়ারিশগণের নামে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪৮ লাখ ৮০ হাজার সৌদি রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করেন। সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পর তা দূতাবাসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়।সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে দূতাবাসের মধ্যস্থতার ফলে সৌদি নাগরিকের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় দেশটির সরকার দুই নিহত কর্মীর পরিবারের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্নেহধন্য, ’৬৯-এ পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত ছাত্রনেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সংসদ, সাবেক শিল্প ও বানিজ্যমন্ত্রী, ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদর আজ ৮১তম জন্ম দিন।পরিবারের বা প্রিয়জন অনেকের কাছে তিনি প্রিয় আদরের তোফু হিসাবেই পরিচিত। শুধু দ্বীপজেলা ভোলাই নয়, সারা বাংলাদেশেই এক নামে যাকে সকলে চিনেন। শ্রদ্ধা করেন, সম্মান করেন, সকলে ভালোবাসেন।১৯৪৩ সালের ২২ অক্টোবর ভোলা সদরের দক্ষিন দিঘলদী ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামে তার জন্ম হয়। তার পিতা মৌলোভি আজহার আলী এবং মা ফাতেমা খানম ছিলেন এলাকার সম্মানীত ব্যাক্তিত্ব। তার পিতা একজন ১৯৬০ সালে ভোলা সরকারী হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন।বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে আইএসসি পাস ও পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এমএসসি পাশ করেন। কলেজ জীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃত্ত ছিলেন। ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক পদে এবং কলেজের হোস্টেল অশ্বিনী কুমার হলের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯৬২ সনে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ১৯৬৪তে ইকবাল (বর্তমানে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) হল ছাত্র-সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক, ১৯৬৫তে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের সহ-সভাপতি, ১৯৬৬-৬৭তে ইকবাল হল ছাত্র-সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সন পর্যন্ত তিনি ডাকসুর ভিপি থাকাকালীন ৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন।১৯৬৬-এর ৮ মে থেকে ১৯৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৩৩ মাস কারাগারে আটক থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র সকল রাজবন্দীকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সারা বাংলায় তৃণমূল পর্যন্ত তুমুল গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৬৮-৬৯-এ গণজাগরণ ও ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন এবং ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল রাজবন্দীকে মুক্ত করেন।ওই সময়ে তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় শিরোনাম হয়, তোফায়েল দি গভর্নোর অব ইষ্ট পাকিস্তান।” ওই সময়ে ইকবাল হলের ৩১৫ নাম্বার রুমের সামনে দেশী বিদেশী সাংবাদিকগন তার বক্তব্য নিতে অপেক্ষা করতে আন্দোলনের কর্মসূচী জানার জন্য। ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভার সভাপতি হিসেবে ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে কৃতজ্ঞ জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে গণজোয়ারে জাতির জনককে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাত্র ২৭ বছর বয়সে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ভোলা দৌলতখান-তজুমদ্দিন-মনপুরা আসন থেকে অংশ নিয়ে এমএনএ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর অঞ্চল ভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত চার প্রধানের একজন ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে ১৪ জানুয়ারি তারিখে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব লাভ করেন।১৯৭০-এ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ, ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮,২০১৪এবং ২০১৮সনের সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সর্বমোট ৮ বার তিনি এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন তিনি শেখ হাসিনা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় ̄স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২২ অক্টোবর ২০২৩
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংঘাতময় হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। সংস্থাটি বলছে, বিতর্কিত ও কারচুপির নির্বাচন হলে বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এর জেরে চীন ও ভারতের ওপর বাংলাদেশ সরকারের নির্ভরশীলতা আরও বাড়তে পারে।গত বুধবার ক্রাইসিস গ্রুপের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে চলতি অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে সম্ভাব্য নানা সংঘাত ও সংকটের আশঙ্কার কথাও বলা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের নির্বাচন ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র ও জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা এবং কক্সবাজারে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে নানা সংকটের কথাও বলা হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতি বিরোধীরা যে আহ্বান জানাচ্ছে, তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে দলটি। একই সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়ে যেতে পারে।প্রতিবেদনে বলা হয়, এতে করে রাজনৈতিকভাবে বিরোধী মতের সমর্থকেরা সংঘাতে জড়াতে পারেন। বিভিন্ন দলের কার্যালয় ও নির্বাচনী প্রার্থীদের ওপরও হামলা হতে পারে। সরকারের বিরুদ্ধে আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো।ক্রাইসিস গ্রুপের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভোট কারচুপির আশঙ্কায় নির্বাচন বর্জন করতে পারে বিরোধী দল এবং তারা আরও সহিংস ও উগ্র হয়ে উঠতে পারে।প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে কারচুপি হলে এবং বিতর্কিত হলে সরকারবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ শুরু হতে পারে। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার মতো নানা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। এতে করে ভারত ও চীনের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা আরও বাড়তে পারে।পার্বত্য চট্টগ্রাম ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতির অবনতিআগামী কয়েক মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগঠন কুকি–চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) প্রতিপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘাতে জড়াতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ক্রাইসিস গ্রুপ। তারা বলেছে, এ অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়াতে পারে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। এ ছাড়া নব্য–উগ্রপন্থী গোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘাঁটি গেড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বাড়তে পারে। ফলে উত্তেজনাও বাড়তে পারে।ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও এর প্রতিদ্বন্দ্বী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো অপরাধী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত বাড়তে পারে। এতে ভুক্তভোগী হতে পারেন বেসামরিক মানুষ। আরসার মতো বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী সহিংসতা চালিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করতে পারে।এ ছাড়া দাতারা সহায়তা কমিয়ে দিলে রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্য ও কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দিতে পারে। অনুদানে ঘাটতি দেখা দিলে শিবিরগুলোয় জাতিসংঘ বাধ্য হয়ে সেবা কমাতে পারে। এতে রোহিঙ্গারা, বিশেষ করে তরুণেরা বিভিন্ন অপরাধ চক্র ও সশস্ত্র গোষ্ঠীতে জড়িয়ে পড়তে পারেন। বাড়তে পারে সহিংসতা।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২২ অক্টোবর ২০২৩
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, স্বাধীন বাংলাদেশে ’৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন।বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদারমুক্ত গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন-সারথী। বিশ্বরাজনীতির উজ্জ্বলতম প্রভা, বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনগ্রসর জাতি-দেশ-জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র, বিশ্বনন্দিত নেতা।এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙালি জাতি।মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। এই নিভৃত পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। শৈশব কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গীপাড়ায় বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলে-পিঠে। পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি, রাজরোষ আর জেল-জুলুম ছিল তাঁর নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিন-রাত্রি, যাপিত জীবন। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতার দেখা পেতেন কদাচিৎ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শেখ হাসিনা ছিলেন জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর অন্যান্য ভাই- বোন হলেন- শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। শেখ হাসিনা গ্রামবাংলার ধূলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন। গ্রামের সাথে তাই তাঁর নিবিড় সম্পর্ক।বাংলাদেশের স্বাধীনতা-স্বাধিকারের প্রশ্নে আপসহীন এ দেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রদর্শিত পথে এগিয়ে চলা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার ঘটনাবহুল ও কর্মময় জীবনের ছিয়াত্তর বছর পূর্ণ করেছেন। পিতার প্রদর্শিত পথে চলতে গিয়ে ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন বারবার। কিন্তু আপন ইতিকর্তব্য থেকে তাকে কেউ কিছুমাত্র টলাতে পারেনি। তিনি তার পিতার মতোই বাঙালিকে ভালোবেসে আপন সত্তাকে মাতৃভূমির সত্তার সঙ্গে একীভূত করে দিয়েছেন অবলীলায়, যার ফলে বাঙালির আর্থ-সামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন তার দিবারাত্রির ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত হতে পেরেছে। বাঙালির ভাগ্যোন্নয়নে নিজ নেতৃত্বের অপরিহার্যতা নিঃসংশয়ে প্রমাণ করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।পঁচাত্তরের আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বিদেশে নির্বাসিত থাকা অবস্থাতেই শেখ হাসিনা ১৯৮১-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং তার ঠিক তিন মাস পর তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। সে বছরের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন ঢাকা বিমানবন্দরে পা রাখলেন, তখন আমাদের তরুণ বয়স। সে দিনের সেই অবিস্মরণীয় দৃশ্য আজও আমার চোখে ভাসে। বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে হারিয়ে আমাদের নেত্রী শোকে-তাপে, বিয়োগব্যথায় মুহ্যমান ছিলেন। তিনি তখন দুটি শিশুসন্তানের মা, তাকে খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে তার অশ্রুপ্লাবিত চোখ, আর তাকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত আবেগমুখর জনতাকে দেয়া তার দুর্মর প্রতিশ্রুতি।সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির আগে বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশে কেউ রাজনীতিক হিসেবে শেখ হাসিনার নাম শোনেনি। তার সেদিনকার ভাষণটিই ছিল বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের নেত্রী হিসেবে দেয়া তার প্রথম ভাষণ। অবশ্য বাংলাদেশের তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে যে তার অতিঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই? বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের (সাবেক ইডেন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে) ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৬৬-তে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তখন আন্দোলনের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঢাকার ৩২ ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনেই গৃহীত হয় এবং তার বড় মেয়ে হাসিনা ছিলেন সেসবের প্রত্যক্ষদর্শী। এসব ঘটনা তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার বড় বলয়কে সমৃদ্ধ করেছে। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে পিতার অতি নিকটে থেকে নেত্রী রাজনীতিসহ সব জ্ঞান অর্জন করেছেন।১৯৮১ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত টানা আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে সত্যি সত্যিই সামরিক স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করলেন তিনি। এ সময়কালের মধ্যে তাকে অন্তত দুবার গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দানে এক জনসভায় যোগ দিতে গেলে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের নেতা-কর্মীরা মানবঢাল রচনা করে তাকে রক্ষা করলেও, সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হলেন প্রায় ৩৪ জন মানুষ, আহত হলেন আরও অনেকে।ক্রমবর্ধমান আন্দোলনের চাপে এরশাদ শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও, সামরিক স্বৈরশাসন এবং স্বাধীনতা-বিরোধী ধর্মীয় মৌলবাদের অপচ্ছায়া সম্পূর্ণ দূর হয়নি। ১৯৯০-এর নির্বাচনে তাদের পেটোয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদৌলতে বিএনপি জিতে গেল ভোট চুরির নির্বাচনে। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৬ সালে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে সরকার গঠন করেন। এরপর ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯-এর নির্বাচনগুলোতেও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে তিনি পরপর তিনবার এবং মোট চারবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একাত্তরতম জন্মজয়ন্তীতে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রচিত মানপত্রে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন: ‘তোমার সপ্ততিতম-বর্ষশেষে একান্তমনে প্রার্থনা করি, জীবন-বিধাতা তোমাকে শতায়ু দান করুন; আজিকার এই জয়ন্তী-উৎসবের স্মৃতি জাতির জীবনে অক্ষয় হউক।’ প্রিয় বিশ্বনেত্রীর সাতাত্তর তম জন্মদিনে আমরা এই একই প্রার্থনা করি। সবসময় ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন প্রিয় নেত্রী, শুভ জন্মদিন। লেখক: হক গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আদম তমিজি হক
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
গত ২০ সেপ্টেম্বর আইসিসিবি কনভেনশন Hall 4 , বসুন্ধরাতে বিডি জবস ফ্রেশার ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয় ।PeopleNTech and Higher Study USA পক্ষ থেকে আমি এবং আমাদের টিম অংশগ্রহণ করেছিলাম । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা এখানে শেয়ার করব । আসলে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টা কি ছিল সেটা একটু জানতে চেষ্টা করি । যেহেতু এটা একটা ক্যারিয়ার ফেয়ার, এই ক্যারিয়ার ফেয়ারে সকল অংশগ্রহণকারীদের দৃষ্টি ছিল বিভিন্ন ধরনের জব অপরচুনিটির ওপর। ছবিগুলো দেখে আসলে খুবই সাধারণভাবে বোঝা যাচ্ছে যত না জব ওপেনিং ছিল , তার চেয়ে আগ্রহ প্রার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি । এই যে উপচে পড়া ভিড় , আসলে উপচে পড়া ভিড় এই প্রোগ্রামটিকে ঠিক কতটুকু সফল করেছে ?যদি আয়োজক এর দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করি, এটা খুবই সফল একটি প্রোগ্রাম হয়েছে এখানে অনেকগুলো কোম্পানি তাদের জব সার্কুলার নিয়ে হাজির হয়েছিল। এখন আসি অংশগ্রহণকারী কোম্পানির দৃষ্টিকোণ থেকে। আসলেই কি কোম্পানিগুলো যে জব সার্কুলার গুলো নিয়ে হাজির হয়েছিল, তারা কি এই ফেয়ার থেকে তাদের যোগ্য ক্যান্ডিডেট সিলেক্ট করতে সক্ষম হবে ? May be or May be not 🤨যদি অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলো তাদের পছন্দ অনুযায়ী ক্যান্ডিডেট সিলেক্ট করতে না পারে তাহলে Next step কি? অংশগ্রহণকারী কোম্পানির গুলো যদি তাদের ক্যান্ডিডেট এই মেলা থেকে select করতে না পারে , তাহলে কিন্তু তারা তাদের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী অন্য সোর্স থেকে ক্যানডিডেট ঠিকই খুজে নিবে । তাহলে এত এত অংশগ্রহণকারী যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণ করল, তাহলে তারা কি যোগ্য না ? অবশ্যই তারা যোগ্য।প্রত্যেকটা মানুষই আসলে কিছু না কিছু এমন বৈশিষ্ট্য তার ভেতরে লুকায়িত থাকে, যা অনেকে উন্মোচিত করতে পারে আবার অনেকে পারে না । যদি একটু পজিটিভলি চিন্তা করি , অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে কিছু না কিছু শিখে এই পর্যন্তই এসেছে এবং এই প্রোগ্রাম থেকে কিছু না কিছু এখান থেকে শিখে , তাদের অভিজ্ঞতার ঝুড়ি নিয়ে বাসায় গিয়েছে । একদম প্রথম কথা যদি বলি, এখানে আসার পর অ্যাটলিস্ট প্রত্যেকটা ক্যান্ডিডেট এটা বুঝতে পেরেছে যে , আসলে চাকরির বাজার কতটা কঠিন এবং তাদের প্রতিযোগী র সংখ্যা কেমন? এখন আসি next learning এ । এখানে আসার পর বিভিন্ন কোম্পানি বক্তিবর্গ যারা ছিলেন, তাদের সাথে সরাসরি কথা বলার একটা সুযোগ হয়েছে এবং এখান থেকে তারা নিজেকে যাচাই করার একটা সুযোগ পেয়েছে।সবাই বলে জব নেই জব নেই 😩 আসলে কি ব্যাপারটা তাই ? নাকি Skilled Person নেই । এখন আসি স্কিল্ড হওয়ার জন্য কি করা প্রয়োজন ?নিজেকে আপনি বিভিন্ন ভাবে স্কিল্ড ভাবে গড়ে তুলতে পারেন । আমার একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। করোনা মহামারি চারিদিকে, রিক্রুটমেন্ট অনেক কম। ঠিক তখনই Enroute International এর সাথে ২০২১ সালে শুরু হয় আমার পথচলা । যদিও খুবই অল্প সময়ের জন্য কিন্ত OREC (Observe , Record, Classify and Evaluation ) model সহ নানা বিষয় এসেসমেন্ট এর আমি শিখতে পারি । এছাড়াও কিছু ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজও আমি করেছি এই করোনার মধ্যে। যেহেতু আমার 2nd মাস্টার্স এর Assignment গুলো আমি নিজেই করতাম তাই এসাইনমেন্ট এর উপর আমার আসলে অনেক দিন থেকে দুর্বলতা ছিল ঠিক তখনই কিছু এরকম অ্যাসাইনমেন্টের কাজ পেয়েছিলাম এবং কাজগুলো সফলভাবে শেষ করতে পেরেছিলাম।যতটুকু অভিজ্ঞতা ততটুকু থেকে বলছি যে, আমরা দেখি কোম্পানি স্কিল্ড person খুজে পায় না । এটার কারণটা কি ? আমার কাছে মনে হয়েছে , যে ধরনের স্কিল্ড person কোম্পানি খুজে ,ঠিক ওই ধরনের স্কিল্ড লোকের একটা অভাব মার্কেটের রয়ে গিয়েছে।এখন আসি অ্যাপ্লিকেশন দেখার পর যারা এপ্লাই করেছে তারা আসলেই কি পোস্টটা ইন্টারেস্টেড ফিল করে এপ্লাই করেছে ? নাকি তোতা পাখির মত জাস্ট গৎ বাধা apply করতে হবে তাই এপ্লাই করেছে ? এদিক থেকে আমার যা অভিজ্ঞতা হয়েছে মোস্ট অফ দা টাইম যারা অ্যাপ্লাই করে, অ্যাপ্লাই করার পরে ফোনটা রিসিভ করে না । আর যদিও বা করে তার অভিবেক্তি, আমরা তাকে হাতে পায়ে ধরে ডেকে আনছি , ঐ পজিসনে এ কাজ করার জন্য।আরেকটা বিষয়, অনেকেই ইন্টারভিউ অ্যাটেন্ড করে না । ইন্টারভিউ এটেন্ড না করলে কাইন্ডলি জানিয়ে দেবেন, এটা একটা মিনিমাম কার্টেসি । তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ায় , একটা পজিশনে যখন আপনি অ্যাপ্লাই করছেন তখন কিন্তু আপনাকে শর্টলিস্ট করা হয় । এবং এই purpose এ HR এবং Management এর একটা ভাল সময় যায়। আপনাকে যখন কল করা হবে এটা একটা কোম্পানির এক্সপেক্টেশন থাকে আপনি ইন্টারভিউ টা অ্যাটেন্ড করবেন । যদি আপনি এটেন্ড করতে না পারেন তাহলে আপনি এপ্লাই বা করেছেন কেন ? আরেকটা ক্যাটাগরি কিছু ক্যান্ডিডেট যখন ইন্টারভিউ ফেস করে ,ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কোন আইডিয়া না নিয়ে ইন্টারভিউ অ্যাটেন্ড করে । এই লেখাটি যারা পড়ছেন, আমার একটা রিকোয়েস্ট থাকবে যে আপনি যখন কোথাও এপ্লাই করছেন এটলিস্ট ইন্টারভিউ কল অ্যাটেন্ড করার আগে ওই কোম্পানি অথবা যে জব সার্কুলার দেয়া হয়েছে সেই জব সার্কুলার পরে যাবেন। তাহলে কোম্পানি সম্পর্কে আপনার কিছু ইনফরমেশনও জানা হবে এবং আপনার সম্পর্কে কোম্পানির একটি পজিটিভ ইম্প্রেশন ক্রিয়েট হবে । ইনফরমেশন বলতে পারবেন এবং আপনাকে রিক্রুট করতে সুবিধা হবে । সুতরাং আপনি যদি একজন চাকরিপ্রার্থী হন তাহলে এই বিষয়গুলো একটু খেয়াল রাখবেন। এখন আবার চলে আসি Bdjobs career fair এ । অনেক আগ্রহী প্রার্থীদের দেখে মনে হয়েছে আসলে জব একটা সোনার হরিণ । সবাই জব চাচ্ছে আসলে তারা কি স্কিল্ড কিনা , এটা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই । আমার কাছে মনে হয়েছে যে যারা এসেছে তাদের স্কিল্ড হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আপনি যদি প্রপার স্কিল্ড হন, ইনশাল্লাহ আপনার একটি জব অথবা আপনার একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে । পাশাপাশি আপনি উদ্যোক্তা হতে পারেন । বিভিন্ন ক্ষেত্রে আপনি উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা করতে পারেন , ফ্রিল্যান্সিংও করতে পারেন । সামনের দিনগুলো সবার সুন্দরভাবে অতিবাহিত হোক, শুভকামনা রইল।লিখেছেন - মাছুমা ভুঞা ফারহা শিক্ষা বিষয়ক পরামর্শদাতা। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। যুক্তরাষ্ট্র।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথাবাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই সূত্রে গাঁথা। একই অবিনাশী সত্তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। বাংলা, বাংলার প্রকৃতি, বাংলার মানুষ, জীবন-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখনই সাড়ে সাত কোটি মানুষের আলোকবর্তিকা হয়ে, মুক্তির বাণী হাতে জন্ম নেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির রাখাল রাজা, বাঙালির মুক্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জন্মের সঙ্গেই বাংলার, বাংলার ধর্মপ্রাণ, শান্তি প্রিয়, কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।তার লক্ষ্য ছিল লুণ্ঠিত মানবতার উদ্ধার, ব্রত ছিল মানব কল্যাণ আর আদর্শ ছিল সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বজ্র কণ্ঠে প্রতিবাদ। টুঙ্গিপাড়ার ছোট্ট একটি ঘরে জন্ম নেওয়া শেখ মুজিব এককালে দেশ, কাল, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে পুরো বিশ্বের অন্যতম নেতা হয়ে অধর্ম, অশান্তি, অন্যায়, অবিচার ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে ভারতীয় উপমহাদেশের মানচিত্র এভাবে বদলে দেবেন তা হয়তো কেউই আঁচ করতে পারেননি। মুজিব চেতনায় জাগ্রত, হৃদয়ে স্পন্দিত, শোকাহত-প্রতিবাদী-মুজিব বিপ্লবী জনতা কোটি কোটি।ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও যে বাঙালি নির্ভীক চিত্তে বাঙালির জয়গান গেয়েছেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন, মুক্তির সংগ্রাম আর বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত ছিলেন তিনি। তিনি জানতেন বাঙালিকে স্বাধীন করতে হলে কি ধরনের মূল্য দিতে হবে। জীবনপণ সংগ্রাম করতে হবে। কেউ তাকে দাবায়ে রাখতে পারেনি। খোকা, ‘মুজিব’ থেকে সংগ্রামের মাধ্যমেই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।বঙ্গবন্ধু যখন একটি উন্নত, স্বাধিকারচেতা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালি জাতির স্বপ্ন দেখেছেন তখন বাংলা ও বাংলার মানুষ ইংরেজদের শোষণে বিপন্ন ছিল আর এর পর পাকিস্তানি রক্তপিপাসু হায়েনারা এসে ধর্মের নামে আমাদের মাতৃভাষা, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের অধিকার, আমাদের সম্মান, আমাদের স্বাধীনতার ইচ্ছা সবই কেড়ে নিতে চেয়েছিল। তখন একজন তরুণ মুজিব ছিলেন বলেই তখনো বাংলার শিরায় শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল, একজন দৃঢ় মুজিব ছিলেন বলেই পাকিস্তানি শোষকেরা আমাদের ভাষা, আমাদের অধিকার কেড়ে নিতে পারেনি।বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছিল অসাম্প্রদায়িকতার প্রচার ও সাম্প্রদায়িকতার অবসান। আজ যে স্বাধীনতা আমরা উপভোগ করছি, যে স্বাধিকার আমাদের মাঝে বিদ্যমান তা সেই মহান মানুষটারই অবদান। তিনিই সবার প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন ধর্মের ভিত্তিতে দেশ চললে বাঙালি জাতির আলোক শিখা হয়ে যাবে, তিনি আঁচ করেছিলেন স্বাধীন ভূমি ব্যতীত শান্তি অসম্ভব আর তাই উদ্ভাবন করেছিলেন ছয় দফা। ছয় দফা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘সাঁকো দিলাম স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতায় উন্নীত হওয়ার জন্য।’শেখ মুজিব যে পাকিস্তানের জন্য হুমকি হয়ে উঠবেন তা পাকিস্তানি শাসকেরা বুঝতে পেরেছিলেন আর তাই আগরতলা মামলার মাধ্যমে তাকে সরিয়ে দিয়ে বাঙালি জাতির ভেতর সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের পূর্বেই নিভিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করে। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে একই সূত্রে গাঁথা বলে ভাবতেন। এ জন্যই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সরকার স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের নিকট প্রস্তাব করে ‘শেখ মুজিবকে চাও, নাকি স্বাধীনতা চাও?’ অর্থাৎ পাকিস্তান সরকারের এই হিংসাত্মক ও অচেতন প্রস্তাব থেকেই প্রমাণিত হয় যে বঙ্গবন্ধুকে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমার্থক হিসেবে দেখেছেন।জবাবে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন ‘আমরা শেখ মুজিবকেও চাই, স্বাধীনতাও চাই।’ তাজউদ্দীন আহমদও বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অভিন্নরূপে দেখেছেন। তিনি জানতেন বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশ অসম্ভব। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বাংলাদেশ মানে বঙ্গবন্ধুর দেশ বলে জানতেন, তারা বঙ্গবন্ধুর কারণেই এ দেশকে চিনেছেন। ১৯৭৩ সালে ন্যাম এর আলজিয়ার্স সম্মেলনে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি, ব্যক্তি ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের সমতুল্য।’ এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ত্ব নিয়েই তিনি সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করেছেন, জেলখানায় বসেও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নজাল বুনেছেন, রাইফেলের মুখেও অটল থেকেছেন। এই সাহসিকতা নিয়েই হেঁটে চলেছেন গেঁয়ো পথে, কৃষকের দুয়ারে, দিল্লি হতে লাহোরে আর সবখানেই বাঙালির মুক্তির চিরন্তন বাণী গেয়েছেন।বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ নাম দুটিকে কখনো ভিন্নরূপে কল্পনাও করা যায় না। একটিকে আরেকটি থেকে আলাদা করা যায় না। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই উর্বর ভূমি, এর ভেতর বাস করা ১৮ কোটি মানুষ এবং এর সংস্কৃতিকে যদি একটি দেহরূপে কল্পনা করা হয় তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সেই দেহের প্রাণ। এই দেহ তৈরি আর শৈশবে লালিত হয়েছে তারই হাত ধরে এবং এখন বিকশিত হচ্ছে তারই অংশ, তার আদর্শের বাস্তব রূপ শেখ হাসিনার হাত ধরে। পিতা এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা, রেখে গিয়েছেন আদর্শ, তারই কন্যা দিয়েছেন উন্নয়ন, চির উড্ডীন সবুজের মাঝে লাল সূর্য।তাই মুজিব মানেই বাংলাদেশ। মুজিব আদর্শই বাংলাদেশের অলিখিত সংবিধান। বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র, শোষণ দূর করার হাতিয়ার, আর উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ আদর্শকে ধারণ করেই দেশরতœ শেখ হাসিনা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। অল্প সম্পদ স্বল্প পুঁজি, অদক্ষ জনগণ নিয়েও লড়াই করে বাঁচতে শিখিয়েছেন। শতভাগ বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে আলোকিত করেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকে, তৈরি করেছেন স্বপ্নের পদ্মা সেতু, চালু করেছেন মেট্রোরেল, আকাশের বুকে উড়িয়েছেন শান্তির কপোতরূপী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, আর দৃশ্যমান করেছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ। এগিয়ে চলেছেন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে।সেই স্বপ্নের মূলমন্ত্র হয়েও পথ দেখাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, সেই পথে সহায়ক হয়ে কাজ করবে মুজিব আদর্শে উজ্জীবিত তরুণরা, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন ও অনুপ্রেরণা জোগাবেন নারীরা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আর সমুদ্র অর্থনীতির উপযুক্ত ব্যবহার করে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং আঞ্চলিক শক্তি থেকে বিশ্বশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বঙ্গবন্ধুর দেখিয়ে যাওয়া পথই হোক আমাদের পথ, তার আদর্শই হোক আমাদের আদর্শ, তার শোকই হোক আমাদের শক্তি, তার ভালোবাসাই হোক আমাদের অনুপ্রেরণা।জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। - আদম তমিজি হক, সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা
নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৬ আগস্ট ২০২৩
আর আট দশটা সাধারন মেয়ের মত বেড়ে ওঠা আমার। অস্তিত্ত্বের মাঝে একাত্তর একটা আলাদা জায়গা নিয়ে ছিল আমার চিরদিন। আমাকে ছোটবেলায় সবাই ফারহা নামে ডাকতো। ফারহা থেকে ফারহানা হানিপ, এতগুলো বছরের পথচলা আমাকে একদিনের জন্যও দেশ কিংবা দেশের মাটি থেকে আলাদা করতে পারেনি। বরং প্রতিটি মুহূর্তে আমি অনুভব করেছি মাটি, মা আর একাত্তরকে। আমার কাছে বাঙালীয়ানা শব্দটার পূর্নতা বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের ৭ই মার্চের ভাষনে আর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটা একটুকরো বাংলাদেশ। আমি সবসময় চাইতাম আমার সন্তান যেন ঠিক আমার মত করেই দেশ, মাটি, একাত্তর, বঙ্গবন্ধুকে আপন করে নেয় হৃদয়ের অন্ত:স্তলে।লেখালেখি আমি তেমন একটা করিনা। সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় আর সংসার সামলে ঠিক হয়েও ওঠেনা। কিন্তু মার্চ মাস এলেই কেমন জানি লাগতে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছিল এই মার্চ মাসেই। দেশাত্মবোধক গানগুলো শুনে আজও আমার রোমকূপ দাঁড়িয়ে যায়। ‘৭১ এ আমার জন্ম হয় নি, কিন্তু বাবা-মার কাছে অনেক শুনেছি সেই উত্তাল দিনগুলোর কথা। অনেকের মতই জীবন সংগ্রামে আজ বসতি গড়েছি বিদেশের মাটিতে, কিন্তু শিকড়টা ঠিকই পড়ে আছে আমার মাতৃভূমি, বাংলাদেশে।তাই দেশকে নিয়ে কিছু লেখার সুযোগ পেয়ে লোভ সামলাতে পারলাম না। আমার তিন মেয়ে। নাফিসা, প্রিয়েতা আর ইলাফ। ছোট মেয়েটা তখন খুবই ছোট। গত বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে মেয়েদের নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশে বেড়াতে। উদ্দেশ্য ছিল পরিবারের সাথে ঈদ করা আর বিদেশে যে জিনিসটা খুব মিস করি; মেয়েদের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস আর সংস্কৃতির সংযোগ তৈরি করে দেয়া। মাত্র কয়েক সপ্তাহর ছুটি। কিন্তু শত ব্যস্ততার মধ্যেও এবার চেয়েছিলাম মেয়েদেরকে কিছু হলেও ঢাকা শহর ঘুরিয়ে দেখাব। লিস্ট করলাম কোথায় কোথায় যাওয়া যায়; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘর, লালবাগের কেল্লা, আহসান মঞ্জিল ইত্যাদি ইত্যাদি।ঢাকায় পৌঁছানোর পরই নানা কাজের ব্যাস্ততায় দেখতে দেখতে সময়টা শেষ হয়ে এলো! কিন্তু এবার না হলেই নয়... দিনটি ছিল আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ। জাতীয় শোক দিবস আবার সরকারি ছুটির দিনও। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে প্রাণ হারান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। ভাবছিলাম আজকের দিনটায় কি করা যায়। দেখতে দেখতে চলে যাবার সময় হয়ে গেলো, আর কিছুদিন পরেই আমেরিকায় ফিরতে হবে। ভাবলাম সময় নষ্ট না করে আজকের এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে রাখার জন্য সবচেয়ে ভাল হবে যদি ওদেরকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতি জাদুঘরটা ঘুরে আসা যায়। ওরাও জানলো মাতৃভূমি জন্মের ইতিহাস। কয়েকজন বন্ধুদেরকে ফোন দিলাম কিন্তু কাওকেই পেলাম না, সবাই পরিবার নিয়ে কোথাও না কোথাও ছুটি কাটাতে গিয়েছে। অতঃপর আমাদের যাত্রা ধানমণ্ডি ৩২ নং এর ঐতিহাসিক বাড়ি। ড্রাইভার বেশ অবাক হয়ে বলল, আপা আজ তো সব বন্ধ- শপিং মল, দোকানপাট সব বন্ধ। আমি বললাম ধানমণ্ডি ৩২এ চল। গাড়িতে আমি, দুই মেয়ে আর আমার ভাগ্নে লিংকন। ঘুরতে বের হয়ে প্রথমে বাচ্চাদের আগ্রহ যমুনা ফিউচার পার্ক বা হাতিরঝিল ফ্লাইওভারে থাকলেও পরের ঘটনা ছিল একেবারে ভিন্নরকম!কথা বলতে বলতে কখন যে গাড়ি পৌঁছে গেলো টেরই পাইনি। যদিও ধানমণ্ডি এলাকায় বেশ ট্রাফিক এ পড়তে হয়েছিল। কয়েক বছরে আশেপাশের পরিবেশ অনেক বদলে গেছে। ধানমন্ডির লেক সার্কাসে৩২ নম্বর রোডেই সেই স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি। এখানেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সপরিবারে ছিলেন। এই বাড়ি থেকেই পাকিস্তানী সৈন্যরা তাকে অসংখ্যবার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি এখান থেকেই দেশ পরিচালনার কাজ করতেন। বাড়ির প্রতিটি জায়গায় বঙ্গবন্ধুর সেই সময়ের সব চিহ্নগুলোকে সেভাবেই রেখে দেয়া হয়েছে।১৯৯৪ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের ধানমণ্ডি ৩২ এর এই বাড়িটি বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। পরে ট্রাস্ট তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সেটাকে জাদুঘরে রূপান্তর করে আর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয় ১৯৯৭ সালে। গেটে ঢুকতেই সিকিউরিটি চেকিং। ব্যাগ, মোবাইল, ক্যামেরা সব রেখে ঢুকতে হয়। মেয়েরা ছোট, তাই ক্যামেরা সাথে নেয়ার জন্য খুব বায়না ধরল, কিন্তু ওদেরকে না বললাম। বাসার নিচতলায় বঙ্গবন্ধুর অফিস রুম। গুলির আঘাতে সব ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। সব ঠিক সেভাবে সংরক্ষণ করা আছে। এছাড়া তার বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিবিজড়িত ছবি দিয়ে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে গাইডের ব্যাবস্থাও আছে যিনি জাদুঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে এর ইতিহাসও বর্ণনা করলেন আমাদের কাছে। আমি বুঝতে পারলাম মেয়েরা তখন আগ্রহ পাচ্ছে। ওদের জন্য বাংলা, আর ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছিল। কিন্তু ওদেরকে আমাদের দেশের ইতিহাস পড়ে শোনাতে আমার খুব ভাল লাগছিল। দোতলায় বঙ্গবন্ধুর বেডরুম। এতো বড় মাপের একজন মানুষ, কিন্তু তাঁর কী সাধারণ আটপৌরে জীবন। কোন বিলাসিতা নেই! বাড়ির ভেতরটা ছিল খুবই শান্ত, বিশেষ দিন হওয়াতে লোকজনের বেশ ভিড় ছিল। তবু আমি ওদেরকে পুরো বাড়ির সবগুলো ঘর ঘুরে দেখালাম। হায়নাদের গুলির আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল চারপাশের সব দেয়ালগুলো। সেই গুলিতে একতলার সিঁড়িতে লুটিয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাশেই পড়ে থাকা তাঁর ভাঙা চশমা ও পছন্দের তামাকের পাইপটি আজও একিভাবে রাখা আছে। রিসেপশান, বেডরুমের সামনে, সিঁড়িতে, বাথরুমে সব জায়গায় নারকীয় পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে সপরিবারে হত্যা করে খুনিরা। বাচ্চারা প্রতিটি জিনিস খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল, শুনছিল আর কাগজে নোট করছিল। একটা সময়ে হঠাত খেয়াল করলাম, বড় মেয়েটা খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছে। আমি বুঝতে পারলাম, কিন্তু কিছু বললাম না। সবশেষে গেলাম শেখ রাসেলের রুম এ। তার সেই ব্যবহৃত খেলনা বাই সাইকেল সব ওভাবেই পড়ে আছে। তখন নাফিসা আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারল না। আমাকে জরিয়ে ধরে হাঁটছে, ছবি আর জিনিসের কাপশান পড়ছে আর তার চোখ দিয়ে পানি পড়েই যাচ্ছে। ঘুরতে ঘুরতে আমরা চলে গেলাম বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলের রুমের পাশের ছাঁদে। কেন জানি না, এমন এক মুহূর্তে বাইরে ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। মনের অবস্থা আর পুরো পরিবেশের সাথে একদম মানিয়ে গিয়েছিল বৃষ্টিটা। অচেনা বাতাস আর একটা দীর্ঘশ্বাস। লিওন তখন আমাকে বলল, ফুপ্পি, আমার স্কুল এখানেই। আমরা এখানে আসে পাশে অনেক আসি। কিন্তু এই জাদুঘরে আগে আসা হয়নি। সত্যি, এখানে এসে আমাদের দেশ নিয়ে অনেক কিছু জানলাম। থ্যাঙ্ক ইউ।বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি। আমার সন্তানদের জানাতে চাই ওদের মাতৃভূমি সম্পর্কে, কিভাবে জন্ম হল, কিভাবে স্বাধীন হল, কাদের অবদানের জন্য আমরা আজ বাংলায় কথা বলতে পাড়ি, আমার দেশের ইতিহাস অবশ্যই জানা উচিত। মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। ৯ মাস সংগ্রাম, আন্দোলন এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে আমরা যে স্বাধীন দেশ পেয়েছি, মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষার জন্য এই আত্মত্যাগের উদাহরণ ইতিহাসে বিরল। আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনকরে বলতে চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন আমদের দেশ নিয়ে ভাবে, দেশের ইতিহাস জানে, দেশের জন্য কাজ করে। তাহলেই তারা খুশি হবেন। গ্রীষ্মের ঐ ছুটিতে মেয়েদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে যাওয়া ছিল আমাদের জন্য সত্যিই সেরা সিদ্ধান্ত ও অভিজ্ঞতা। - লেখক : ফারহানা হানিপ, ওয়াশিংটন প্রবাসী।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৫ আগস্ট ২০২৩
১৫ আগস্ট আমাদের জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন। ইতিহাসের কলঙ্কিত কালো দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়। ৪৬ বছর আগে এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল। বাঙালির মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তখনই ঘটানো হয় ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের কালরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুননেছা, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান। জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সকল শহীদকে।বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তার মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব। কেননা একটি জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্থপতি তিনিই। যতদিন এ রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন অমর তিনি। সমগ্র জাতিকে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় প্রস্তুত করেছিলেন ঔপনিবেশিক শাসক-শোষক পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে। তাই চিরঞ্জীব তিনি এ জাতির চেতনায়। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শের নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষ দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। শোষক আর শোষিতে বিভক্ত সেদিনের বিশ্ববাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের পক্ষে।“পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়। সেদিন তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ এই অমর আহ্বানেই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিপীড়িত কোটি বাঙালি। সেই মন্ত্রপূত ঘোষণায় বাঙালি হয়ে উঠেছিল লড়াকু এক বীরের জাতি।আবার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেও বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেই জাতি শুনেছিল মহান স্বাধীনতার অমর ঘোষণা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওই রাতে বঙ্গবন্ধুকে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাকে বন্দি থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারে। তার আহ্বানেই চলে মুক্তিযুদ্ধ। বন্দিদশায় মৃত্যুর খবর মাথায় ঝুললেও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি অকুতোভয় এ মহান নেতা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। বীরের বেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু।দেশে ফিরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি দেশের মানুষকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। দেশগড়ার এই সংগ্রামে চলার পথে তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তার দেশের মানুষ কখনও তার ত্যাগ ও অবদানকে ভুলে যাবে না। অকৃতজ্ঞ হবে না। নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু তাই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সাধারণ বাড়িটিতেই বাস করতেন।মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একের পর এক চক্রান্তের ফাঁদ পেতেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কয়েকজন সদস্যকে ষড়যন্ত্রকারীরা ব্যবহার করেছে ওই চক্রান্তেরই বাস্তব রূপ দিতে। এরাই স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে হামলা চালায় গভীর রাতে। হত্যা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে। বিশ্ব ও মানবসভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সেদিন তারা কেবল বঙ্গবন্ধুকেই নয়, তার সঙ্গে বাঙালির হাজার বছরের প্রত্যাশার অর্জন স্বাধীনতার আদর্শগুলোকেও হত্যা করতে চেয়েছিল। মুছে ফেলতে অপপ্রয়াস চালিয়েছিল বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। বঙ্গবন্ধুর নৃশংসতম হত্যাকান্ড বাঙালি জাতির জন্য করুণ বিয়োগগাথা হলেও ভয়ঙ্কর ওই হত্যাকাণ্ডে খুনিদের শাস্তি নিশ্চিত না করে বরং দীর্ঘ সময় ধরে তাদের আড়াল করার অপচেষ্টা হয়েছে। এমনকি খুনিরা পুরস্কৃতও হয়েছে নানাভাবে। হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার মোশতাক সরকার।সেই কালো রাতে যা ঘটেছিলবঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী (রেসিডেন্ট পি এ) জনাব আ ফ ম মোহিতুল ইসলাম এর এজাহারে বর্ননানুসারে)১৯৭৫ সালে তিনি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে কর্মরত ছিলেন। ১৪ আগষ্ট (১৯৭৫) রাত আটটা থেকে ১৫ আগষ্ট সকাল আটটা পর্যন্ত তিনি ডিউটিতে ছিলেন ওই বাড়িতে। ১৪ আগষ্ট রাত বারোটার পর ১৫ আগষ্ট রাত একটায় তিনি তাঁর নির্ধারিত বিছানায় শুতে যান।মামলার এজাহারে জনাব মোহিতুল উল্লেখ করে বলেন, ‘তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা খেয়াল নেই। হঠাৎ টেলিফোন মিস্ত্রি আমাকে উঠিয়ে (জাগিয়ে তুলে) বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনাকে ডাকছেন। তখন সময় ভোর সাড়ে চারটা কী পাঁচটা। চারদিকে আকাশ ফর্সা হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু ফোনে আমাকে বললেন, সেরনিয়াতের বাসায় দুষ্কৃতকারী আক্রমণ করেছে। আমি জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করলাম। অনেক চেষ্টার পরও পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাইন পাচ্ছিলাম না। তারপর গণভবন এক্সচেঞ্জে লাইন লাগানোর চেষ্টা করলাম। এরপর বঙ্গবন্ধু ওপর থেকে নিচে নেমে এসে আমার কাছে জানতে চান পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে কেন কেউ ফোন ধরছে না। এসময় আমি ফোন ধরে হ্যালো হ্যালো বলে চিৎকার করছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বললেন আমি প্রেসিডেন্ট বলছি। এসময় দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে একঝাঁক গুলি এসে ওই কক্ষের দেয়ালে লাগল। তখন অন্য ফোনে চিফ সিকিউরিটি মহিউদ্দিন কথা বলার চেষ্টা করছিলেন। গুলির তান্ডবে কাঁচের আঘাতে আমার ডান হাত দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। এসময় জানালা দিয়ে অনর্গল গুলি আসা শুরু হলে বঙ্গবন্ধু শুয়ে পড়েন। আমিও শুয়ে পড়ি।কিছুক্ষণ পর সাময়িকভাবে গুলিবর্ষণ বন্ধ হলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়ালেন। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। ওপর থেকে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুল বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবী ও চশমা নিয়ে এলো। পাঞ্জাবী ও চশমা পরে বঙ্গবন্ধু বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বললেন আর্মি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি এত গুলি চলছে তোমরা কি কর? এসময় শেখ কামাল বলল আর্মি ও পুলিশ ভাই আপনারা আমার সঙ্গে আসুন। কালো পোশাক পরা একদল লোক এসে শেখ কামালের সামনে দাঁড়ালো। আমি (মোহিতুল) ও ডিএসপি নূরুল ইসলাম খান শেখ কামালের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নরুল ইসলাম পেছন দিক থেকে টান দিয়ে আমাকে তার অফিস কক্ষে নিয়ে গেল। আমি ওখান থেকে উঁকি দিয়ে বাইরে দেখতে চেষ্টা করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমি গুলির শব্দ শুনলাম। এসময় শেখ কামাল গুলি খেয়ে আমার পায়ের কাছে এসে পড়লেন। কামাল ভাই চিৎকার করে বললেন, আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল, ভাই ওদেরকে বলেন।’মোহিতুল ইসলামের এজাহারের বর্ণনায় বলেন, ‘আক্রমণকারীদের মধ্যে কালো পোশাকধারী ও খাকি পোশাকধারী ছিল। এসময় আবার আমরা গুলির শব্দ শোনার পর দেখি ডিএসপি নূরুল ইসলাম খানের পায়ে গুলি লেগেছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম আক্রমণকারীরা আর্মির লোক। হত্যাকান্ডের জন্যই তারা এসেছে। নূরুল ইসলাম যখন আমাদেরকে রুম থেকে বের করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন তখন মেজর বজলুল হুদা এসে আমার চুল টেনে ধরলো। বজলুল হুদা আমাদেরকে নিচে নিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড় করালো। কিছুক্ষণ পর নিচে থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শুনলাম। বিকট শব্দে গুলি চলার শব্দ শুনতে পেলাম আমরা। শুনতে পেলাম মেয়েদের আত্মচিৎকার, আহাজারি। এরইমধ্যে শেখ রাসেল ও কাজের মেয়ে রুমাকে নিচে নিয়ে আসা হয়। রাসেল আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, আমাকে মারবেনাতো। আমি বললাম না তোমাকে কিছু বলবে না। আমার ধারণা ছিল অতটুকু বাচ্চাকে তারা কিছু বলবে না। কিছুক্ষণ পর রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রুমের মধ্যে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর মেজর বজলুল হুদা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের গেটে দাঁড়িয়ে থাকা মেজর ফারুককে বলে, অল আর ফিনিশড।’অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল ফারুক রহমানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি বলেন, খোন্দকার মোশতাকের নির্দেশে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট তিনি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই বাসভবনে অভিযানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তিনি। অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল রশিদ দায়িত্ব পালন করেছেন বঙ্গভবনে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডালিম ছিলেন বেতার কেন্দ্রে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সামরিক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বন্টন করেছেন তিনি (ফারুক) নিজেই।-আদম তমিজি হক, সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ১২ আগস্ট ২০২৩
আজ বিস্কুট খাওয়ার দিনআজ বিস্কুট খেয়েছেন তো? এমন প্রশ্ন হঠাৎ কেউ করলে চমকে যাবেন না! কারণ আজ বিস্কুট খাওয়ার দিন। আমরা অবশ্য প্রায় সবাই বিস্কুট নানা কারণে খাই। সকাল-বিকালের নাস্তা, স্কুলের টিফিন, যে কোনো আড্ডায় চায়ের সঙ্গে যে জিনিসটির মানিকজোড় সেটি হলো বিস্কুট। ফলে দিন মেনে বিস্কুট খাওয়ার প্রসঙ্গ হয়তো অনেকের কাছে অবান্তর মনে হবে। কিন্তু সত্যিই এমন এক দিন আছে যে দিনটি শুধু বিস্কুটের জন্য।দিনটি হলো ২৯ মে; বিস্কুট দিবস। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিত হয় এই দিবস। বাংলাদেশে এই দিবস পালন হওয়ার কোনো খবর এখনো শোনা যায়নি। বিস্কুট জাতীয় সব ধরনের খাবারের গুরুত্ব তুলে ধরতেই দিবসটির সূচনা। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রাচীন গ্রিক, রোমান ও মিসরীয় সাম্রাজ্যের সামরিক বাহিনীর সদস্য ও ব্যবসায়ীদের বছরের একটি দীর্ঘ সময় সমুদ্র কিংবা দুর্গম অঞ্চলে কাটাতে হতো। তখন এমন একটি খাবারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, যা হবে ওজনে হালকা ও পর্যাপ্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ এবং সহজে নষ্ট হবে না। এত সব বিষয়ের সমন্বিত সমাধান হিসেবেই আবিষ্কার করা হয় বিস্কুট।ল্যাটিন শব্দ ‘বিস’ ও ‘ককটাস’ থেকে বিস্কুট শব্দের উৎপত্তি। বিস শব্দের অর্থ দুইবার আর ককটাস শব্দের অর্থ রান্না করা বা আগুনে সেঁকা। অতীতে দুই ধাপে আগুনে সেঁকে বিস্কুট বানানো হতো। আরো মজার ব্যাপার, প্রথমদিকে মদ বা বিয়ার তৈরির জন্য বিস্কুট ব্যবহার করা হতো। প্রাচীন সুমেরীয়রা বার্লির রুটি ছোট ছোট টুকরো করে মজুত করে রাখতেন। মদ তৈরির জন্য গরম পানিতে এই টুকরোগুলো দিতেন। ম্যাশ করে তার সঙ্গে মেশাতেন মধু। এরপর এটি গাঁজিয়ে তৈরি হতো মদ।আমাদের দেশে হরেক রকমের বিস্কুট পাওয়া যায়। এগুলো খেতে সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। প্যাকেটজাত বিস্কুটের পাশাপাশি পাওয়া যায় খোলা কিংবা বেকারির বিস্কুট। তো বিস্কুট যখন কম-বেশি আমরা খাই, আজ কাজের অবসরে বিস্কুট খেয়ে দিনটি স্মরণীয় করে রাখা যেতেই পারে।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৯ মে ২০২৩
কয়েক দিনের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম বেড়েছে।সঙ্গে ব্যাপক হারে বেড়েছে মাছের দামও। সোমবার সকালে ঢাকার কাঁচাবাজারে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।কয়েক মাস ধরে গরু ও খাসির মাংস ছোঁয়াই যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় মাছ দিয়ে মাংসের স্বাদ নেওয়ার চেষ্ট করছিলেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। রমজান সামনে রেখে মাছের দামও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবজির দামও। মাংসের পর সবজি ও মাছের এ অসহীয় মূল্যে নাজেহাল হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। রাজধানীর বসন্ধুরা এলাকার জোয়ার সাহারা মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে; অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ৩০০ টাকা।সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১২০ টাকা। তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা অথচ যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৬০ টাকা। পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। কই মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০০ টাকা।চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০০ টাকা। শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫০ টাকা।মাছের দাম বাড়ার বিষয়ে মাছ ব্যবসায়ী সুলাইমান ইসলাম বলেন, মাছের ফিডের (খাবার) দাম বাড়ার পর থেকে মাছের দাম বেড়ে গেছে। ফিডের দাম বাড়ায় মাছচাষিদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের নিকট বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে ক্রয় করার ফলে ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মাছের দাম সহনীয় হবে বলে আশা করছেন ওই ব্যবসায়ী।অন্যদিকে শীতের শেষের দিক থেকেই বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কয়েক দিন থেকে আরও বেড়েছে সব সবজির দাম। দুই-একটি সবজি ছাড়া কোনো সবজিই ৫০-৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।বসুন্ধরা এলাকার জোহার সাহারা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পটল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ৩০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা অথচ আগে ছিল ৪০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, সজনে প্রতি কেজি ২০০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ২০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা।ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৪০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ।এদিকে ঊর্ধ্বগতির বাজারে কয়েকটি সবজির তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে দাম কমেছে। যেমন— করলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা, লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ টাকা। অন্যদিকে ডিম হালি প্রতি ৫ টাকা করে কমেছে। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ৫০ টাকা। অন্যদিকে মাংসের দাম খুব একটা বাড়েনি। গরু ৭৫০টাকা, খাসি ১২০০ টাকা, ব্রয়লার ২৫০ টাকা, সোনালী ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম বাড়ার বিষয়ে সবজি বিক্রেতা কবির মিয়া বলেন, শীতকালীন সবজি বেশি উৎপাদিত হয়, ফলে কিছুটা দাম কম থাকে। শীত শেষ হয়ে গেছে এ জন্য সবজি উৎপাদনও কমে গেছে। এর ফলে দাম বাড়ছে । রমজান মাসে আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে।সবজির দাম কেন বাড়তি—এ বিষয়ে একই বাজারের সবজি বিক্রেতা সবুজ আলী বলেন, শীতের মৌসুম শেষে সবজির দাম বাড়তি থাকবে এটা স্বাভাবিক। কারণ এ সময় শীতের সবজির মৌসুম শেষে সিজনাল সবজিগুলো আর হচ্ছে না। নতুন মৌসুমের সিজনাল সবজি উঠতে শুরু করলে আবার দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে শীতের সময় যতটা কম দামে সবজি কেনা গেছে, এখন আর অতটা কমে সবজি পাওয়া যাবে না। সোমবার বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত আব্দুর রহিম। বর্তমান কাঁচাবাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে একই রকমভাবে বাজারে বাড়তি দামে সব পণ্য ক্রয় করতে হচ্ছে।কষ্টের বিষয় হলো— কোনো জিনিসের দাম বাড়লে পরে আর তা কমে না। যতই দিন যায়, ততই বাড়তেই থাকে। আমাদের বেতন তো আর সপ্তাহ বা মাস পর পর বাড়ে না। শীতের ভরা মৌসুমে সবজির দাম কিছুটা কম ছিল; কিন্তু শীত কমতে শুরু করতেই সবজিগুলোর দাম হু হু বেড়েছে। বসুন্ধরা এলাকায় বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রবিউল ইসলাম। বর্তমান বাজারের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাংস কেনা তো মুশকিল আবার মাছের বাজারও চড়া। তবে আগে তেলাপিয়া, পাঙাশ, চাষের কই এমন জাতীয় মাছ কিনে খাওয়া যেত কিন্তু এখন আর এগুলোর কম দাম নেই। এসবের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আয়-ব্যয়ের হিসেব এখন মেলানো যাচ্ছে না।তিনি আরও বলেন, ডাল, ভাত, মাছ সবজি খেয়ে যারা কোনোভাবে টিকে থাকছে, তাদেরও এখন বিপদ। অতিরিক্ত দামের কারণে আমরা সাধারণ মানুষরা আগে থেকেই ভালো মাছ খেতে পারি না। আর যেসব কম দামি মাছ ছিল, এখন সেগুলোর দামও বেড়ে গেছে। একইভাবে বেড়েছে সবজির দাম। আমরা সাধারণ ক্রেতারা কোথায় যাব?
নিজস্ব প্রতিবেদক । ১৩ মার্চ ২০২৩
অমর একুশে বই মেলায় মাতৃভাষা দিবসে প্রকাশিত হলো বিদ্যুত জাহিদের উপন্যাস সোনালি অভিশাপ।মঙ্গলবার ২১ শে ফেব্রুয়ারি অমর একুশে বই মেলায় বিদ্যুত জাহিদের রচিত উপন্যাস সোনালি অভিশাপ প্রকাশ পায়।বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় ৪৯ নং স্টলের পাতা প্রকাশনীতে।বইপ্রকাশের পর লেখক বিদ্যুত জাহিদ তার এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ‘বাংলা ওয়্যার’-কে বলেন, 'উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ইছামতি নদীর এই পাড়ের সাতক্ষীরা এবং ঐ পাড়ের উত্তর চব্বিশ পরগনার ভূঅঞ্চল ঘিড়ে আবর্তিত। বাংলা সাহিত্য হইতে বিলুপ্ত প্রায় সাধু রীতি’র আস্বাদন পাওয়া যাইবে এই বইটিতে। সাথে থাকিবে সময়ের অতলে শেষ হইয়া যাওয়া জমিদারী সমাজের আলো আঁধারের খেলা।'উপন্যাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক জাহিদ বলেন, 'ইতিমধ্যে তার লেখা বইটি পাঠকদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।এবারের একুশে বই মেলায় বইটি সর্বোচ্চ সংখ্যক বিক্রি হবে বলে আশা রাখছি।'এছাড়াও বিদ্যুত জাহিদের লেখা কাব্যগ্রন্থ হলো-এক আমি শ্রাবণ, শাল পিয়ালের বনে চন্দ্রিমা রাতে, নদীর নাম পারুল। তিনি ছোটগল্পও লিখেছেন সেটি হলো-'বুকে বৃষ্টির শব্দ' এবং বর্তমানে তিনি আরও কিছু বই লেখার কাজ করছেন যেগুলা আগামী বই মেলায় প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন এই লেখক, কবি এবং সাংবাদিক।লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত আছেন। বর্তমানে তিনি ‘বাংলা ওয়্যার’ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
এবারের অমর একুশে বইমেলায় আসছে লেখক বিদ্যুত জাহিদের লেখা পঞ্চম বই 'সোনালি অভিশাপ'। এটি একটি উপন্যাস।পহেলা ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়ার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত বই মেলাতে এটি পাওয়া যাবে। আগ্রহীরা সরলরেখার ৩৫৬ নং স্টলে গিয়ে 'সোনালি অভিশাপ' উপন্যাসটি সংগ্রহ করতে পারবেন।লেখক বিদ্যুত জাহিদ তার এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে ‘বাংলা ওয়্যার’-কে বলেন, 'উপন্যাসটির প্রেক্ষাপট ইছামতি নদীর এই পাড়ের সাতক্ষীরা এবং ঐ পাড়ের উত্তর চব্বিশ পরগনার ভূঅঞ্চল ঘিড়ে আবর্তিত। বাংলা সাহিত্য হইতে বিলুপ্ত প্রায় সাধু রীতি’র আস্বাদন পাওয়া যাইবে এই বইটিতে। সাথে থাকিবে সময়ের অতলে শেষ হইয়া যাওয়া জমিদারী সমাজের আলো আঁধারের খেলা।'উপন্যাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক জাহিদ বলেন, 'ইতিমধ্যে তার লেখা বইটি পাঠকদের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।এবারের একুশে বই মেলায় বইটি সর্বোচ্চ সংখ্যক বিক্রি হবে বলে আশা রাখছি।'এছাড়াও বিদ্যুত জাহিদের লেখা কাব্যগ্রন্থ হলো-এক আমি শ্রাবণ, শাল পিয়ালের বনে চন্দ্রিমা রাতে, নদীর নাম পারুল। তিনি ছোটগল্পও লিখেছেন সেটি হলো-'বুকে বৃষ্টির শব্দ' এবং বর্তমানে তিনি আরও কিছু বই লেখার কাজ করছেন যেগুলা আগামী বই মেলায় প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন এই লেখক, কবি এবং সাংবাদিক।লেখালেখির পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সাথেও জড়িত আছেন। বর্তমানে তিনি ‘বাংলা ওয়্যার’ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।এজে/
নিজস্ব প্রতিবেদক । ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
দেশে অভিনব কৌশলে বেড়ে চলেছে নানা প্রতারণা ও ছিনতাই। প্রতারণার নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি ভয়ংকর অপরাধী চক্র।বর্তমানে নতুন একটি পন্থা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এ পন্থায় একজন প্রতারক কিংবা ছিনতাইকারী ভুক্তভোগীকে চাইলেই কাবু করে নিজের ইশারায় নাচাতে পারেন।প্রতারক যে নির্দেশনাই দেবেন, তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন সেই নিরীহ ভুক্তভোগী। বিষয়টি জাদুটোনার মতোই কাজ করে।রাজধানীর মাদারটেক আজিজ স্কুল মহল্লার বাসিন্দা রঞ্জু মনোয়ারা। ১৮ জানুয়ারি অনলাইনে পুরাতন ফ্রিজ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন তিনি।কেনার কথা বলে আশিক নামের এক ক্রেতা তার বাড়িতে আসেন। ফ্রিজ দেখে মোটামুটি পছন্দ হয় তার। পরদিন তিনি তার স্ত্রী পরিচয়ে এক মহিলাকে নিয়ে আবার ওই বাড়িতে আসেন। তারা রঞ্জু মনোয়ারার ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছিলেন।এক সময় রঞ্জু মনোয়ারা ওই মহিলার হাতে তুলে দেন তার গলা ও হাতের অলংকার, ঘরে রাখা নগদ টাকাসহ কয়েক ভরি স্বর্ণালংকার। কিছুক্ষণ পর তারা ওই বাসা থেকে বিদায় নেন।তাদের এগিয়েও দেন রঞ্জু মনোয়ারা। তবে কিছু সময় পর পরিবারের অন্য সদস্যরা বাসায় এসে সবকিছু এলোমেলো দেখে তাকে প্রশ্ন করতেই তিনি বেহুঁশ হয়ে যান।হুঁশ ফেরার পর একে একে তার মনে পড়তে থাকে আগের ঘটে যাওয়া সব দৃশ্য। তবে ততক্ষণে সব শেষ। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ ধরনের ঘটনা এখন রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় প্রায়ই হয়ে থাকে। আর এ অপরাধ সংঘটিত করতে ব্যবহার করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর নেশা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ বা স্কোপোলামিন।শয়তানের নিঃশ্বাস একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। রাসায়নিকভাবে এটি স্কোপোলামিন নামে পরিচিত। স্কোপোলামিন একটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ।এটি হায়োসিন, ডেভিলস ব্রেথ, শয়তানের নিঃশ্বাস, বুরুন্ডাঙ্গা, রোবট ড্রাগ, জম্বি ড্রাগ বা কলম্বিয়ান ডেভিলের নিঃশ্বাস নামেও পরিচিত। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে। রোগীকে অপারেশনের আগে অজ্ঞান করতে এটা ব্যবহার করা হয়।এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দুর্বৃত্তরা লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিতে এটি ব্যবহার করে। বর্তমানে এটি মাদক হিসাবে বা হেলুসিনেটিক ড্রাগ হিসাবে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ক্ষতির মাত্রা কোকেন থেকে বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশের নয়া আতঙ্ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এ মাদক।এর প্রভাব এতটাই ভয়ংকর যে, কোনো ব্যক্তিকে সেকেন্ডেই নিজের নিয়ন্ত্রণে অনায়াসেই আনা যায়। ফলে অনেক ব্যবসায়িক এবং করপোরেট সেক্টরেও কর্তাব্যক্তিদের এটি প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে প্রতারক চক্র।অন্যের আদেশ পালন করতে বাধ্য করানোই হলো এ মাদকের মূলমন্ত্র। ভুক্তভোগীরা হেপনোটাইজ হয়ে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যান।পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে এর ব্যবহার বেশি পরিলক্ষিত হলেও এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।নানাভাবে ও নানা কৌশলে এটি প্রয়োগ করা হয়। যেমন, হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে, ঘ্রাণের মাধ্যমে, খাবারের সঙ্গে, চিরকুটের মাধ্যমে, কোমল পানীয়র সঙ্গে, বাতাসে ফুঁ দিয়ে।স্কোপোলামিন তরল ও শুকনো দুই ফরমেটেই পাওয়া যায়। এ ড্রাগটি ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি দূরত্ব থেকে শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে, যার প্রতিক্রিয়া থাকে ২০ থেকে ৬০ মিনিট। খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে এর প্রতিক্রিয়া থাকে দু-তিন দিন।মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে শয়তানের নিঃশ্বাসের প্রভাব : স্কোপোলামিন বা শয়তানের নিঃশ্বাস শরীরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের প্রাথমিক স্মৃতি ব্লক হয়ে যায়।ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি আক্রমণকারীকে দেখতে পেলেও চিনতে পারেন না এবং কিছু মনে রাখতে পারেন না। এর প্রভাবে শরীরে কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না বা বাইরের কোনো আক্রমণে শরীর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানোর মতো অবস্থায়ও থাকে না।এ অবস্থায় ভুক্তভোগীর আচরণ হয়ে যায় বশীভূত বা সুতায় বাঁধা পুতুলের মতো। তীব্র হেলুসিনেশন শুরু হয়। অন্যের দেওয়া আদেশকে যান্ত্রিকভাবে অনুসরণ করতে বাধ্য করে। মানে আপনি নিজে কিছু করতে পারবেন না, শুধু সামনের লোক যা বলবে তাই করবেন রোবটের মতো।গবেষণায় জানা গেছে, ভয়ংকর এ সংস্পর্শে এলে ভুক্তভোগী নিজ ইচ্ছায় কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই সবকিছু তুলে দেয় প্রতারকের হাতে। সত্য উদঘাটনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও এ মাদকটি ব্যবহার করেন। কলম্বিয়ায় উৎপন্ন হওয়া এ মাদকটি নিয়ে ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট লাদেনবার্গ গবেষণা শুরু করেন। ১৯২২ সালে এটি সর্বপ্রথম কারাবন্দিদের ওপর প্রয়োগ করা হয়।বর্তমানে এ মাদকটি মূলত প্রতারক চক্রের সদস্যরা ব্যবহার করে থাকে। কলম্বিয়ায় উৎপত্তি হলেও ইকুয়েডর ও ভেনিজুয়েলাতেও মাদকটির যথেষ্ট বিস্তার রয়েছে। এছাড়া পেরু, আর্জেন্টিনা, চিলি প্রভৃতি দেশে এটি মাদক হিসাবে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় এবং ওই দেশের অপরাধীরা বিভিন্ন বয়সি নারীদের দিয়ে নীলছবি ও অবাধ মিলনে বাধ্য করতে এটি ব্যবহার করে।বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বেশকিছু ড্রাগ রয়েছে যেগুলোর প্রয়োগে মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।এর মধ্যে অন্যতম স্কোপালামিন বা ডেভিলস ব্রেথ। সংশ্লিষ্টদের এখনই সতর্ক হওয়া ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এছাড়া বায়ুবাহিত অজানা বিপদ থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক ব্যবহার করা দরকার।এর সুবিধা হলো দুষ্কৃতকারীরা সহজে টার্গেট করবে না। টার্গেট করলেও মাস্ক প্রটেকশন দেবে এবং সচেতন হলে ততক্ষণে বুঝে যাবে যে, ভুক্তভোগীর সঙ্গে কী হতে যাচ্ছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৪ জানুয়ারি ২০২৩
আজি হতে অর্ধ শতবর্ষ পূর্বে পৃথিবী শ্রেষ্ঠ ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "আর দাবায়ে রাখবার পারবা না।" জাতির পিতার কট্টর সমালোচক ও ক্ষ্যাপাটে বিরোধী আহমদ ছফা লিখেছেন, ‘বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য চর্যাপদ নয়, বৈষ্ণব গীতিকা নয়, সোনার তরী কিংবা গীতাঞ্জলি কোনোটা নয়, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্য গীতি হলো “আর দাবায়া রাখতে পারবা না”। সাত মার্চের ভাষণের পর পঁচিশ মার্চের কালরাতে বাঙালিকে দমন করার জন্য নৃশংস গণহত্যা শুরু করা হয়। নয়মাস ধরে চলে হত্যাযজ্ঞ। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায় নি। ওরাই দেবে গেছে। পঁচাত্তরের মধ্য আগস্টের কালরাতে বাঙালির সাহসের খনি জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হল বাঙালিকে দাবানোর জন্য। জাতির পিতার বিদুষী কন্যা শেখ হাসিনার ওপর বারবার হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পিএমএ প্রশিক্ষিত জল্লাদের সন্তান খুনি তারেক আর্জেস গ্রেণেড দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলা করলো তার পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করতে। উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। যা ছিল ইয়াহিয়া-টিক্কার, তাই ছিল জিয়া- তারেকের। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখবার দুঃস্বপ্ন। কিন্তু মহান রাহমানুর রাহীম রহমতের চাদর বিছিয়ে বাঙালির স্বপ্ন ও সম্ভাবনার সুরক্ষা দিয়েছেন। আজ এক শুভ দিন। ২০০৮ সালে আজকের দিনে অনুষ্ঠিত অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালির আপন দল আওয়ামী লীগ ভুমিধ্বস বিজয় অর্জন করেছিল। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অগ্রযাত্রা টেকসই ও গতিময় হয়েছে। আজ আরেক শুভ দিন। আজ বাঙালি মেট্রোরেলের যুগে শুভ পদার্পণ করল। দিগ্বিজয়ী রাষ্ট্রনেতা, বাঙালির আপন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাঙালি নতুন স্বপ্ন যাত্রার মাইল ফলক অতিক্রম করল। এই মেট্রোরেলের কারিগর জাপানিজ প্রকৌশলীদের হলি আর্টিজেনে হত্যা করা হয় যেন ওরা পালিয়ে যান। বাঙালির স্বপ্ন যাত্রা যেন পতিত প্রকল্পে পরিণত হয়। কিন্তু মুজিবকন্যার দৃঢ়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে জাপানিজ প্রকৌশলীরা আমাদের পাশে থেকে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজসম্পন্ন করেছেন। বাঙালির অকৃত্রিম ও সর্বকালের বন্ধু জাপানিজদের প্রতি আন্তরিক কৃতজতা জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ এবং সম্ভবত একটিমাত্র দেশ, যে দেশে জন্ম নেওয়া ও বসবাসকারী কতিপয় নাগরিক দেশকে অবজ্ঞা করে পৈশাচিক সুখ পায়। দেশের যে কোন অর্জন ভালভাবে নিতে পারে না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জ্বালায় দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। পাকিস্তানের রক্তবীজ বা আদর্শবীজ ধারন করা অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি নামে পরিচিত সম্মানিত নাগরিকদের মাঝেও নানা নেতিবাচক তথ্য উপাত্ত দিয়ে উন্নয়ন-অগ্রগতি বিরোধী গুজব ছড়িয়ে জনমনে বিভ্রান্ত ছড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তাদের ছড়ানো গুজবের পালে ঠিকমত হাওয়া লাগলে রাতারাতি আমাদের অর্থনীতি বড় ধাক্কার সম্মুখীন হতে পারে জেনেও এই ধরণের জ্ঞানবাজরা সযতনে কাজটি করে থাকেন। সেন্টার ফর পোলাইট ডেভিলস- এর জ্ঞানবাজদের উৎপাদিত নানাবিধ আশঙ্কার খানিকটা বাস্তবে রূপ পেলে বাংলাদেশ বহু আগেই ইথোওপিয়া হয়ে যেত। সৌভাগ্য যে, তাদের 'ডলারের বিনিময়ে তথ্য সন্ত্রাস' কর্মকান্ডের বিপরীতে বাঙালি জাতির হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর দেশপ্রেমিক সঠিক নেতৃত্ব দেশকে সমুখের পানে এগিয়ে নিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আজ উন্নয়ন-মাতার হাত ধরে আমরা এক নতুন যুগে পদার্পণ করলাম। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান বুয়েটের দূর্ঘটনা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা যায় যে, ২০২২ সালে ঢাকার সড়কে প্রতিদিন ৮০ লাখের বেশি কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হয়েছে। যানজটের কারণে প্রতিদিন যে কর্ম-ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) বলেছে, রাজধানী ঢাকার অসহনীয় যানজটে শুধু মানুষের ভোগান্তি ও কর্মঘণ্টাই নষ্ট হচ্ছে না—এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জিডিপি এবং মাথাপিছু আয়ও। শুধু ঢাকার যানজটের কারণেই বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৯ শতাংশ। মেট্রোরেল নিঃসন্দেহে গতিময় যাতায়াত নিশ্চিত করবে। মহান আল্লাহর অসীম রহমতে উন্নয়ন মাতা শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে এবং তাঁর যাদুকরি হাতে দেশ পরিচালনার ভার অর্পিত থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে আরো ৫ টি উড়াল ও পাতাল রেল লাইন চালু হবে। ৩১ কিলোমিটারের এমআরটি-১ নির্মিত হবে বিমানবন্দর থেকে নতুন বাজার, বাড্ডা হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত। এই প্রকল্পে জাপান সরকার দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন বাজার এমআরটি-১ থেকে পূর্বাচলের দিকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত আরো ১১.৩৭ কিলোমিটারের উড়ালপথ নির্মিত হবে ২০২৮ সালের টার্গেটে। ২০ কিলোমিটারের এমআরটি-৫ (উত্তর) সাভারের হেমায়েতপুর শিল্পাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে আমিনবাজার- মিরপুর- বনানী- গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত নির্মিত হবে। এই প্রকল্পেও জাপান ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে অর্থায়ন করবে, ২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। গাবতলী থেকে আসাদগেট- রাসেলস্কয়ার-সোনারগাঁও- হাতিরঝিল- রামপুরা হয়ে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭.৪০ কিলোমিটার উড়াল-পাতাল মিলিয়ে এমআরটি-৫ (দক্ষিণ) নির্মিত হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে বসিলা- মোহাম্মদপুর- ঝিগাতলা- সায়েন্সল্যব- নীলক্ষেত- আজিমপুর- গুলিস্তান- মতিঝিল-কমলাপুর- ডেমরা হয়ে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত উড়াল ও পাতাল সমন্বয়ে প্রায় ২৪ কিলোমিটারের এমআরটি -২ নির্মিত হবে। জিটুজি পিপিপি'র ভিত্তিতে লাইনটি নির্মাণের জন্য জাপান ও বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে।এভাবে সমগ্র ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকাকে উড়াল ও পাতাল পথে মেট্রোরেল দিয়ে সংযুক্ত করা হবে। আর ৮ বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো সমাপ্ত হবে। ঢাকায় যানজট কমবে, জ্বালানি তেলের বায়ুদূষণ কমবে, পরিবেশ উন্নত হবে। সর্বোপরি যানজটের কারনে যে ২.৯% জিডিপি'র প্রবৃদ্ধি লোকসান হচ্ছে সেখান থেকে দুই তৃতীয়াংশ লোকসান পুষিয়ে কেবলমাত্র একটি খাত আমাদের ২% প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি সম্ভব হবে। বর্তমান ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারের জাতীয় অর্থনীতির ২% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি টাকার অঙ্কে কত হয় তা একবার পাঠক বিবেচনা করে দেখতে পারেন। আজকের শুভদিনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের "আর দাবায়ে রাখবার পারবা না" বজ্রকন্ঠ বারবার মনে পড়ছে। বাঙালিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার নতুন স্বপ্ন সফল হোক। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে, আওয়ামী লীগ সেই স্বপ্ন সম্ভব করে।লেখক-আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন
নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৯ ডিসেম্বর ২০২২